‘স্পন্সর খুঁজতে গিয়ে উশু কী জিনিস বোঝাতে পারছিলাম না’

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১০:১৪ এএম, ২৭ জুলাই ২০২৫

'উ' মানে মার্শাল এবং 'শু' মানে আর্ট। আত্মরক্ষার সঙ্গে বিনোদন- এই দুয়ের মিলনে উশুর সৌন্দর্য। খেলাটি চীনে কুংফু নামে পরিচিত। কুংফুর আধুনিক স্টাইলই হচ্ছে উশু। উশু চীনের প্রচলতি খেলা। তবে বাংলাদেশে প্রচলন বেশি দিনের নয়।

বাংলাদেশে খেলাটি সম্প্রসারণের জন্য ২০০৭ সালে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ উশু অ্যাসেসিয়েশন। ২০১৮ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এটিকে ফেডারেশন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। দেশে উশুর যতটুকু চর্চা আছে, সেটা সেভাবে আসে না প্রচারের আলোয়। তাই তো খেলাটি সম্পর্কে অনেকে জানেন না। নতুন প্রজন্ম উশু‘কে চেনে না।

২০২৪ এর আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর অন্যান্য সেক্টেরের মতো ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের উদ্যোগও নেওয়া হয়। রাজনীতিকরণের মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনের স্বাভাবিক পথচলা রুদ্ধ হয়েছিল দীর্ঘ ১৬ বছর।

সরকার একটার পর একটা ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের বিদ্যমান কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন অ্যাডহক কমিটি গঠন করে দেয়। সেই ধারাবাহিকতায় গত মে মাসে মেজর জেনারেল এ এস এম রিদওয়ানুর রহমানকে সভাপতি করে বাংলাদেশ উশু ফেডারেশনের নতুন অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।

মেজর জেনারেল এ এস এম রিদওয়ানুর রহমান প্রথম উশু ফেডারেশনের দায়িত্ব পেলেও ক্রীড়াঙ্গনে তিনি পরিচিত মুখ। দুই বছর সেনা নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে অনেক খেলাই ছিল তার অধীনে।

উশু নিয়ে কী পরিকল্পনা এই উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার? দেশে অপ্রচলিত খেলাটি সম্প্রসারণে কী রোডম্যাপ তৈরি করছেন তিনি? ১৫ বছর আগে সাউথ এশিয়ান গেমসে দুটি স্বর্ণ এসেছিল এই ডিসিপ্লিন থেকে। তারপর বাংলাদেশের প্রাপ্তি আটকে আছে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জের মধ্যেই।

তৃণমূল থেকে উশুর উন্নয়ন, তরুণ প্রজন্মের কাছে উশুকে পরিচিত করা এবং দক্ষিণ এশিয়ার হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনাসহ নানা বিষয় নিয়ে ফেডারেশনের নতুন সভাপতি একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জাগো নিউজের বিশেষ সংবাদদাতা রফিকুল ইসলামকে।

প্রশ্ন: তিন মাস হয়েছে আপনি বাংলাদেশ উশু ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন। দেশে কম প্রচলিত খেলাটি নিয়ে কোনো স্বপ্ন দেখেন কিনা?

উত্তর: স্বপ্ন তো অবশ্যই দেখবো। ২০২৬ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে সেনেগালের ডাকারে যে ইয়ুথ অলিম্পিক গেমস হবে সেখানে উশু অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল উশু ফেডারেশন এবং অন্যান্য যে আঞ্চলিক সংগঠন আছে তারা খুব চেষ্টা করছে মূল অলিম্পিকে যেন উশু স্থান করে নিতে পারে। আমাদের স্বপ্ন, যখন উশু মূল অলিম্পকে থাকবে তখন যেন সেখানে যেতে পারি। যতদিন অলিম্পিকে যাওয়া না হচ্ছে ততদিন ওয়ার্ল্ড উশু চ্যাম্পিয়নশিপে আমরা যেন ভালো ফলাফল করতে পারি এবং একদিন পদক অর্জন করতে পারি সে চেষ্টাই থাকবে।

প্রশ্ন: উশুতে আমাদের তো সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে স্বর্ণজয়ের রেকর্ড আছে। ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসের পর আর স্বর্ণ পাওয়া হয়নি। তা নিয়ে কি ভাবছেন?

