জামায়াত ইস্যুতে পেছাতে পারে আ.লীগের কাউন্সিল
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল গেল ডিসেম্বরে। পৌরসভা নির্বাচনের অজুহাতে তা পেছানো হয়। এরপর ব্যাপক জানান দিয়ে আসছে ২৮ মার্চ কাউন্সিলের জন্য ফের দিনক্ষণ ধার্য করা হয়। তবে ধার্য এই তারিখেও কাউন্সিল হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
অনিশ্চয়তা থাকলেও কাউন্সিলের জন্য আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। বিষয়টি নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকও হয়েছে একাধিকবার। প্রস্তুতির কথা জানান দিয়ে দলের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়েছে কয়েকবার।
তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কথা তুলে কাউন্সিলের তারিখ আবারো পেছানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ গত সপ্তাহে এমন ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণে কাউন্সিলের তারিখ পরিবর্তন হতে পারে।’যদিও এর পরপরই দলের সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘কাউন্সিলের তারিখ পরিবর্তনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতার দুই ধরনের বক্তব্যে আসন্ন কাউন্সিল ঘিরে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। আদৌ কাউন্সিল পেছাচ্ছে কি না, পেছালেও কবে হতে পারে কাউন্সিল, শুধুই কী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণেই তারিখ পরিবর্তন না কি অন্য কারণও রয়েছে- এমন নানা প্রশ্নে ঘুরপাক খাচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা।
সূত্র জানায়, চলতি মাসের শেষের দিকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সিদ্ধান্ত হতে পারে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতেরও ব্যাপারেও। কাউন্সিলও চলতি মাসের ২৮ তারিখে হওয়ার কথা।
অন্যদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের বিষয়টিও এবারের কাউন্সিলে বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে দলের নেতারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন। আর এই ইশতেহার তৈরির প্রাথমিক প্রস্তুতিও সম্পন্ন করতে পারেনি দলটি। মূলত কাউন্সিল পেছানোর সম্ভাব্যতার এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, যুদ্ধাপরাধ বিচারের রায় এবং নির্বাচনী ইশতেহার- মূলত এই তিন কারণেই আটকে যেতে পারে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়তো কাউন্সিল পেছানোর একটি কারণ। তবে এ মাসেই যুদ্ধাপরাধ এবং জামায়াতের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে। কাউন্সিলের আগে এই ইস্যুটিও গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। গুরুত্ব পাবে পরবর্তী নির্বাচনী ইশতেহারের বিষয়টিও।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘কয়েক দফায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচন নিয়ে আমাদের অধিক সতর্ক থাকতে হচ্ছে। কাউন্সিলের আগে আপাতত এই বিষয়টিই গুরুত্ব দিচ্ছে দল।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন এ ব্যাপারে বলেন, ‘এবারের কাউন্সিলের চমক অন্য বিষয়ে। ২০০৮ সালে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করা। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হবে। এর রূপকল্প প্রণয়ন হবে ২০১৯ সালের নির্বাচনের পরবর্তী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। আর এবারের কাউন্সিলে এই বিষয়ে একটি গাইড লাইন তৈরি করা হবে। এটিই হচ্ছে এবারের কাউন্সিলের বিশেষ চমক। তবে এর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতিও নিতে হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের ১৯তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় কাউন্সিল হয়েছিল ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর। ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বর্তমান কমিটির মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে ২০তম ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের জন্য ২৮ মার্চ দিন ধার্য করা হয়।
এএসএস/এনএফ/পিআর