করোনার নতুন ধরনেও বাংলাদেশ ভালো থাকবে বিশ্বাস করি

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৪৬ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০২১

ডা. আব্দুন নূর তুষার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, আলোচক, গণমাধ্যমব্যক্তিত্ব। ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার পর চাকরি করেছেন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে। পরে মানসিক চিকিৎসায় উচ্চতর শিক্ষালাভ করেছেন। চাকরি ছেড়ে মনোনিবেশ করেছেন টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ ও উপস্থাপনায়।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগ, করণীয় এবং বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন জাগো নিউজের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু

জাগো নিউজ: করোনার নয়া ধরন ওমিক্রন হানা দিয়েছে এবার, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ, বিশ্বজুড়ে ফের আতঙ্ক। কী দেখতে পাচ্ছেন ওমিক্রনে?

আব্দুন নূর তুষার: করোনা আরএনএ ভাইরাস। কিছুদিন পরপর এর চেহারা বদলায়। ভাইরাসের শরীরে কতগুলো প্রোটিন থাকে। এই প্রোটিনগুলোকে স্পাইক প্রোটিন বলে। মিউটেশন করলে এর স্পাইক প্রোটিনগুলোর চেহারা বদলায়। যেমন- ভিন্ন ভিন্ন বিউটি পার্লারে গিয়ে চুলের ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করা হয়। এই ভাইরাসেরও একই কাহিনি। ভাইরাসটি আছে। কিন্তু এর স্পাইকগুলো একেক সময় একেক রূপ নিচ্ছে। যখন এরকম রূপ নেয় তখন তাকে আমরা কমপ্লিট মিউটেশন বলে থাকি।

জাগো নিউজ: ওমিক্রনে কী দেখছেন?

আব্দুন নূর তুষার: দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার নতুন ধরন তথা ওমিক্রনে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, তার স্পাইক প্রোটিনগুলো প্রায় ৩০ বার রূপ বদলেছে। এতবার রূপ বদলানোর পর নতুন চেহারায় ফিরছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ কারণেই ওমিক্রনের কার্যকারিতা অনেক বেশি। অতিদ্রুত ছড়িয়ে যায়

আবার যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা বলছেন, ওমিক্রন দ্রুত ছড়ালেও এর লক্ষণগুলো মৃদু। ততটা শক্তিশালী নয়।

জাগো নিউজ: কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রেও এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে...

আব্দুন নূর তুষার: যুক্তরাষ্ট্র সবাইকে সতর্ক করছে। কারণ এই ওমিক্রন নিয়ে এখনো তারা পরিষ্কার ধারণা পাননি। তারা গবেষণা করছেন এবং হয়তো বের করে ফেলবেন যে এটি আসলে কতটুকু ক্ষতিকর। করোনাভাইরাসের রূপ এতবার বদলেছে যে, তার চেহারাই আর আগের জায়গায় নেই। যে কারণে নতুন ধরনের জন্য টিকা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে।

জাগো নিউজ: তাহলে করোনার টিকা নিয়ে যে বিশ্বব্যাপী এক ধরনের বিপ্লব ঘটে গেলো, তার কী হবে?

আব্দুন নূর তুষার: টিকা যারা নিয়েছেন তারা আগের ধরনগুলো থেকে নিজেদের সুরক্ষা দিতে পারছেন। টিকা দিলেও করোনা আক্রান্ত হতে পারেন, তা বিজ্ঞানীরা আগেও বলেছেন।

ওমিক্রনের লক্ষণ মৃদু। কিন্তু টিকা দিলেই এই ভাইরাসকে আটকানো যাবে এমন নয়। এজন্য নতুন ধরনের টিকা আবিষ্কারের কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা। ভাইরাসের ধরন থেকেই মূলত টিকার ধরন হয়। হয়তো শিগগির টিকা চলে আসবে।

জাগো নিউজ: তাহলে টিকা নিয়ে এত উচ্ছ্বাস...

আব্দুন নূর তুষার: আরএনএ টিকার ধরন হচ্ছে কয়েক বছর পরপর এর পরিবর্তন করতে হয়। যেমন- বিভিন্ন ফ্লুর জন্য টিকা মোডিফাই করতে হয়।

jagonews24

ওমিক্রন মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা

আর টিকা নিয়ে আজীবনের জন্য করোনা থেকে মুক্তি মিলবে না। এটি আমি করোনার শুরুর বেলায়ই বলেছি। আমার মতো অনেকেই বলছেন। তার মানে কয়েক বছর পরপর টিকা নিয়েই আমাদের ভালো থাকতে হবে।

জাগে নিউজ: ওমিক্রনে আগের টিকা কার্যকর নয়?

আব্দুন নূর তুষার: আমি তা বলছি না। টিকা তো শরীরের জন্য একটি ইমিউনিটি। টিকা নেওয়া থাকলে অবশ্যই ভালো। কারণ অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলো তো অ্যাটাক করতে পারছে না। সেগুলো তো এখনো আছে।

জাগো নিউজ: করোনার ধরন আগেও বদলালো। কিন্তু এবার আতঙ্ক বেশি কি না?