উত্তর: অলিম্পিক বলেন কিংবা ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে যেতে হলে আমাদের অনেক বড় রাস্তা পার হতে হবে। তাই আমাদের প্রাথমিক টার্গেট হচ্ছে সাউথ এশিয়ান প্রতিযোগিতা। এসএ গেমসে আমরা ২০১০ সালে স্বর্ণ পেয়েছি। দুঃখজনকভাবে এরপর আমরা স্বর্ণ পাইনি। সিলভার পেয়েছি, ব্রোঞ্জ পেয়েছি।

তাই আমাদের প্রাথমিক ফোকাস হচ্ছে সাউথ এশিয়ান গেমস। আমরা যাতে স্বর্ণ জিতে পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারি এবং সামগ্রিকভাবে যে পারপরম্যান্স ছিল বিগত কয়েক বছর, সেখান থেকে সামনে এগুতে পারি। সম্মিলিত পদক তালিকায় আমরা যেন আরো এগিয়ে যাই।

প্রশ্ন: দক্ষিণ এশিয়ায় একটা অবস্থান হলে তো এশিয়ায় ভালো করার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। সে বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

উত্তর: আমাদের সাউথ এশিয়ান গেমসের সাম্প্রতিক রেজাল্ট ভালো না। সবকিছুর পরও দেখা গেছে আমরা সাত জনের মধ্যে পঞ্চম। আমার পরিকল্পনা হচ্ছে- উশুতে আমরা যেন একটা ভালো জায়গায় যেতে পারি। সাউথ এশিয়ায় ভালো করতে পারলে আমাদের পরের লক্ষ্য হবে এশিয়ান গেমস।

এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই গেমসে কিন্তু আমাদের দেশে উশুর জন্মের পর কোনো পদক পাইনি। বলার মতো সে রকম কোনো অর্জনও নেই। সাউথ এশিয়ায় রেজাল্টটা যখন ভালো হবে, আমাদের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে পারবো, প্রশিক্ষণের মান উন্নত করতে পারবো তখন নিঃসন্দেহে আমরা এশিয়ান গেমসে ভালো করার স্বপ্ন দেখবো।

এভাবে যদি আমরা ধাপে ধাপে এগুতে পারি তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। মে মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর একটা করে কোচিং ট্রেনিং কোর্স ও জাজেস ট্রেনিং কোর্স করিয়েছি। তারপর এই ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ করেছি। সুনির্দিষ্টভাবে চিন্তাভাবনা করে দেখলাম, অফিসিয়ালদের প্রশিক্ষিত হতে হবে। সবার মধ্যে একটা সাধারণ স্ট্যান্ডার্ড থাকতে হবে। এ জন্যই আমরা জাজেস ট্রেনিং করালাম। গত ১০ বছরে নানাবিধ কারণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশিক্ষিত কোচ না থাকায় আমরা ভালো কিছু করতে পারিনি।

প্রশ্ন: উশুর মূলধারা হচ্ছে চাইনিজ মার্শাল আর্ট। আমাদের এখানে বিভিন্ন দেশের মার্শাল আর্ট আছে। এটাকে কিভাবে দেখছেন?

উত্তর: উশু হলো চাইনিজ মার্শাল আর্ট। এখানে জাপানিজ মার্শাল আর্ট আছে, কোরিয়ান মার্শাল আর্ট আছে। এই নানাবিধ কারণে মূলধারা থেকে বিচ্যুতি তৈরি হয়। আমরা চেষ্টা করছি, মূলধারা চাইনিজ মার্শাল আর্টই যেন এখানে হয়।

যারা টুর্নামেন্টে আসেন তারা যেন ভুল শিক্ষা নিয়ে না আসে সেজন্য দ্বিতীয় ধাপে আমরা কোচদেরকে এক প্লাটফর্মে এনেছি। লেভেল-১ করিয়ে ইন্টারন্যাশনাল উশু ফেডারেশনের ২০২৪-এ যেসব রেগুলেসন্স আছে সে অনুযায়ী জাজেস ও অফিসিয়ালদের শিখিয়েছি। কোচদের বলে দিয়েছি, তারা যেন খেলোয়াড়দের সেভাবে প্রশিক্ষিত করেন। তারপরই আমরা ন্যাশনাল করলাম।

প্রশ্ন: এসএ গেমস সামনে রেখে বিদেশি কোচ আনবেন কি না?

