করোনায় ধানের দাম বেড়ে দ্বিগুণ
করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে ধানের দামেও। এক লাফে এর দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। অনেকে আবার ধান বিক্রিও করছেন না। গ্রামে ঘুরে ঘুরে ধান কিনে যারা চাল তৈরি করে বিক্রি করেন তারা বেশি দাম দিয়েও ধান কিনতে পারছেন না। যাদের ঘরে ধান আছে তারা পরিস্থিতি কী হয়, সেটা আরও দেখতে চাচ্ছেন।
শুধু করোনার কারণে নয়, পঙ্গপালের হানার খবরও তাদের কাছে আছে। ভারতে পঙ্গপাল শস্য খেয়ে শেষ করে ফেলছে। বাংলাদেশেও আসবে— এমন গুজবে অনেক গৃহস্থ ধান বিক্রি করছেন না। গত দুই মাস আগেও যে ধান ৬০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে সে ধান এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১০৫০ টাকায়। এরপরও পর্যাপ্ত ধান মিলছে না।
শেরপুর মিলকল মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, সোমবার চালের দাম কেজিপ্রতি কমেছে দুই টাকা। সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে, ধানের দামও কমতে শুরু করেছে, আরও কমবে।
ধুনট উপজেলার চরপাড়া গ্রামের আদর্শ কৃষক আকিমুদ্দিন শেখ। তিনি প্রতি বছর ১৪-১৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেন। কিন্তু পরপর দুই বছর ধানের দাম না পাওয়ায় এখন শুধু খাওয়ার জন্য যতটুকু প্রয়োজন সেই পরিমাণ জমিতে ধান চাষ করেছেন। ভুট্টা, পাট ও ডালজাতীয় শস্যে লাভ বেশি, তাই এসব শস্য আবাদ করেন।
ধান চাষ না করার ব্যাখ্যাও দেন তিনি। বলেন, প্রতি বছর ধান কাটার সময় কামলা খুঁজে পাওয়া যায় না। পেলেও একজনের পেছনে দেড় মণ ধান ব্যয় করতে হয়। কিন্তু অন্য ফসল চাষে বেশি লাভ।
ধানের দাম সম্পর্কে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গৃহস্থের ঘরে এখন আর ধান নেই। যাদের ঘরে আছে সেটাও ২৫-৩০ মণের বেশি নয়। সব ধানই তো এখন মহাজনের ঘরে বা সরকারের গুদামে। তারা ধান ছেড়ে দিলে তো ধানের দাম ১০০০-১২০০ টাকা থাকে না।
একই গ্রামের চাল ব্যবসায়ী মজিবর রহমান। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ধান কিনে চাল তৈরি করে বিক্রি করেন। এক প্রশ্নের জবাবে মজিবর জাগো নিউজকে বলেন, গত এক সপ্তাহের মধ্যে ধানের দাম এত বেড়েছে যে কল্পনাই করা যায় না। এক থেকে দেড় মাস আগে যে গুটি স্বর্ণা ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় কিনতাম, সে ধান এখন ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। স্বর্ণা- ৫ ও ৪৯ ছিল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে। এখন সেটা ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকা। কাটারি ভোগের (ধুনট শেরপুর উৎপাদিত) দাম ছিল ৯০০ টাকা, সেটা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ টাকায়।
তিনি আরও বলেন, গুটি স্বর্ণা চাল আগে বিক্রি করতাম প্রতি কেজি ২৮ থেকে ৩০ টাকায়। এখন সেই চাল বিক্রি করতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। স্বর্ণা- ৫ ও ৪৯ ধানের চাল বিক্রি করতাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায়। সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায়। কাটারিভোগের চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে।
গতকাল রোববার ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের চাল বেশি দামে বিক্রি না করার নির্দেশ দেন। ব্যবসায়ীরা এ সময় তাকে জানান, বেশি দামে ধান কিনে কম দামে চাল বিক্রি করলে তারা টিকে থাকতে পারবেন না। প্রশাসন বেশি চাপ দিলে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোনো গতি থাকবে না। কারণ ৬০০ টাকার ধানের মণ এখন ১০০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ৯০০ টাকার ধান হয়েছে ১৩০০ টাকা। এ দামে ধান কিনে আগের দামে চাল বিক্রি করা সম্ভব নয়।
শেরপুর চালকল মালিক সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঢাকাসহ বড় বড় শহরে চালের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। যে মালিক দুই ট্রাক মাল নেয় সে হঠাৎ পাঁচ ট্রাক মালের অর্ডার দেয়। তখন উত্তরাঞ্চলের গ্রামগঞ্জের বেপারীদের মধ্যে ধান কেনার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এ কারণে ধানের দাম বেড়ে যায়। বড় বড় মহাজন ধান বান্দাই (মজুত) করে রাখে। ফলে বাজারে ধানের সংকট সৃষ্টি হয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার পদক্ষেপ নেয়ায় আজ (সোমবার) চালের দাম কেজিপ্রতি দুই টাকা কমেছে। আজ চাল নেয়ার পার্টি নেই বললেই চলে। করোনা আতঙ্কের কারণে শহরের লোকেরা বেশি বেশি চাল কেনা শুরু করেন। এ কারণে গ্রামে গ্রামে ধান কেনার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ফলে বেড়ে যায় দাম।
এফএইচএস/এমএআর/এমএস