মোহনীয় আবেশ ছড়ালো মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৪১ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিলকিস নাহার মিতু

গ্রামে বড় হওয়ার সুবাদে গ্রামবাংলার প্রকৃতি আমাকে বারবার মোহিত করেছে। তখন থেকেই ইচ্ছে পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করার। এই ইচ্ছে আরও বেড়ে গেলো অনার্সে ভূগোল বিষয়ে চান্স পাওয়ার কারণে। নানা জায়গার ইতিহাস, অবস্থান ইত্যাদি পড়তে পড়তে ইচ্ছে করে নিজের চোখে দেখে এলে পড়া আরও দ্রুত ও সহজে মুখস্থ হতো। বছরে একবার ভ্রমণের সুবাদে সিলেটকে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ হলো আমাদের।

সিলেট ভ্রমণের তৃতীয় দিনে আমরা গেলাম দেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত দেখতে। যার নাম মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। এর অবস্থান সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায়। ১৬২ ফুট উচ্চতা জলপ্রপাতটির। যে পাহাড় বেয়ে ঝরনা গড়িয়ে পড়ে, তার পূর্বনাম আদম আইল পাহাড় এবং পাহাড়টি কঠিন পাথরে গঠিত। পাহাড়ের ওপর দিয়ে গঙ্গামারা ছড়া বহমান। এই গঙ্গামারা ছড়া পাহাড় বেয়ে নিচে নেমে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত নাম ধারণ করেছে।

ঝরনার নামকরণের আরও মত প্রচলিত আছে। মাধবকুণ্ড ঝরনাকে কেন্দ্র করেই এখানে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক তৈরি করা হয়েছে। ৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় আমরা ইকোপার্কের সামনে পৌঁছাই। প্রধান ফটক থেকে সবার আগে আমি, শাপলা, সুমাইয়া প্রবেশ করি। সরু পথ দুপাশে নানান রকম গাছপালায় ভরপুর। মনের আনন্দে ৩ জন হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগোচ্ছি। কারণ বাকিরা পেছনে।

মোহনীয় আবেশ ছড়ালো মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত

প্রবেশের সময় হাতের বামপাশেই পাহাড় দেখতে পেলাম। একটু সামনে এগোতেই অল্পখানিক সিঁড়ি পার হতে হয়। তার সামনেই পাহাড়ের ওপরে মহাদেবের মন্দির আছে। আবার শ্যাওলা পড়া উঁচু সিঁড়ি দেখলাম। কিন্তু সেখানে লেখা ‘ওঠা নিষেধ ঝুঁকিপূর্ণ’। তাই আর সাহস করলাম না। ডানপাশে পানির যে স্রোত বয়ে যাচ্ছে সেদিকে তাকালেই দেখতে পেলাম ছোটখাটো পার্কের মতো তৈরি করা। তাতে ঢুকতেও আবার ১০ টাকা। সেখানে দোলনা, বাঁদর এসবের মূর্তি তৈরি করা। নিচে পানির স্রোতের দুপাশে পেঙ্গুইন আর মৎস্যকন্যার মূর্তি।

আরেকটু সামনে এগোতেই ঝরনার কিছু অংশ দেখতে পেয়ে দিলাম দৌড়। এক দৌড়ে ঝরনার কাছে এসে পৌঁছেছি। ঝরনা দেখে মনে হলো কেউ যেন পাহাড়ের গায়ে ঘন দুধ ঢেলে দিছে। সেখানে ছাউনি বাঁধানো বসার জায়গা আছে। অসংখ্য পর্যটকে ভরপুর। এরই মধ্যে আমাদের সব বন্ধু কাছে এসে গেছে। মন্দিরের সামনে বড় পাথরটার ওপরে দাঁড়িয়ে দেখলাম, লোকেরা নানান পোজে ছবি তুলছে। তাদের তোলা শেষ হলে বন্ধুরা ব্যস্ত হয়ে গেলো ছবি তুলতে। ছবি তুললো আমাদের সহপাঠী শামীম, যে কি না পুরো ভ্রমণের সময়ে সবার ইচ্ছেমাফিক ছবি তুলে দিয়েছে নিরলসভাবে।