উত্তর: আমরা বিদেশি কোচ নিয়ে এসেছি। দুইজন চাইনিজ কোচ থাকবেন। একজন জুনের ১৫ তারিখে চলে এসেছেন। যিনি এসেছেন তিনি হলেন সান্দার কোচ। আর তাউলুর কোচ আগামী মাসের ১৫ তারিখ আসবেন। যিনি আছেন তাকেও আমরা এই প্রতিযোগিতায় রেখেছি। খেলা দেখে কোচের একটা ধারণা তৈরি হবে আমাদের খেলোয়াড়রা কিভাবে খেলে।

আমরা যখন এসএ গেমসের জন্য খেলোয়াড় নির্বাচন করবো তখন শুধু যে গোল্ড-সিলভার পাওয়াদের নিলেই ভালো হবে তা নয়। এই খেলাতো সিঙ্গেল নকাউট সিস্টেম। প্রথম রাউন্ডেউ যদি একজন ভালো প্রতিযোগী শক্ত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে পড়ে যায় তাহলে হেরে বাইরে চলে যেতে পারেন। এসব মাথায় রেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেন শুধু স্বর্ণ ও রৌপ্য বিজয়ীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে। যারা পটেনশিয়াল তাদের বিষয়েও নোট নিয়ে রাখবেন, যাতে ক্যাম্পে তাদের সেই প্রতিভাকে কাজে লাগাতে পারেন।

প্রশ্ন: যে দুইজন কোচ এসএ গেমসের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন তাদের কতদিনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে?

উত্তর: এসএ গেমস সামনে রেখে আপাতত ৬ মাসের জন্য দুই কোচ নিয়োগ দিয়েছি। চাইনিজ দূতাবাস আমাদের বলেছেন, এক বছরের জন্য এই দুই কোচকে দেবেন। ৬ মাস পর তাদের সাথে চুক্তি বাড়িয়ে নেবো। দ্বিতীয় কোচ আসার পর থেকে আমরা পুরোদমে এসএ গেমেসর অনুশীলন শুরু করতে পারবো।

প্রশ্ন: উশুর বিশাল এক সমস্যা ভেন্যু। এই সমস্যা কিভাবে মোকাবিলা করবেন?

উত্তর: মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়াম আছে। আমাদের জাতীয় স্টেডিয়ামের পাশের ইনডোর স্টেডিয়াম, রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে, হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন স্থাপনা হয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের টাওয়ার যখন করা হয়েছিল তখন কিন্তু ফেডারেশনের ভেন্যুর বিষয়টি মথায় রেখেই করা হয়েছিল।

কথা ছিল সেখানে ফেডারেশনগুলোর অফিস রুম হবে। হলরুমগুলো ব্যবহার করা যাবে। আমি যদি উশু, জুডো, কারাতের কথা বলি- এমন নয় যে এই খেলাগুলোর অনুশীলনের স্থান গ্রাউন্ড ফ্লোরেই হতে হবে। আমাদের জন্য যদি ভবনের টপ ফ্লোরেও একটা হলরুম দিয়ে দেয় সেখানেও আমরা আমাদের কার্যক্রমগুলো চালিয়ে যেতে পারবো।

এ বিষয়টাও আমরা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে অবহিত করেছি। সেখানে বিভিন্নভাবে জায়গাগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সে ভাড়া বাতিল করে এবং বিদ্যমান যেগুলো আছে সবকিছু অ্যারেঞ্জ করে ফেডারেশনগুলোকে যদি নির্দিষ্ট করে দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা আরো সহজ হবে।

প্রশ্ন: ভেন্যুর বিষয়ে আপনার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও বিওএ’র সাথে কোনো কথা হয়েছে কি?

উত্তর: কিছুদিন আগে অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সম্মানিত সেনাবাহিনী প্রধানের সাথে আমাদের সকল ফেডারেশনের সভাপতিদের একটা সভা হয়েছিল। সেখানে আমি এ প্রস্তাবটা তুলেছিলাম যে, আমাদের যে ছোট ছোট ফেডারেশনগুলো আছে তাদের যদি ছোট একটা খোলা জায়গা দেওয়া হয়। যেখানে দুই একটা অফিস, তার পাশাপাশি যদি আবাসনের ব্যবস্থা থাকলেই হলো। ৫ আগস্ট থেকে আমাদের এসএ গেমেসের ট্রেনিং শুরু হয়ে যাবে। এসএ গেমসের ট্রনিং শেষ হতে হতে আবার আরেকটি ইন্টারন্যাশনাল গেমসের ট্রনিং শুরু হয়ে যাবে। তাই সারা বছরের জন্য আমার সুনির্দষ্ট ভেন্যু দরকার হবে।

প্রশ্ন: ভেন্যুর বিষয়ে আপনাদের কোনো পছন্দ আছে কিনা? সরকারের কাছে কোনো জায়গার কথা বলেছেন কিনা?

