ইমরুল-শফিউল বীরত্বে বধ হলো ইংল্যান্ড

ক্রীড়া প্রতিবেদক ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:২৩ পিএম, ২৪ মে ২০১৯

কি এক অম্ল মধুর অভিজ্ঞতা নিয়ে ঘরের মাঠে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ভাগ্য। প্রথম ম্যাচে ভারতের রান পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। আয়ারল্যান্ডকে ২৭ রানে হারিয়ে জিতে নেয় নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপের প্রথম জয়।

কিন্তু পরের ম্যাচেই বলতে গেলে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় লজ্জায় ডোবে বাংলাদেশ। মিরপুরের শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে মাত্র ৫৮ রানে অলআউট করে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দর্শকরা মাঠে নড়ে-চড়ে বসার আগেই শেষ বাংলাদেশের ইনিংস। ফলশ্রুতিতে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে জয় ক্যারিবীয়দের।

৫৮ রানে অলআউট হওয়ার বেদনা নিয়ে চট্টগ্রামের সাগরিকায় ইংল্যান্ডের মুখোমুখি বাংলাদেশ। সেবার ইংলিশরা দারুণ সব থ্রিলারের জন্ম দিচ্ছিল। আয়ারল্যান্ডের কাছে হার, ভারতের সঙ্গে ৩৩৮ রানের ম্যাচও ড্র করে ফেলেছে তারা। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে স্লো স্কোরিং ম্যাচে হারিয়ে দিয়েছে তারা খুব কম ব্যবধানে, মাত্র ৬ রানে।

BD-ENG-3.jpg

এতগুলো থ্রিলিং অভিজ্ঞতা নিয়ে অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের দল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মুখোমুখি টাইগারদের। বাংলাদেশও কেন যেন এই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া।

টস জিতে এই ম্যাচেও ইংল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড বাংলাদেশের স্পিনারদের সামনে কুলিয়ে উঠতে না পেরে ৪৯.৪ ওভারে স্কোরবোর্ডে ২২৫ রান তুলতেই অলআউট হয়ে যায়। জোনাথন ট্রটের ৬৭ আর ইয়ন মরগ্যানের ৬৩ রানের ওপর ভর করে ২০০’র গণ্ডি পার হতে পেরেছিল ইংলিশরা। এছাড়া তৃতীয় সর্বোচ্চ রবি বোপারার ১৬ রান।

বাংলাদেশের হয়ে স্পিন ঘূর্ণিতে ইংলিশদের কাবু করে দিয়েছেন নাঈম ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক এবং সাকিব আল হাসান। তিনজনই নেন ২টি করে উইকেট। পেসার শফিউল, রুবেল এবং আরেক স্পিনার মাহমুদউল্লাহ নেন ১টি করে উইকেট।

জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশও পড়ে কঠিন বিপদে। তামিম আর ইমরুল কায়েসের ৫২ রানের জুটি সত্ত্বেও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকায় এক সময় তো পরাজয়ের শঙ্কাই গ্রাস করে ফেলে বাংলাদেশকে। তামিম আউট হন ৩৮ রান করে। এরপর জুনায়েদ সিদ্দিকী ১২, রাকিবুল হাসান শূন্য রানে আউট হয়ে ফিরে যান।

BD-ENG-3.jpg

সাকিব আল হাসান আর ইমরুল কায়েস কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে দাঁড়ান। ৩ উইকেটে ৭৩ থেকে নিয়ে যান ১৫৫ রান পর্যন্ত। এ সময় এসে ১০০ বলে ৬০ রান করে আউট হয়ে যান ইমরুল। ৫৮ বলে ৩২ রান করে ফিরে যান সাকিব আল হাসানও।

এক পর্যায়ে বাংলাদেশের রান দাঁড়িয়ে যায় ৮ উইকেটে ১৬৯। হাতে আর মাত্র ২ উইকেট। তখনও রান বাকি ৫৭। প্রতিপক্ষ চরম পেশাদারিত্বের একটি দল ইংল্যান্ড। এমন কঠিন মুহূর্তে দলের ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়ে যান দু’জন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর শফিউল ইসলাম।

বোলার থেকে পুরোপুরি ব্যাটসম্যানে পরিণত হন তিনি। ইংলিশ পেসার জেমস অ্যান্ডারসন, আজমল শেহজাদ, টিম ব্রেসনান, মিডিয়াম পেসার রবি বোপারা, পল কলিংউড, স্পিনার গ্রায়েম সোয়ানরা চেষ্টার কমতি রাখলো না; কিন্তু ভাঙতে পারেনি রিয়াদ-শফিউল জুটি। শেষ পর্যন্ত ১ ওভার হাতে রেখেই দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন শফিউল ইসলাম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

BD-ENG-3.jpg

৪২ বলে ২১ রানে রিয়াদ এবং ২৪ বলে ২৪ রানে অপরাজিত ছিলেন শফিউল ইসলাম। ম্যাচ শেষে সেরার পুরস্কার তুলে দেয়া হয় ইমরুল কায়েসের হাতে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশকে যেভাবে জিতিয়েছেন, তাতে জনতার নায়কে পরিণত হন শফিউল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড: ২২৫/১০; ৪৯.৪ ওভার (ট্রট ৬৭, মরগ্যান ৬৩, স্ট্রাউস ১৮, বোপারা ১৬, প্রায়র ১৫, কলিংউড ১৪; নাঈম ২৯/২, রাজ্জাক ৩২/২, সাকিব ৪৯/২, মাহমুদুল্লাহ ৩০/১, রুবেল ৪০/১, শফিউল ৪৩/১)।

বাংলাদেশ: ২২৭/৮, ৪৯ ওভার (ইমরুল ৬০, তামিম ৩৮, সাকিব ৩২, শফিউল ২৪*, মাহমুদুল্লাহ ২১, জুনায়েদ ১২, মুশফিক ৬; শেহজাদ ৪৩/৩, সোয়ান ৪২/২, ব্রেসনান ৩৫/১)।

ফল: বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ইমরুল কায়েস।

আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।