চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ‘হাতির বাংলো’

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৪২ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪
আদি এই বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রাচীন ইতিহাস

আরিফুল ইসলাম তামিম

চারপাশে উঁচু পাহাড়, সবুজের সমারোহ ও পাখির কিচিরমিচির শব্দ, এমন প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার ইচ্ছে সবার মধ্যেই আছে। এর মধ্যে দিয়ে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই দূর থেকে দেখে যে কারো মনে হতে পারে বিশাল একটি হাতি শুঁড় তুলে দাঁড়িয়ে আছে।

দূর থেকে জীবিত মনে হলেও, সামান্য কাছে যেতেই দেখা মিলবে হাতির আদলে নির্মিত ১৩১ বছরের পুরোনো একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। দেখতে অবিকল হাতির মতো মনে হলেও এটি মূলত ইট-পাথরে নির্মিত একটি প্রাচীন ভবন। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘হাতির বাংলো’ নামেও পরিচিত।

চট্টগ্রামের ফুসফুসখ্যাত সিআরবির পাহাড়ে দৃষ্টিনন্দন আদি এই বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রাচীন ইতিহাস। শতবর্ষ পুরোনো এই ইতিহাস হয়তো অনেকেরই অজানা। ইতিহাস ঘেটে জানা গেছে, ১৮৯৩ সালে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হয় বৃটিশ প্রকৌশলী ব্রাউনজারের অধীনে।

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ‘হাতির বাংলো’

ঊনিশ শতকের মাঝামাঝিতে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্যই বাংলোটি নিজেই নির্মাণ করেন প্রকৌশলী ব্রাউনজার। তবে কালের আবহমানে বাংলোটি আজ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকার লেডিস ক্লাবের ভেতর দিয়ে সামনে এগিয়ে হাতের ডানে সামান্য গেলেই চোখে পড়বে এই হাতির বাংলো।

বর্তমানে চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ এই হাতির বাংলো পড়ে আছে অনেকটা জীর্ণশীর্ণ অবস্থায়। নেই কোনো রক্ষণাবেক্ষণ, ফলে হারাতে বসেছে বাংলোটির সৌন্দর্য। সরেজমিনে দেখা গেছে,বাংলোটির সামনে ও পেছনের অংশ মিলিয়ে মোট ১২টি গোলআকৃতির জানালা আছে।

আরও পড়ুন

এছাড়া হাতির শুঁড়ের আদলে নির্মিত বারান্দার দু’পাশেও আছে গোলাকার দুটো ছিদ্র, যা দেখতে অনেকটাই হাতির চোখের মতো। ডুপ্লেক্স এই ভবনের নীচতলায় ৪টি ও দোতলায় একটি শয়নকক্ষ আছে। বর্তমানে স্থাপনাটির সবক’টি দরজা-জানালাই ভেঙে পড়ার পাশাপাশি মরিচা ধরেছে।

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ‘হাতির বাংলো’

কাঠ দিয়ে নির্মিত সব জানালাগুলোই পড়ে আছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। এছাড়া ভবনের দেয়ালজুড়ে পড়েছে শ্যাওলা, খসে পড়তে শুরু করেছে পলেস্তারা। বাড়ির চারপাশজুড়ে জমে আছে বিভিন্ন ময়লা আর শুকনো পাতা। নান্দনিক এই বাংলোতে এখন একজন রেলওয়ে কর্মচারী ভেতরের একটি শয়নকক্ষে কোনো রকমে থাকেন।

বিকেল হলেই অনেক দর্শনার্থী হাতির বাংলো দেখতে ছুটে আসেন। দর্শনার্থীরা ছবি তোলার পাশাপাশি এখানে অনেক সময় বিভিন্ন শর্টফিল্মের শুটিংও হয়ে থাকে। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝিতে ‘ফেরো’ সিমেন্ট দিয়ে নির্মিত এই বাংলোর ১৩২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বেশ মজবুত অবস্থায় আছে।

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ‘হাতির বাংলো’

তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিনদিন হারাতে বসেছে এই ঐতিহ্যের সৌন্দর্য। হাতির গায়ের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে এই স্থাপনাতেও ধূসর রং করা হয়, তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনের রং পুরোটাই এখন বিবর্ণ ধারণ করেছে।

বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে এই হাতির বাংলো, নেই কোনো পদক্ষেপ কিংবা যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ। নান্দনিক এই স্থাপত্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলে এটি দর্শনার্থীদের কাছে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।