উত্তর: আমরা বলেছি, পূর্বাচলে কিছু জমি অবৈধভাবে দখলকারীদের কাছ থেকে সরকার উদ্ধার করতে পেরেছে। মাননীয় ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আসবেন। তার কাছে আমরা আমাদের এই আবেদনটা রাখবো। যেভাবেই হোক আমাদেরকে ছোট্ট পরিসরে হলেও স্বাধীনভাবে কাজ করার মতো জায়গা যেন করে দেন, অবকাঠামো তৈরি করে দেন।

আবার জায়গা দিলে আমরা অন্যদের সাহায্য নিয়েও করতে পারি। চাইনিজ দূতাবাস বলেছে, আমরা যদি জায়গা দেখাতে পারি তারা সেখানে একটা কমপ্লেক্স তৈরি করতে সাহায্য করবে, আর্থিক সহায়তা করবে। এভাবে যদি দুই-তিনজন এগিয়ে আসেন এবং আমরা যদি নিজেদের মতো করে একটা অবকাঠামো পাই তাহলে পুরোপুরি ফোকাস দিয়ে উশুকে দেশের মধ্যে একটা ভালো অবস্থানে নিয়ে বিশ্ব দরবারেও নিয়ে যেতে চেষ্টা করবো।

প্রশ্ন: আমাদের দেশে উশু কম প্রচলিত একটি খেলা। এমন একটি ফেডারেশনের দায়িত্ব নিয়ে সভাপতি হিসেবে আপনার চাওয়া কি?

উত্তর: সভাপতি হিসেবে আমি চাই উশুকে সবাই চিনুক। বর্তমান প্রজন্ম কিন্তু উশু চেনে না। চলমান জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য যখন স্পন্সর খুঁজতে গিয়েছি, যখন উশু প্রতিযোগিতার কথা বলেছি, তখন উশু কি জিনিস সেটাই বোঝাতে পারছিলাম না। অথচ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তায়কোয়ানদো, জুডো সেগুলো পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত।

প্রশ্ন: স্কুল পর্যায়ে উশু খেলার আয়োজন করতে কি উদ্যোগ থাকবে আপনার?

উত্তর: অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির কাছে ভেন্যুর পাশাপাশি আমি আরেকটি প্রস্তাব রেখেছিলাম। এখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যদি সম্মিলিতভাবে একটা উদ্যোগ নেয় যে, স্কুলগুলোতে কিভাবে প্রতিযোগিতা আয়োজন করা যায়। তাহলে প্রান্তিক পর্যায়ে ছোট বয়স থেকে ছেলে-মেয়েদের এই খেলাধুলায় আকৃষ্ট করা যায়। এমন সুদুর প্রসারী একটা পরিকল্পনা যদি করা যায়, তাহলে আজ না হোক, পাঁচ বছর পর না হোক; ইনশাল্লাহ ১০ বছর পর দেখবেন উশু সারা দেশে প্রসারিত ও পরিচিত হয়েছে।

প্রশ্ন: বিওএ তো অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। তাতে কি ভেন্যু সংকটের কিছুটা সমাধান হবে বলে মনে করেন?

উত্তর: অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ত্রিশালে অলিম্পিক ভিলেজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটা দরকার হবে যদি আমরা সাউথ এশিয়ান গেমস এবং এশিয়ান গেমসের মতো বড় প্রতিযোগিতা করতে যাই। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ের যেমন, বাংলাদেশ গেমস, বাংলাদেশ যুব গেমস সেটা আয়োজন এক ভেন্যুতে করার দরকার নেই।

ঢাকা শহরে যদি ১০ জায়গায় ১০টি কমপ্লেক্স থাকে তাহলে একেকটি ভেন্যুতে একেকটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করা যেতে পারে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এ মূহূর্তে অনেক জায়গাতেই এ ব্যবস্থা করা সম্ভব। বিশেষ করে পূর্বাচলের কথা বললাম, সেখানে সরকারী প্লট আছে।

আমাদের দক্ষিণখানের আশেপাশে জায়গা আছে। তাতে সুবিধা হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্টের জন্য বিমানবন্দর কাছাকাছি আছে। সেখানে ফাইভস্টার, ফোরস্টার হোটেল আছে। ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্ট আয়োজনে খেলোয়াড়দের আবাসন ব্যবস্থায় বেগ পেতে হবে না।

