ঢাকার মধ্যেই অতিথি পাখি দেখবেন যেখানে

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৪৪ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩

নিয়ামুর রশিদ শিহাব

ঋতু বৈচিত্রের দেশ বাংলাদেশ। ঋতু পরিবর্তেনের ফলে প্রকৃতিতে এখন লেগেছে শীতের হাওয়া। হাড় কাপানো শীতের তীব্রতা, গাছের পাতা ঝড়ে পড়া সবই যেনো প্রকৃতিতে শীতের হাওয়ার জানান দেয়। একই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অতিথি পাখির আগমন।

তীব্র শীত প্রধান দেশের পাখিরা অনুকূল পরিবেশের আশায় কম শীত ও অনুকূল প্রকৃতির দেশে অতিথি হয়ে আসে। নাতিশীতোষ্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিবছর সাদরে গ্রহণ করে নেয় এসব অতিথি পাখিকে।

jagonews24

আরও পড়ুন: যেসব জায়গা দিয়ে উড়তে পারে না প্লেন 

বাংলাদেশ হয়ে ওঠে তখন অতিথি পাখিদের খাদ্য ও জীবনধারণের নিরাপদ আবাসস্থল। এসব অতিথি পাখির আগমন ঘটে উত্তর মেরু অঞ্চল থেকে।

ইংল্যান্ডের নর্থ হ্যামশায়ার, সাইবেরিয়া কিংবা আন্টার্কটিকার তীব্র শীত যখন মাইনাসে চলে যায়, তখন সেখানে দেখা দেয় প্রচণ্ড খাদ্যাভাব। তীব্র শীতে পাখির দেহ থেকে খসে যায় পালক। হাজারো মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এসব পাখি আসে শুধু একটু উষ্ণতার জন্য।

প্রকৃতিগতভাবেই এই পাখিদের শারীরিক গঠন খুব মজবুত। এরা সাধারণত ৬০০-১৩০০ মিটার উঁচু দিয়ে উড়তে পারে। ছোট পাখিরা ঘণ্টায় গতি ৩০ কিলোমিটার।

দিনে বা রাতে এরা প্রায় ২৫০ কিলোমিটার উড়তে পারে। বড় পাখিরা ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার অনায়াসে ওড়ে। আশ্চর্যের বিষয়, এসব পাখি তাদের গন্তব্যস্থান কখনো ভুল করে না।

jagonews24

আরও পড়ুন: ঐতিহাসিক সোনারগাঁও ভ্রমণে যা যা দেখবেন 

আমাদের দেশে ৭৪৪ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। এর মধ্যে ৩০১টি বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করে বলে এদের ‘আবাসিক’ পাখি বলে। খণ্ডকালীন সময়ে নিয়মিতভাবে আসে ২৪৪ প্রজাতির অধিক পাখি, যা বাংলাদেশের অতিথি পাখি হিসেবে বিবেচিত।

এ দেশে অতিথি পাখিদের আগমন ঘটে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি দুই মাসে বেশি পাখি আসে এ দেশে।

দেশে অতিথি হয়ে আসে যেসব পাখি- সোনাজঙ্গ, খুরুলে, কুনচুষী, বাতারণ, শাবাজ, জলপিপি, ল্যাঞ্জা, হরিয়াল, দুর্গা, টুনটুনি, রাজশকুন, লালবন মোরগ, তিলে ময়না, রামঘুঘু, জঙ্গি বটের, ধূসর বটের, হলদে খঞ্চনা, কুলাউ , চিনাহাঁস , রাজহাঁস, গিরিয়া হাঁস, বৈকাল হাঁস, বালিহাঁস, চিতি হাঁস, ভূতি হাঁস, গাংকবুতর ইত্যাদি প্রধান।

বাংলাদেশের নানা প্রান্তে দেখা মেলে অতিথি পাখিদের। এসব অতিথি পাখির কিচিরমিচিরে মুখর থাকে পুরো প্রকৃতি। এক মোহনীয় রূপ ধারণ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা।

jagonews24

আরও পড়ুন: প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসুন ‘মিনি মালদ্বীপ’ 

১৯৮০ সাল থেকে মিরপুর চিড়িয়াখানার হ্রদে অতিথি পাখির দেখা মিলছে। অতিথি পাখির দেখা মিলছে নরসিংদীর চাতল বিল, নীলফামারীর নীলসাগর, নিঝুম দ্বীপ, হাকালুকি হাওর, বরিশালের দুর্গাসাগর, সিরাজগঞ্জের হুরা, টাঙ্গুয়ার হাওর, হাটল হাওর ও সোনাদিয়ায়। এ ছাড়া অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।

তবে শীতের প্রকোপ কমলে অতিথি পাখিরা আবার ছুটে যায় নিজ জন্মভূমিতে। অবকাশ যাপনের ইতি ঘটিয়ে আপন ভূমিতে যাওয়ার জন্য আবারো হাজার মাইল পাড়ি দেয় তারা।

আমাদের দেশের কিছু অসাধু মানুষ লোভের বশে বিভিন্ন উপায়ে শিকার করেন অতিথি পাখিদের। শিকারিদের ফাঁদে পড়ায় প্রতিবছর এসব অতিথি পাখির সংখ্যা কমছে।

 jagonews24

এভাবে প্রতিবছর অতিথি পাখি নিধন হতে থাকলে প্রকৃতি হারাবে তার নিজস্ব রূপ, বিলুপ্ত হবে বহু পাখি প্রজাতি। তাই সবারই উচিত অতিথি পাখিদের নিরাপত্তাদানে মানবিক হওয়া।

পাশাপাশি প্রয়োজন সঠিক নজরদারি। সর্বোপরি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অতিথি পাখিদের আতিথেয়তা প্রদান আমাদের দায়িত্ব।

লেখক: শিক্ষার্থী, বরিশাল পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট।

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।