মায়াবী জোসনায় প্রকৃতি প্রেমে মেতেছিল ওরা


প্রকাশিত: ০৪:৩৪ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
রাতে হরিণরা সাধারণত বিশ্রামে থাকলেও জোছনায় বিভ্রান্ত হয়ে ঘন জঙ্গল থেকে কখনও বেরিয়ে আসে

‘আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে/বসন্তের এই মাতাল সমীরণে।’ বিশ্বকবি বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জনপ্রিয় এ গানটিই যেন প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এসেছিল পর্যটকদের মাঝে। তাই তারা মায়াবি জোসনায় দলে দলে ছুটেছিলেন বনে। আর সেটি যেই সেই বন নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ও আমাদের জাতীয় বন সুন্দরবনে।

শীতের রুক্ষ-শুষ্ক আবাহওয়া শেষে এসেছে বসন্ত। আর বসন্ত মানেই অপরূপ প্রকৃতি। সেই প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ নিতে এখন অনেকেই সুন্দরবনমুখী। কারণ সামনেই বর্ষাকাল। সেই সময় সুন্দরবন ভ্রমণ সুবিধাজনক নয়। ঋতুভেদে সুন্দরবন বার বার রূপ পাল্টায়। কিন্তু নিজস্বতা হারায় না। সুন্দরবনের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেশি-বিদেশি পর্যটকদেরকে সব সময়ই টানে।

সুন্দরবনের আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে করমজল, হাড়বাড়িয়া, সুপতি, কটকা, কচিখালী, নীলকমল, দুবলারচর, শেখের টেক মন্দির, মান্দারবাড়ীয়া সমুদ্র সৈকত, দোবেকী, কালিরচর, মৃগামারী উল্লেখযোগ্য।

Shundorban
সুন্দরবনের বেড়াতে এসে এভাবেই স্মৃতির ফ্রেমে বন্দি হন পর্যটকরা

সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে মহান একুশে ফেব্রুয়ারিসহ তিন দিনের ছুটি কাটাতে রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দলে দলে গিয়েছিলেন সুন্দরবনে। এমনকি বিদেশিদের আনাগোনাও ছিল ব্যাপক। সময় কেটেছে অন্যভাবে। কেউ ছিলেন প্রকৃতি দেখার নিমগ্নতায়। আবার কেউ কেউ স্মৃতি ধরে রাখতে ক্যামেরাবন্দী হয়েছেন।

জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকও রাজধানী থেকে যাওয়া একটি পর্যটক দলের সদস্য ছিলেন। কথা হয় তরুণ পর্যটক সাকিল মোহাম্মদ উল্লাহ, মাজহারুল ইসলাম, আজহার হোসেন জুয়েল, ফয়জুল ইসলাম ও মশিউর রহমান বাদলের সঙ্গে।

জাগো নিউজকে তারা বলেন, বাংলাদেশে যে কয়টি বন রয়েছে, তার মধ্যে একমাত্র সুন্দরবনই আদি, অকৃত্রিম ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে টিকে আছে। ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পেরেছে সুন্দরবন। এর প্রধান কারণ এখানে কেউ চাইলেই বাস বা ট্রাক নিয়ে যেতে পারে না। সম্পূর্ণ নদী পরিবেষ্টিত এ বনটি নদী ও খাল দিয়ে জনবসতি থেকে বিচ্ছিন্ন। তাই আমাদেরও দলবেধে লঞ্চ আর ট্রলারে করে আসতে হয়েছে।

Shundorban
সুন্দরবনের সুন্দরী গাছ

কটকা সমুদ্রে সৈকতে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নিজেদের ক্যামরা বন্দী করছিলেন গ্রুপের কয়েকজন। জাগো নিউকে তারা জানান, ঢাকা থেকে বাসে খুলনা এবং সেখান থেকে লঞ্চ ভাড়া নিয়ে সুন্দরবনের ভেতরে গেছেন। লঞ্চের সঙ্গে ট্রলার  বাঁধা ছিল। যেসব জায়গায় লঞ্চে যাওয়া সম্ভব নয়, সেখানে ট্রলারে যাতায়াত করছেন তারা।

রাতের বেলা কেউবা বর্শি দিয়ে মাছ ধরেছেন। কেউ দেখেছেন জোসনা রাতের সুন্দরবন। আবার কেউ কেউ তাস খেলে সময় কাটিয়েছেন। কখনও বা আড্ডা দিয়েছেন দলের সবাই মিলে।

Shundorban
সুন্দরবনের দুবলার চরেও নেমে পর্যটকরা ব্যস্ত ছিলেন নিজেদের ক্যামেরাবন্দী করতে

জানা যায়, সেখানে থাকার জন্য সুশীলনের টাইগার পয়েন্ট এবং বর্ষার রেস্ট হাউসই ভরসা। টাইগার পয়েন্টে রুম প্রতি ভাড়া ৫০০-১৭০০ টাকা। তবে ডরমেটরি টাইপের কিছু রুমে প্রতি বেডের ভাড়া পড়ে ২০০ টাকা। এখানে ৩টি আধুনিক সুবিধাসহ কনফারেন্স রুমও আছে। এছাড়া, একসঙ্গে ১০০ জন মানুষের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

এখানে আরো একটি স্পেশাল সুযোগ রয়েছে। সেটা হলো ছাদে বসে বাডর্স আই ভিউ থেকে সুন্দরবন দেখা। আর চাঁদনি রাত যদি পেয়ে যান, তাহলে তো কথাই নেই।

এছাড়া মংলা দিয়ে যেতে চাইলে থাকার জন্য রয়েছে পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল। ঢাকা থেকে বুকিং দিয়ে যেতে পারবেন। ভাড়া ৮০০ থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে।

করমজল পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রহ্লাদ চন্দ্র রায় জাগো নিউজকে জানান, ‍‍“এখন প্রতিদিন সহস্রাধিক পর্যটক করমজল পর্যটন কেন্দ্রে আসছেন। এছাড়া বনের হাড়বাড়িয়া, হিরণ পয়েন্ট, কটকা, কচিখালী, দুবলাচরসহ বিভিন্ন স্পটেও প্রচুর দর্শনার্থী ভ্রমণ করছেন। বিশেষ করে জোসনা রাতে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়।”

এইচএস/আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।