করোনাকালেও দুর্নীতি, কোথায় যাচ্ছে সমাজ?
অডিও শুনুন
করোনা মহামারির দিনে বেঁচে থাকার আকুতি বাড়ছে ক্রমশই। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের কবলে অনিশ্চিত মানবজীবন। শতাব্দীর ভয়ংকর সময়ে মানুষের রূপও প্রকাশ পাচ্ছে নানাভাবে। কেউ মানবিক গুণেই মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। কেউ আবার এই বিপর্যয়ের মধ্যেও দুর্নীতির পথ খুঁজছেন।
এমন মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দুর্নীতি! এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সমাজ, রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কী? প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় বিশিষ্টজনের কাছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘মানুষ ক্রমশই দুর্নীতির ঘটনা মেনে নিচ্ছে। গা-সওয়া ভাব থেকেই দুর্নীতি বাড়ছে। কেউ প্রতিবাদ করছে না। যা ঘটছে, তার সবই স্বাভাবিক মনে করছে। আর এটিই হচ্ছে ভয়ের কথা।’
তিনি বলেন, ‘দুটি কারণে সমাজের এই অবনতি। প্রথমত, ধর্মীয় অপব্যাখ্যার কারণে নীতি-নৈতিকতা থেকে মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। দ্বিতীয়ত, দেশের নেতৃত্বের মাঝে নীতি-নৈতিকতার অভাব। আপনি যদি বিগত কয়েক বছরের নির্বাচন ব্যবস্থা দেখেন, তাহলে দেখবেন মিথ্যার বেসুতি সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। পুলিশ, প্রশাসন সবাই ভোট, নির্বাচনের অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত। এমন নির্বাচন দেখে মানুষ তো মেনে নিয়েছে। ঠিক অন্যত্রও এই মানসিকতার প্রকাশ ঘটছে।’
ড. মালিক আরও বলেন, ‘ভেঙে পড়া সমাজের খেসারত হিসেবে দুর্ভিক্ষও দেখা যেতে পারে। আবার অশান্তি চরম অবস্থা রূপ নিতে পারে, যা গোত্রে গোত্রে হানাহানিও তৈরি করবে।’
একই প্রসঙ্গে কথা হয় দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঙ্গে।
তিনি চিকিৎসাখাতের দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের এমন দুর্নীতি নতুন কিছু না এবং তা পরম্পরায় হয়ে আসছে। সম্প্রতি একটি মেডিকেলের ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের খাবারের অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়টি সংসদে আলোচনা হয় এবং খোদ প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন। দুর্নীতির এমন বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যখন প্রশ্ন তোলেন, তখন তা খতিয়ে দেখা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বেলেন, ‘কীভাবে খাবারে এমন বরাদ্দ এলো, কারা এর সঙ্গে জড়িত, সঠিক উপায়ে বরাদ্দ হয়েছিল কি-না, এমন প্রশ্ন জনমনে। এসবের উত্তর খোঁজা জরুরি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর মেলে না। উত্তর মেলে না বলেই সমাজ এক এক অনিশ্চিত আঁধারের দিকে যাত্রা করছে।’
তবে সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম অবশ্য ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘করোনাকালে সাহেদরা (সাহেদ করিম) যা করেছে, তা ক্ষমার অযোগ্য। এই অপরাধ কোনো মানুষের হতো পারে না। তার শাস্তি পেতেই হবে। তবে দু-একটি ঘটনা দিয়ে সমাজের সার্বিক চিত্র প্রকাশ হতে পারে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দুর্নীতি বাড়ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন। এমন অভিযোগ শুধুই সমালোচনার স্বার্থে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থাকলে সাহেদ করিমের হাসপাতাল সিলগালা হতো না। বিচার হচ্ছে বলেই সাহেদরা আটক হচ্ছে।’
এএসএস/এমএসএইচ