কসমেটিক্স-বেবি ফুড আমদানিতে লাগেজ পার্টির দৌরাত্ম্য
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনের(বিএসটিআই) অনুমোদন ছাড়াই বেশকিছু কসমেটিক্স ও বেবিফুড আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। লাগেজ পার্টির মাধ্যমে এসব আমদানি হচ্ছে বলে জোর দাবি বিএসটিআই’র। ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের কথা বলে এসব বাজারে এনে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা ও তাদের সিণ্ডিকেট।
ফলে একদিকে সরকার যেমন মোটা অঙ্কের ভ্যাট/ট্যাক্স হারাচ্ছে, তেমনি ভেজাল পণ্য ক্রয় করে বিপাকে পড়ছেন ভোক্তারা। সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনাকালে এধরণের বেশ কয়েকটি পণ্য অনুনোমোদিত পণ্য বাজারজাত করায় ব্যবসায়ীদের জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কাস্টমস কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়েই বেবি ফুড ও কসমেটিক্স পন্যসহ নানা ধরণের পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। বিএসটিআই’র নীতিমালা ও আইনের ব্যত্যয় ঘটলে কাস্টমস কর্মকর্তারা সেখানে ওই সব পণ্য আটকে দেন না? লাগেজ পার্টির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বলেও দাবি তাদের।
বিএসটিআই জানায়, অনুমোদিত ১৫৫টি পণ্য দেশীয় কিংবা বিদেশি যাই হোক না কেন বিক্রির ক্ষেত্রে অবশ্যই বিএসটিআই কর্তৃক সার্টিফিকেট নিতে হবে। অন্যদিকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অবশ্যই বিএসটিআই’র সার্টিফিকেট নিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বন্দর দিয়েই আমদানি হয় বেবি ফুড ও কসমেটিক্স পণ্য। আমদানি করা এসব পণ্য কাস্টমস কর্মকর্তারা ক্লিয়ারেন্স দিয়ে থাকেন। যেসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিএসটিআই’র অনুমোদন নেই কিংবা মেডিকেটেড নয় তা আমদানিযোগ্য নয়। কিন্তু নৌ ও স্থলপথের বন্দরগুলোতে নেই বিএসটিআইর স্থায়ী কোনো প্রতিনিধি। এই সুযোগে কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে লাগেজপার্টি পণ্য আমদানি করছে।
তবে লাগেজপার্টির মাধ্যমে আমদানি করা পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। বাজারে ভেজাল পন্য কিংবা অনুমোদন নেই এমন পণ্য বিক্রির সংবাদে অভিযান চালাচ্ছে বিএসটিআই। প্রমাণ মিললে ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানাও করছে।
রাজধানীর গুলশান-১ এলাকার ডিসিসি মার্কেটের মওলা এন্টাপ্রাইজের মালিক আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমার সব পণ্যই বিদেশি। এই এলাকায় আমার বেশির ভাগ ভোক্তা বিদেশি ও অভিজাত শ্রেনির। তারা বিদেশি পণ্যই ক্রয় করে থাকেন। তাদের জন্য বিদেশি পণ্য এ মার্কেটে বেশি রাখা হয়। আর এই মার্কেটটি পাইকারি বাজার। এখানে খুচরা পণ্য বিক্রি করা হয় না। সকল সুপারশপের মালামাল এখানে পাইকারি বিক্রি করা হয়।
তিনি বলেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে অনুমোদিত পণ্যই এখানে বিক্রি করা হচ্ছে। ইমপোর্ট করা বেবি ফুডগুলোর বিদেশে চিকিৎসকদের ছাড়পত্র রয়েছে। তবুও গত সপ্তাহে বিএসটিআই কর্তৃক জরিমানা গুনতে হয়েছে আমাদের। যা অত্যন্ত আপত্তিকর।
একই মার্কেটের সাইকা এন্টারপ্রাইজের মালিক সুজন জাগো নিউজকে বলেন, বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্য ভ্যাট ট্যাক্স পরিশোধ করেই আমরা খালাস করে নিয়ে আসি। সেখানে বিএসটিআইর কোনো প্রতিনিধি নেই। কাষ্টমস্ কর্মকতারা ছাড়পত্র দিয়েছে। যদি অনুমোদন নাই থাকে তবে সেখানে আমদানি করা পণ্য কেন আটকে দেয়া হয় না?
বিএসটিআইয়ের ফিল্ড অফিসার সুরাইয়া পারভীন জাগো নিউজকে বলেন, সব পণ্যে ঘাপলা নেই। কিছু পণ্য তারা নিজেরাই ইংরেজির জায়গায় বাংলায় বিএসটিআই এর অনুমোদনের লোগো লাগিয়ে বিক্রি করে। আবার কোনো কোনো পণ্যে অনুমোদনই নেই।
তিনি বলেন, আমাদের ১৫৫ টি পণ্যের অনুমোদিত তালিকা রয়েছে। এর বাইরে কোন পণ্য আমদানি করতে হলে আগে বিএসটিআই’র কাছে আবেদন করতে হয়। পরে বিএসটিআইয়ের একজন পরিদর্শক পোর্টে গিয়ে ওই পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করেন। এরপর পরীক্ষা করে সেগুলো ছাড়পত্র দেয়া হয়।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ব্যবসায়ীরা লাগেজপার্টির মাধ্যমে অবৈধভাবে পণ্য আমদানি করছে। ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের কথা বলে সেসব বিক্রি করা হচ্ছে।
বন্দরগুলোতে কেন বিএসটিআই’র প্রতিনিধি নেই জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর উত্তর ঊর্ধ্বোতন কর্তৃপক্ষ ভালো দিতে পারবে।
জেইউ/এমএমজেড/আরআইপি