অনেকে বলেন, আপনারা ত্রিশালে চয়ে যান না কেন? সাভারে চলে যান না কেন? সাভারের বিকেএসপিতে একটা টুর্নামেন্ট করতে হলে আমাদের পুরো সেটআপ নিয়ে প্রতিদিন সকাল-বিকাল যাওয়া-আসা কঠিন কাজ। ঢাকার ভেতরে বিদ্যমান স্থাপনাগুলো যদি রি-অ্যারেঞ্জ করা যায় এবং সেই সাথে দুই-একটা নতুন জায়গা খুঁজে বের করা যায় যেগুলো সরকারী জমি, সেগুলোও চাইলে সরকার দিতে পারে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনকে সম্মিলিতভাবে এ উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রশ্ন: দায়িত্ব পাওয়ার পর নির্বাহী কমিটির কয়টি সভা করতে পেরেছেন। কমিটিতে কেমন দক্ষ মানুষ পেয়েছেন?

উত্তর: আমরা এরই মধ্যে নির্বাহী কমিটির চারটি সভা করেছি। এসএ গেমসের জন্য আমরা কিভাবে সামনে এগুবো তা সহ অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আমরা চেষ্টা করি প্রতিমাসে সভা করতে। আমি সরকার ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ, উশুর সাথে যারা দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত তাদেরকেই আমি এই কমিটিতে পেয়েছি।

প্রশ্ন: প্রথম চার সভায় কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন?

উত্তর: অ্যাডহক কমিটির সামনে মূলতঃ দায়িত্ব দুটো। এক নম্বর হচ্ছে, বিদ্যমান গঠণতন্ত্র সংশোধন। এখন যেটা আছে সেটা যুগপোযোগী না। এটা পরিবর্তন দরকার। যেন যারা শুধু খেলাধুলার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদেরই ফেডারেশনে আনতে পারি। গঠণতন্ত্র সংশোধনের পর যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচিত উশু প্রতিনিধিদের কাছে আমরা দায়িত্ব দিয়ে যাবো। এ দুটি হচ্ছে সাংগঠনিক কাজ।

এ ছাড়া আমরা চলতি ও আগামী বছরের ক্যালেন্ডারও অনুমোদন করেছি। শুধু জাতীয় টুর্নামেন্ট করলেই হবে না, অনেক বছর ধরে চীনা দূতাবাসের পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা যে অ্যাম্বাসেডর কাপ করি সেটাও ক্যালেন্ডারে রেখেছি।

আগে আমরা জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ করিনি। আমি দায়িত্ব নিয়ে দেখলাম, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ হচ্ছে। তবে আমাদের যেহেতু জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ নেই, তাই ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া হচ্ছে না। তাই প্রকৃত ট্যালেন্টদের মূল্যায়ন হচ্ছে না। আমরা দ্রুত একটা জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করবো এবং নারীদের জন্য পৃথকভাবে একটা চ্যাম্পিয়নশিপও করবো।

প্রশ্ন: আগে কখনো উশুর নাথে কেনোভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন?

উত্তর: আমি সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সভাপতি ছিলাম দুই বছর। শুধু উশু নয়, তখন আমার অধীনে পুরুষদের ২২টি দল ও নারীদের ১৮টি দল নিযে দুই বছর কাজ করেছি। ২০১৯ সালে এসএ গেমসে আমরা যে ১৪৪টা পদক পেয়েছিলাম সেগুলোর মধ্যে ৭৭টি পদক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর খেলোয়াড়রা পেয়েছিলেন। তার পেছনে আমার অবদান ছিল এবং সেই সুবাধে এখনো আমার বেশ কয়েকটি ফেডারেশনের সাথে সম্পৃক্ততা আছে। যার কারণে এখানে এসে আমাকে কোনো বেগ পেতে হয়নি।

প্রশ্ন: আপনি ব্যক্তিগতভাবে কোন খেলা খেলেছেন?

উত্তর: আমি ফুটবল, ক্রিকেট দুটোই খেলেছি। দ্বিতীয় বিভাগ পর্যন্ত আমার খেলার অভিজ্ঞতা আছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করলে যা হয়, সব ধরণের খেলারই অভিজ্ঞতা হয়। তবে ফুটবল ও ক্রিকেট এখনো সুযোগ পেলে খেলি।

আরআই/আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।