আরও পড়ুন

একপর্যায় আমাদের ম্যাম দাঁড়ালেন পাথরের ওপরে ছবি তোলার জন্য। ম্যামের পোজ দেখে আমরা হতবাক। ম্যাম যেমন সুন্দরী; তেমনই তার পোজ। এরপর সুজয় স্যারের ছবি তোলা হলে সবাই মিলে গ্রুপ ফটো তুললাম স্যার-ম্যামের সাথে। ছবি তোলা শেষ হলে বন্ধুরা সব নেমে গেলো ঝরনার ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে। হোটেল থেকে পাওয়া সাবান, শ্যাম্পু নিয়ে এসে ঝরনার পানিতে কাজ সেরে নিচ্ছে বন্ধুরা। কেউ কেউ আবার গ্রুপ করে বিভিন্ন ছবি, নাচ ইত্যাদির ভিডিও করলো।

মোহনীয় আবেশ ছড়ালো মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত

আমিসহ বেশ কয়েকজন শুধু পানিতে নামিনি। আমি ম্যামের পাশে বসা। সামনে ঝরনার ঠান্ডা শীতল আবেশ আমার কাছে মনে হলো এসিও এত ঠান্ডা নয়। তখন ইচ্ছে করছিলো একটি গল্প বা কবিতার বই বের করে পড়ি কিন্তু সঙ্গে ছিল না। সিলেট ভ্রমণের প্রথম দিন জাফলংয়ের মায়াবী ঝরনা দেখলেও মাধবকুণ্ডের ঝরনা দেখে মন পরিতৃপ্ত হলো। বন্ধুরা যারা পানিতে নেমেছে গোসলে; তারা ওঠার নাম ভুলেই গেছে। ম্যাম ডেকে বললেন, ‘এই তোমরা যাবে না?’ তারা আরেকটু থাকতে চায়। ম্যাম ১১টা পর্যন্ত সময় দিলেন। তারা আনন্দ করে যাচ্ছিলো। আমারও ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না। কী আর করা, ফিরতেই হবে।

১১টায় ফিরে আসার সময় রাস্তার পাশে শরবত, পানি, পেয়ারা মাখা, আমড়া মাখার দোকান দেখতে পেলাম। খাসিয়া নারীদের দেখলাম; তারা পুরুষের সমানতালে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের ভাষায় কথা বলছে। বন্ধুরা আসার সময় সেখানে বাঁশ কোড়ল দেখে এসেছে। আমি আর কয়েকজন বের হলাম ইকোপার্কের ফটক পেরিয়ে। ইকোপার্কের পাশেই আছে বেশ কয়েকটি দোকান। সেখানে তাঁতের কাপড়, হাতে বোনা চাদর সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়।

মোহনীয় আবেশ ছড়ালো মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত

সেখানে একটি রেস্টুরেন্টে আমরা খেতে ঢুকলাম। এরমধ্যে বাকিরাও চলে এসেছে। সকালের খাবার ডিম, খিচুড়ি খেলাম সেখানে। খিচুড়িটা মন্দ নয়। মোটামুটি ভালো কিন্তু কয়েকদিন টানা জার্নিতে আর খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করলো না। অন্য খাবার না পেয়ে খিচুড়িই খেতে হলো। খাওয়া শেষ হলে আবার বাসে উঠলাম অন্য গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। পাহাড়ে ওঠার নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে আমরা যেতে পারিনি। তবে এখানে চা, পান, কমলা ইত্যাদির বাগান আছে শুনতে পেলাম।

মাধবকুণ্ড ভ্রমণ করে যা বুঝলাম, চারদিকে ঘন জঙ্গল। ওপরে নীল আকাশ। প্রচণ্ড রোদ। তার মধ্যে এসির থেকেও ঠান্ডা বাতাসের পরশ যদি কেউ পেতে চায়, তবে অবশ্যই তাকে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত দেখতে আসতেই হবে।

লেখক: অনার্স ৩য় বর্ষ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।