পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা

দিনাজপুরে লিচুর শাখায় মুকুলের সমারোহ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি দিনাজপুর
প্রকাশিত: ১২:৩৮ পিএম, ০৪ এপ্রিল ২০২৪

গাছে গাছে মুকুলের ব্যাপক সমারোহ দেখে বাম্পার ফলন হবে এমন আশায় লিচু গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন দিনাজপুরে চাষিরা। আবহাওয়া লিচুর জন্য উপযোগী হওয়ায় স্বস্তিতে রয়েছেন জেলার বাগান মালিক ও লিচু চাষিরা।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় লিচুর চাষ হওয়া জমির পরিমাণ ৫ হাজার ৭৮৭ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় ১০৭ হেক্টর বেশি। জেলায় লিচু বাগান আছে ৫ হাজার ৪১৮টি। ১৩ উপজেলায়ই লিচু চাষ হলেও সদর, বিরল ও চিরিরবন্দর উপজেলার লিচু সেরা।

সবচেয়ে বেশি চাষ হয় বিরল উপজেলায়। এ উপজেলায় আড়াই হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে লিচু চাষ করা হয়। ছোট-বড় মিলিয়ে বাগানের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। এবার জেলায় প্রায় ৩২ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

অন্য ফসলের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় অনেকে বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। প্রতি বছরই লিচু চাষের জমি বাড়ছে। শুধু তা-ই নয়, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গত বছর দিনাজপুরের লিচু রপ্তানিও করা হয়। এখন ফলটি বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও উৎস।

লিচু চাষি ও বাগান মালিকেরা জানান, গত বছর বিরূপ আবহাওয়ায় লিচুর ফলন কমে হয়েছিল। মাত্রাতিরিক্ত তাপ ও পশ্চিমা উষ্ণ বাতাসের কারণে যে সময়ে লিচুতে রং লাগে; সে সময়ের আগেই অধিকাংশ লিচু গাছই ঝলসে যায়। গত বছর অন্তত ৪০ শতাংশ লিচু ঝলসে যাওয়ার কারণে লোকসানে পড়েছিলেন চাষি ও বাগানিরা। এবার লিচু গাছে মুকুল সন্তোষজনক। যে হারে মুকুল এসেছে; তাতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে হাসি ফুটবে চাষিদের মুখে।

আরও পড়ুন

সদর উপজেলার মাসিমপুর ও বিরলের মাধববাটি ও চিরিরবন্দর লিচু চাষের জন্য বিখ্যাত। দিনাজপুরে মাদ্রাজি, বোম্বাই, বেদানা, চায়না থ্রি, গোলাপি, কাঁঠালি জাতের লিচু চাষ হয়ে থাকে। তবে বেদানা জাতের লিচুই এখনো সারাদেশে জনপ্রিয়। গত কয়েক দিন সদর উপজেলার মাসিমপুর ও বিরলের মাধববাটিসহ বেশ কয়েকটি এলাকার লিচু বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছগুলো হলুদাভ মুকুলে ছেয়ে গেছে। গাছের গোড়া আগাছামুক্ত করে সেচ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।

সদরের মাসিমপুরের লিচু চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দেড় হাজার গাছের দুটি বাগান লিজ নিয়েছি ৫ বছরের জন্য। গত বছর মুকুলের বদলে গাছে সবুজ পাতার সমারোহ ছিল। তার ওপর প্রচণ্ড তাপে লিচু জ্বলে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে। তবে এবার যে হারে মুকুল এসেছে, তাতে যদি খরা বা তাপ বেশি না হয়; তাহলে ক্ষতি পুষিয়ে যাবে।’

বিরল উপজেলার মাধববাটির লিচু চাষি আমজাদ হোসেন জানান, তার দুটি বাগান আছে। এবার মুকুল বেশি। গত বছর লোকসান গুনেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তা পুষিয়ে নিতে পারবেন। সপ্তাহখানেকের মধ্যে সব গাছে গুটি আসবে। তখন ছত্রাকনাশক দেওয়া হবে। আশা করা যায় এবার ফলন ভালো হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘দিনাজপুরের লিচু সুস্বাদু ও রসালো। দেশব্যাপী এর চাহিদাও আছে। গত বছর তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে কিছু গাছের ফসল নষ্ট হয়েছিল। এবার সময়মতো এবং বেশি মুকুল এসেছে। জেলায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘সঠিক নিয়মে পানি ও সার ব্যবস্থাপনা লিচুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুকুল ধরে রাখা, ছত্রাকমুক্ত রাখা, পরিমাণ মতো অনুখাদ্য, সার প্রয়োগ করতে কৃষককে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রতি ইউনিয়নে মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারা কাজ করছেন। যাতে লিচু চাষি ও বাগানিরা কোনো সমস্যায় না পড়েন।’

এমদাদুল হক মিলন/এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।