ইতিহাসের সেরা নির্বাচন হতে যাচ্ছে এবার, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন প্রতিশ্রুতি দেশের জনগণের বহু প্রত্যাশিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছে, চলতি সপ্তাহের যে কোনো দিন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, চারজন নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনের সচিব প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রধান উপদেষ্টাকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত করেন সিইসি।
বৈঠকে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রস্তুতি সঠিক ও সুন্দরভাবে এগোচ্ছে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন ও একই দিনে গণভোট আয়োজনের জন্য কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
আরও পড়ুন:
ইতিহাসের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছিচলতি সপ্তাহের যে কোনো দিন তফসিল ঘোষণাকেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পৌঁছাবে আগের রাতে: ইসি সানাউল্লাহ
এ সময় নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে সরকার। জাতির জন্য প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে আপনারা (ইসি) চালকের আসনে আছেন। আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতেই হবে। জাতিকে একটি সুন্দর নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতিকে আমরা ইতিহাসের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে, রোববার ইসির দশম কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে চলতি সপ্তাহের যে কোনো দিন তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এর আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথাও জানান তিনি।
তফসিল প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, তফসিলপূর্ব যেসব কার্যক্রম এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সেগুলোর স্টক নেওয়া হয়েছে। সবাই জানেন সংলাপ, আইন ও বিধির সংস্কার, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গেছে, পোস্টাল ভোটের কাজ চলছে।
আরও পড়ুন:
গণভোট অধ্যাদেশ জারি‘গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদকে রায় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে’গণভোটের গুরুত্বপূর্ণ বিধানসমূহে যা থাকছে
গণভোটজুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট করতে যাচ্ছে ইসি। সম্প্রতি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইসির জন্য বড় দুটি নির্বাচন একদিনে হয়নি। প্রায় পৌনে ১৩ কোটি ভোটার। ভোটকেন্দ্র বাড়াতে হবে। ভোটকক্ষও বাড়াতে হবে। ভোট দিতেও সময় লাগবে। গণনাকারী দুই রকম লাগবে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একই দিয়ে চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।’
ভোটগ্রহণের সময় বাড়লোগণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে হওয়ার কারণে এবার ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়বে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ। সকাল সাড়ে ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।
সানাউল্লাহ আরও বলেন, ব্যালট পেপারসহ সব নির্বাচনি সামগ্রী আগের মতো আগের রাতেই সব কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে। আমাদের যেহেতু দুটো নির্বাচন একসঙ্গে করতে হচ্ছে। দুটি বিষয়ে ম্যানেজমেন্টে করতে হবে। যেসব কক্ষে ভোটার বাড়বে সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিক্রেট বুথ স্থাপন করা হবে।
আরও পড়ুন:
দেশে-বিদেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন যারানির্বাচনের দিন সাধারণ ছুটি, খোলা থাকবে ব্যাংক-পোস্ট অফিসভোটের সময় ৭২ ঘণ্টা মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
পোস্টাল ভোট বিডিপ্রবাসী এবং নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা থাকছে এই সংসদ নির্বাচনে। ১৮ নভেম্বর পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে নিবন্ধন শুরু হয়ে গেছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত পোস্টাল ভোটের জন্য নিবন্ধন করেছেন ২ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৭ জন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতিনির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে একটি পরিপত্র চলতি সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে দেওয়া হবে। এর আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। যে কেন্দ্রে যে ধরনের ফোর্স মোতায়েন করা দরকার সেটাই হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনে একটা সেন্ট্রাল মনিটরিং সেল স্থাপিত হবে, যেখানে সব বাহিনী, প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এই সেল থেকে মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন হ্যান্ডেল করা হবে। যদিও মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য নিজ নিজ বাহিনী, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সক্ষমতা আছে, বিষয়টি তারা দেখবে।
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নভেম্বর মাসে দায়িত্ব নেয় এ এম এম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন ইসি। চার নির্বাচন কমিশনার হলেন আব্দুর রহমানেল মাছউদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, তাহমিদা আহমদ ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ আর সচিব আখতার আহমেদ। এই কমিশনের ওপর এখন পর্যন্ত আস্থা রেখেই সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ও ইসির সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ সুষ্ঠুভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা।
এসএনআর/এমএমএআর/জেআইএম