মন দোলে হাতিরঝিলের ঢেউয়ের তালে


প্রকাশিত: ১২:৩৪ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

যান্ত্রিক নগরীতে পরিবহন সমস্যা ক্রমেই প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। জীবন জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষকে কর্মস্থলে ছুটে বেড়াতে হয়। তীব্র যানজটের কারণে নির্ধারিত গন্তব্যে যথাসময়ে পৌঁছাতে না পাড়ার বেদনা নিত্যদিন নগরবাসীকে পীড়া দেয়। ২০১২ সালের কথা। ঘটা করে উদ্বোধন করা হয় রাজধানী ঘিরে থাকা নদীগুলোতে ওয়াটার বাস। লক্ষ্য ছিল রাজধানীবাসীর যাতায়াতে দুঃখ লাঘব করা। গাবতলী থেকে বাবুবাজার, বাদামতলী ও সদরঘাট পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার পথ যানজটমুক্ত, আরামদায়ক ও কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। বিআইডব্লিউটিসির এ উদ্যোগে এক বুক স্বপ্নও বেঁধেছিল রাজধানীবাসী। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আশা যেন দুরাশায় রূপ নেয়। বর্তমানে প্রায় ব্যর্থ এই প্রকল্প। অপরদিকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হাতিরঝিলে এফডিসি থেকে মেরুল বাড্ডা ও গুলশান গুদারাঘাটে সম্প্রতি চালু হওয়া ওয়াটার বাস সার্ভিস স্বল্প সময়ের মধ্যে জনগণের মাঝে আশা জাগিয়েছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও আন্তরিকতা থাকলে যে একটি প্রকল্প সফল হতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ হাতিরঝিলের ওয়াটার সার্ভিস। জাগো নিউজের একঝাঁক তরুণ সংবাদকর্মী সরেজমিন দুটি প্রকল্প ঘুরে এসে একাধিক প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।

দুপুর ছুঁতেই শীতের আবহ অনেকটাই কেটে যায়। হালকা কুয়াশার আবরণ ভেদ করে সূর্যের কিরণ জলরাশিতে উপচে পড়ে, আর তাতেই যেন হাতিরঝিলে রুপা ফলছে। মরিচিকার মতো চিকচিক করছে ঝিলের এদিক ওদিক।

শীতের মৃদু বাতাস বইছিল ঝিলজুড়েই। বাতাসের তালে ছোট ছোট ঢেউ খেলায় ঝিলের রূপ যেন ধরে না। সে রূপে ক্ষণে ক্ষণে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিচ্ছিল ওয়াটার ট্যাক্সির (নৌকা সদৃশ) সৃষ্ট ঢেউয়েরা। হাতিরঝিলে এখন নৌকা চলে! সে নৌকায় ঢেউ তোলে। আর তাতেই যেন মন দোলে।

পরিত্যক্ত হাতিরঝিলে যৌবন ফিরেছে কয়েক বছর আগেই। ঝিলের আনাচে-কানাচে আনন্দে টইটুম্বর। পাড়ের গাছ আকাশ পানে উড়ু উড়ু করছে। সংযোগ সেতুগুলোতে চলে রাতভর আলোর খেলা। পরিচ্ছন্ন দুই ধার। ঝকঝকে সড়ক। হাতিরঝিল যেন অচল যন্ত্র শহরে একটু সচলের হাতছানি।

Hatir-Jheel

নৌকা চলায় গতি এসেছে ঝিলের মাঝেও। গত বিজয় দিবসে ঝিলে নামানো হয়েছে ওয়াটার ট্যাক্সি। সেনাবাহিনীর তদারকি আর রাউজকের ব্যবস্থাপনায় হাতিরঝিলে আপাতত তিনটি রুটে ট্যাক্সি নামিয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান করিম গ্রুপ।

মাত্র এক মাসের ব্যবধানেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস। গুদারাঘাট, মেরুল বাড্ডা আর এফডিসির সামনে তিনটি ঘাট করা হয়েছে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য। সকাল থেকে রাতভর ঘাটে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। ভিড় বাড়ছে দিনকে দিন।

বিনোদনপ্রেমীদের কাছে ট্যাক্সি সার্ভিস প্রথমে গুরুত্ব পেলেও এখন ঝিল পারাপারে সাধারণ যাত্রীও মিলছে।

এফডিসির সামনের ঘাট থেকে গুদারাঘাটে যাবেন বলে ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়েছেন মাসুম বিল্লাহ। মাসুম যুমনা ফিউচার পার্কে খণ্ডকালীন চাকরি করেন। পাশে বসেই কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে। বলেন, ‘বেশ ভালো লাগছে। গত দুই সপ্তাহ থেকে ট্যাক্সিতেই পারাপার হচ্ছি। ঢাকার মধ্যে এমন সার্ভিস মিলবে কল্পনাও করতে পারিনি। সময় কমছে। কোনো ভোগান্তি নেই। গুদারাঘাটে গিয়েই বাসে চড়ব। অল্প সময়েই কাজে যেতে পারব। ট্যাক্সিতে চড়ে বাড়তি আনন্দও মিলছে।’

কথা হয় আরেক যাত্রী কল্পনা ঘোষের সঙ্গে। বান্ধবীকে নিয়ে ট্যাক্সিতে উঠেছেন শুধুই বিনোদনের স্বাদ পেতে। বলেন, ‘ট্যাক্সি সার্ভিস চালু হওয়ার পর তিনদিন এলাম। আগের দুদিন কাজের তাগিদে পারাপার হয়েছি। আজ বান্ধবীকে নিয়ে ঝিল পাড়ে ঘুরতে এসেছি। ঝিল পাড়ে এসে নৌকার স্বাদ না নিলে কি চলে? এমন আনন্দ নিতেই বিনোদনপ্রেমীরা দেশের বাইরে গিয়ে থাকেন। মনে হচ্ছে গ্রামের কোনো নদী পার হচ্ছি। ঝিলের ঢেউ মনও উতলা করে দিচ্ছে।’

এএসএস/এএস/এসএইচএস/পিআর

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।