মাথায় আঘাত পাওয়ার পর অনেক মানুষই ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। কখনো ঘুম আসে না, কখনো আবার সারাদিন ঘুম ঘুম লাগে, আবার কারও ঘুমের সময়সূচী পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে দেখা গেছে, আঘাতজনিত মস্তিষ্কের আঘাত (ট্রমাটিক ব্রেইন ইনজুরি বা টিবিআই)–এর সঙ্গে ঘুমের সমস্যার সম্পর্ক খুবই সাধারণ। আপনি যদি মাথায় আঘাত পাওয়ার পর ঘুমের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে বিষয়টি অবহেলা না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
মস্তিষ্ক আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম, স্মৃতি, আবেগ এবং ঘুম সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। তাই মাথায় আঘাত লাগলে এর প্রভাব শুধু মাথাব্যথা বা মাথা ঘোরা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে না।
গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কের আঘাত দৈনন্দিন কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিতে প্রভাব ফেলে, মনোযোগ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দুর্বল করে, ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট করে।
হঠাৎ মাথায় আঘাত লাগলে মস্তিষ্কের সেই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ করে মেলাটোনিন নামের হরমোনের উৎপাদন ব্যাহত হয়। এই হরমোনই আমাদের কখন ঘুম আসবে আর কখন জাগবো তা নিয়ন্ত্রণ করে।
এ কারণে গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৭০ শতাংশ টিবিআই রোগী কোনো না কোনো ধরনের ঘুমের সমস্যায় ভোগেন।
টিবিআইয়ের পর সাধারণ যে ঘুমের সমস্যাগুলো দেখা যায়
অনিদ্রা: ঘুমাতে না পারা বা মাঝরাতে বারবার জেগে ওঠানারকোলেপসি: দিনের বেলা হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়াবিলম্বিত ঘুমের সমস্যা: গভীর রাতে ঘুম আসা, সকালে উঠতে কষ্ট হওয়া। দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব
এর মধ্যে অনিদ্রা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং এটি সুস্থ হয়ে ওঠার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ ঘুমের সময়েই মস্তিষ্ক নিজেকে মেরামত করে।
ওষুধ ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যার প্রভাবকিছু ক্ষেত্রে টিবিআইয়ের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ রোগীকে সারাদিন ঝিমুনি ভাব দিতে পারে, ফলে রাতে ঘুম আসতে দেরি হয়। আবার মাথার আঘাতের কারণে ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হলে স্লিপ অ্যাপনিয়া নামের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
ঘুমের সমস্যা কমাতে যা করতে পারেন প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করুন সম্ভব হলে কিছু সময় রোদে বা খোলা জায়গায় থাকুন দিনের বেলা দীর্ঘ সময় ঘুমানো এড়িয়ে চলুন টিভি বা মোবাইল দেখে দীর্ঘ সময় বসে থাকা কমান রাতে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান শোবার ঘর শান্ত, অন্ধকার ও আরামদায়ক রাখুন ঘুমানোর আগে ক্যাফিন, অ্যালকোহল, সিগারেট ও অতিরিক্ত চিনি এড়িয়ে চলুন ঘুমানোর ঠিক আগে ভারী খাবার বা ব্যায়াম করবেন না যদি ৩০ মিনিটেও ঘুম না আসে, তাহলে হালকা সুরের গান শোনা বা শান্ত কোনো কাজ করতে পারেন। চিকিৎসা কখন প্রয়োজন?
যদি নিয়ম মেনে চলার পরও ঘুম একেবারেই না আসে, ঘুম বারবার ভেঙে যায়, দিনের বেলা স্বাভাবিক কাজ করতে সমস্যা হয়। এসব সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে ওষুধ বা জ্ঞানীয় আচরণগত থেরাপি (সিবিটি) দেওয়া হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, অনিদ্রায় ভোগা প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ এই থেরাপিতে উপকার পান।
মাথায় আঘাতের পর ঘুমের সমস্যা শুধু অস্বস্তিকর নয়, এটি সুস্থ হয়ে ওঠার পথে বড় বাধা। তাই সমস্যাকে ছোট করে না দেখে সময়মতো চিকিৎসা নিন। সচেতন থাকুন, নিজের ঘুম ও মস্তিষ্কের যত্ন নিন কারণ সুস্থ ঘুমই সুস্থ জীবনের প্রথম ধাপ।
তথ্যসূত্র: নিউরোডায়াগনস্টিকস (এনডিএক্স) মেডিকেল পি.সি.
জেএস/