আব্দুন নূর তুষার: ঠিক তা নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারগুলো চাইছে আপনি অধিক সতর্ক থাকেন। কারণ একটি জীবনও অনেক মূল্যবান। মাস্ক পরবেন, স্বাস্থ্যবিধি মানবেন, তাহলে আপনি ভালো থাকবেন। এজন্যই সতর্ক করা হচ্ছে। সতর্কতা মানে আতঙ্ক মনে করি না।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশের জন্য এই সতর্কবার্তা নিয়ে কী বলবেন?

আব্দুন নূর তুষার: বাংলাদেশ শুরু থেকেই সতর্ক হয়নি। কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়েও সচেতন ছিল না। বাংলাদেশকে মূলত মহান আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখছেন। বাংলাদেশে কোনো নিয়ম নেই। এরপরও এ দেশ তুলনামূলকভাবে ভালো থেকেছে। করোনার নতুন ধরনেও বাংলাদেশ ভালো থাকবে বলে বিশ্বাস করি।

জাগো নিউজ: মানুষের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?

আব্দুন নূর তুষার: মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। সচেতন হতে হবে। সরকার কী করলো না করলো, তার ওপর বসে থাকার সুযোগ নেই।

জাগো নিউজ: শুরুতে এক সাক্ষাৎকারে করোনা ঘিরে বিশ্ব রাজনীতির কথা বলেছিলেন। এখন এই রাজনীতি নিয়ে কী বলবেন?

আব্দুন নূর তুষার: করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আমি শুরুতে যা যা বলেছি, তার অধিকাংশই সত্য ফলেছে। করোনার বিশ্ব রাজনীতি এবং অর্থনীতির কথা বলেছিলাম। আমরা তাই দেখেছি। এটি আসলে রাজনীতি এবং অর্থনীতির ধরনও পাল্টে দিয়েছে।

jagonews24

ওমিক্রনের কারণে আবার মাস্ক পরার ওপর জোর দিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো

টিকা নিয়ে রাজনীতি হলো। যারা টিকা উৎপাদন করছে, তারা এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব পাচ্ছে। অন্যরা নির্ভরশীল হচ্ছে। আবার ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করার সুযোগ পাচ্ছে। করোনার নাম দিয়ে অনেক দেশ বাইরের মানুষদের আসা আটকে দেবে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল হবে। করোনার টিকা সরবরাহ নিয়েও রাজনীতি হবে। চীনের কথা আগেই বলেছিলাম। চীন কিন্তু ব্যবসা করলো।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ সরকার করোনা মোকাবিলায় কৃতিত্ব নিচ্ছে। এ নিয়ে কোনো মূল্যায়ন আছে কি না?

আব্দুন নূর তুষার: দিন শেষে কৃতিত্ব মূলত সরকারেরই। তবে আমাদের ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা মোকাবিলায় ব্যাপক কাজ করেছেন। আমি মনে করি, বড় কৃতিত্ব স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের।

অব্যবস্থাপনা তো ডাক্তারদের হাতে নয়। এটি সরকারের হাতে। অব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আছে। তবে আমি মনে করি, স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা পর্বতসম। এ অব্যবস্থাপনা পৃথিবীতে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে হয়তো। এত কিছুর পরও ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা যেভাবে সেবা দিয়েছেন, তা অতুলনীয়।

বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও হয়তো করোনা মোকাবিলায় অনুকূলে থেকেছে। আমাদের আবহাওয়ায় জলীয়বাষ্প বেশি। এরও সুবিধা পাওয়া গেছে। দিল্লি-আগ্রায় লোকেরা যেভাবে আক্রান্ত হয়েছে, কলকাতা-ঢাকায় সেভাবে হয়নি।

জাগো নিউজ: তার মানে করোনার এই আতঙ্কের মধ্যেও আমাদের জন্য কিছুটা স্বস্তির খবর আছে?

আব্দুন নূর তুষার: সতর্ক এবং সচেতন থাকলে আমরা করোনা মোকাবিলা করতে পারবো। কারণ আবহাওয়া আমাদের অনুকূলে।

এএসএস/এইচএ/এমএস

অব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আছে। তবে আমি মনে করি, স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা পর্বতসম। এ অব্যবস্থাপনা পৃথিবীতে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে হয়তো। এত কিছুর পরও ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা যেভাবে সেবা দিয়েছেন, তা অতুলনীয়

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারগুলো চাইছে আপনি অধিক সতর্ক থাকেন। কারণ একটি জীবনও অনেক মূল্যবান। মাস্ক পরবেন, স্বাস্থ্যবিধি মানবেন, তাহলে আপনি ভালো থাকবেন। এজন্যই সতর্ক করা হচ্ছে। সতর্কতা মানে আতঙ্ক মনে করি না

অব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আছে। তবে আমি মনে করি, স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা পর্বতসম। এ অব্যবস্থাপনা পৃথিবীতে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে হয়তো। এত কিছুর পরও ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা যেভাবে সেবা দিয়েছেন, তা অতুলনীয়

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।