হায় রে, প্রেম কইরা কী জ্বালারে হইলো!

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:১৮ পিএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নিধুবনে তখন অশ্রুধারা বইছে। যে বনে কৃষ্ণপ্রেমে মজেছিলেন রাধা, সে বনেই কলঙ্কিনী বেশে চোখের জলে ভাসছেন শিল্পী রিতা দেওয়ান। যেন রাধার প্রেম বিরহে কাঁদছেন গোপীরা। প্রেমপিয়াসী রাধার কান্নায় দিশেহারা অষ্টসখীও।

কৃষ্ণপ্রেমের মাতাল প্রণয়ে মজে গর্ভে যে সন্তান ধারণ করেছিলেন রাধা, তা সবে প্রসব করে যমুনার জলে ভাসিয়েছেন। যমুনার ঘাট থেকে বৃন্দাবনে ফিরছেন পাগল হয়ে। রাধা গাইছেন, দলিল উদ্দিন সরকারের লেখা গগনবিদারী বিচ্ছেদ গান ‘হায় রে, প্রেম কইরা কী জ্বালারে হইলো’।

বিজ্ঞাপন

rita

এ বেলায় ভগবান কৃষ্ণকে কলঙ্কমুক্ত করতেই পেটের সন্তানকে নদীতে ডুবিয়ে দিলো রাধা। প্রেম কলঙ্কের তিলক পরে রাধা তখন পাগলপ্রায়। আর প্রেমিক কৃষ্ণ বৃন্দাবনে গোপীকূলে প্রেমলীলায় মত্ত।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

কৃষ্ণপ্রেমে সর্বহারা রাধার ক্রন্দন যেন ফিনকি দিয়ে লুটে লুটে পড়ছে মাইক থেকে। রাতের প্রথম ভাগ তখন। শীতের ঝাপটা ছিল না তেমন। পদ্মাপাড়ের হাওয়া এসে উদাস হয়ে মিলছে প্রাণে প্রাণে। যেটুকু কুয়াশা, তা চাঁদের কিরণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের স্বাদ নিতে চাঁদও যেন মাটিতে এসে ঠেকছে। এত আলো! অথচ রাধা প্রেমের কলঙ্কের দাগ পড়েছে এদিন চাঁদের গায়েও। সুনশান নীরবতা প্রকৃতিতে, তবুও যেন গাছের পাতারা বুকফাটা কান্নায় হাহাকার করছে রাধার প্রেমবিরহে।

rita

মানিকগঞ্জ শহর থেকে মাইল দশেক পশ্চিমে বাঠইমুড়ি আফাজ শাহ দরবারই যেন এদিন বৃন্দাবনে রূপ নিলো। বাৎসরিক এ মেলার সপ্তম দিনের (মঙ্গলবার, ৩০ জানয়ারি) আয়োজন ছিল রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলা। পালায় কৃষ্ণরূপে মঞ্চে ওঠেন বিখ্যাত বাউলশিল্পী খোরশেদ আলম। আর রাধা বেশে আসেন আরেক জনপ্রিয় বাউল রিতা দেওয়ান। আপাদমস্তক রাধা-কৃষ্ণ রূপ শিল্পীদ্বয়ে। মধ্যখানে মঞ্চ। চারদিকে ভক্ত-স্রোতা। নারীরাও মিলেছে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলায়

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বিকেল থেকে প্রেম হলো দু’জনায়। ভগবান কৃষ্ণরূপে অবতার হয়ে মামী রাধাকে প্রেমরসে আসক্ত করলেন। আর স্বামীর (আয়ান ঘোষ) ভাগ্নে কৃষ্ণের প্রেমে কূল হারালেন রাধা। কূলের মুখে কালি দিয়েই রাধা প্রেমের গুরু হলেন।

rita

এদিনের পালাতে রাধারূপী শিল্পী রিতা দেওয়ানও প্রেমশক্তি মেলে ধরলেন। সাজে, বসনে, গানে আর কান্নায় রাধার স্বর্গীয় প্রেম ধরায় নামিয়ে আনলেন। কৃষ্ণ ভজনের গানে গানে কান্নার রোল তুললেন। কাঁদছেন শিল্পী, কাঁদছেন শ্রোতারাও। এ যেন এক প্রেমবিরহ সাগরে ডুবে যাওয়া।

বিজ্ঞাপন

কৃষ্ণ ভজনেই মধ্যরাত পার। কৃষ্ণপ্রেমে জ্বলছে গোটা মঞ্চ। প্রেমানলে পুড়ে রাধা ফের নিধুবনে গেলেন কৃষ্ণ দর্শনে। আর কৃষ্ণরূপী বাউল খোরশেদ আলম রাধাকে প্রেমের গুরু মেনে গাইলেন ‘আমি আবার যদি জনম পাইগো, সেই জনমে তোমায় চাইবো।’ শেষ বেলায় রাধাকে কাছে রাখার স্বাদ জাগিয়ে খোরশেদ আলম ফের গাইলেন, ‘আমি এই মিনতি করি, তুমি একটি কথা রাখো/ আর না হয় হবে দেখা, আরেকটি রাত থাকো’। তখন ‘জয় রাধা’ ধ্বনিতে যেন প্রকম্পিত ধরা।

rita

বাউল খোরশেদ আলম বলছিলেন, রাধা-কৃষ্ণ পালা প্রসঙ্গে। বলেন, ‘অনেক পালাই করি গানের মঞ্চে। কিন্তু রাধা-কৃষ্ণের পালায় যে আনন্দ, যে প্রেমভক্তি মেলে, তা অন্য কোনো পালায় মেলে না। যখন কৃষ্ণ চরিত্র ধারণ করে রাধার প্রেমে মজি, তখন নিজের মধ্যে অন্য জগতের শক্তি অনুভব করি। এমন প্রেম কাহিনী ধরায় আর মেলে না গো।’

বিজ্ঞাপন

রাধা-কৃষ্ণের পালা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শিল্পী রিতা দেওয়ানও। বলেন, রাধার চরিত্র ধারণ করলে নিজেকে স্থির রাখতে পারি না। কৃষ্ণ ভক্তের গানে সুর দিলেই চোখে পানি আসে। রাধার প্রেম ছিল পবিত্র। রাধার প্রেম নিজের মধ্যে চলে আসে বলেই চোখের জলে ভাসি।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

এএসএস/এমআরএম/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।