মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণে ব্যস্ত চাষিরা, সার-খরচ নিয়ে চিন্তা
ফরিদপুরে চলছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। এরই মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ শতাংশ জমিতে রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে বীজ ও সেচের পানিতে খরচ না বাড়লেও সার নিয়ে চিন্তিত কৃষক। চাষিদের অভিযোগ, কোনো কোনো সার সংকটের পাশাপাশি অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছে। যদিও ডিলাররা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, কেউ অভিযোগ করলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ ও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ শুরু করেন চাষিরা। মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণের ৯০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ তোলা যায়। লাভের আশায় চাষিরা এ জাতের পেঁয়াজের আগাম চাষ করেন। কিন্তু এবার সেপ্টেম্বর মাসের শেষ ও অক্টোবরের শুরুতে কয়েক দফায় বৃষ্টির কারণে কিছুটা দেরীতে পেঁয়াজ আবাদ শুরু হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, ফরিদপুরের সদর, বোয়ালমারী, সালথা, ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন, সদরপুর উপজেলায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করা হয়। জমি প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কৃষকেরা চলতি মৌসুমে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করছেন। এবার মৌসুমে ৫ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৩ হাজার মেট্রিক টন।
কৃষকদের অভিযোগ, স্থানীয় বাজারগুলোয় সারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা হচ্ছে। এতে অনেকেই সময়মতো সার সংগ্রহ করতে পারছেন না। এতে রোপণ করতে দেরী হচ্ছে। ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর প্রভাব মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ ও উৎপাদনে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এ ছাড়া পেঁয়াজের বীজ, সার-কীটনাশক, শ্রমিকের মূল্যসহ প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বাড়ার আশঙ্কা আছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এবং ন্যায্য খরচে পেঁয়াজ আবাদ ও উৎপাদনে সারের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা জরুরি।

সরেজমিনে জানা যায়, জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ করতে ব্যস্ত কৃষক। কেউ মুড়িকাটা পেঁয়াজের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন, কেউ রোপণ করছেন, কেউ সেচ দিচ্ছেন। যারা আগেভাগে আবাদ করেছিলেন; তারা চারা গাছের পরিচর্যা নিচ্ছেন। কেউবা আগাছা পরিষ্কার ও চারায় কীটনাশক দিচ্ছেন।
ফরিদপুর সদরের অম্বিকাপুরের পেঁয়াজ চাষি আব্দুল জব্বার জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাজারের সার বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছেন। সারের দাম এত বেশি হওয়ায় আমাদের চাষের খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। অনেকেই সময়মতো সার পাচ্ছেন না।’
সালথার দরগা গট্টি এলাকার চাষি লতিফ মির জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার ২ বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করেছি। যদিও এ বছর গুটি পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম। তবে সার-কীটনাশকের দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছে ৫০০-৭০০ টাকা। একজন শ্রমিকের মজুরি ৮০০ টাকা। তারপরও ডিলারদের কাছ থেকে সময়মতো সার মেলে না।’
আরও পড়ুন
আলু বীজের দাম সর্বনিম্ন হলেও সারের দাম বেশি
পানিফল চাষে কম খরচে বেশি লাভ
চাষি মকলেস শেখ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত গাছের চারা ভালো দেখা যাচ্ছে। এভাবে থাকলে ফলনও ভালো হবে। আর মাস দুয়েক পরে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে তুলতে পারবো। সার-ওষুধ, শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় খরচও বাড়বে। সে অনুযায়ী দাম ভালো না পেলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
আজাদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিঘায় খরচ হবে প্রায় লাখ টাকার ওপরে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে বাড়বে। জানুয়ারিতে পেঁয়াজ বাজারে উঠবে। তখন দাম ৩ হাজারের বেশি না হলে লোকসান হয়ে যাবে।’
ফরিদপুর পৌরসভার অম্বিকাপুরের চাষি মালিক মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা নির্ধারিত দামে সার পাচ্ছি না। চাহিদা ও সময়মতো সার খুঁজেও পাওয়া যায় না। পেলেও অতিরিক্ত দাম দিয়ে কিনতে হয়। এই অতিরিক্ত দামের কারণে আমাদের মতো ছোট চাষিদের সমস্যা হচ্ছে।’

ডিলারদের ভাষ্যমতে, সারের সংকট ও অতিরিক্ত মূল্য নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। চাহিদা অনুযায়ী ভর্তুকির সার না পাওয়ায় অতিরিক্ত দামে বাইরে থেকে সংগ্রহ করে কৃষকের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে। কৃষকেরা যেন চাহিদা অনুযায়ী ন্যায্য দামে সার পান; সেদিকে নজরদারি করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
অম্বিকাপুর এলাকার মেসার্স নূর ট্রেডার্সের আব্দুল কায়েস জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত মূল্যেই সার বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ডিলারদের কাছ থেকে নিয়ে খুচরা বিক্রেতারা বেশি দাম নিচ্ছে কি না, তা আমাদের জানা নেই।’
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘কৃষকদের যদি সারের অতিরিক্ত মূল্য নেওয়ার অভিযোগ থাকে, তবে ডিলার পয়েন্টে টানানো কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাসহ তদারকি কর্তৃপক্ষের নম্বর আছে; সেখানে তারা যেন অভিযোগ জানাতে পারেন। অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই তা খতিয়ে দেখবো। কৃষকেরা যেন ডিলার পয়েন্ট থেকেই সার সংগ্রহ করেন।’
এন কে বি নয়ন/এসইউ/এএসএম