আইন-আদালত

শরীয়তপুরের বিচারক ও ২ পুলিশ কর্মকর্তাকে হাইকোর্টে তলব

উচ্চ আদালতে জামিন পাওয়া কয়েকজন আসামি ও তাদের স্বজনদের নির্যাতন করে পাঁচটি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকা আদায় ও দুটি দোকান লিখে নেওয়ার ঘটনায় শরীয়তপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে (সিজিএম) তলব করেছেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছে। ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- শরীয়তপুরের নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।

পাশাপাশি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে (এসপি) এ বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে।

ওই আসামিদের বিষয়টি আদালতে উপস্থাপনের পর এ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৩ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আরও পড়ুন>> ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগ দুই পুলিশ কর্মকর্তা বিরুদ্ধে

আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুজিবুর রহমান মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

আদেশের বিষয়ে আবেদনকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, একটি ছিনতাই মামলার আসামিদের শারীরিক নির্যাতন করে আহত করার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) রাসেল মনির ও সদ্য প্রত্যাহার হওয়া পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।

তিনি আরও বলেন, একইসঙ্গে উচ্চ আদালতের জামিনাদেশ থাকার পরও আসামিদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তলব করা হয়েছে। আগামী ১৬ জুলাই তাদের সশীররে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে (এসপি) এ বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন>> দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের নির্দেশ আদালতের

এর আগে গত ২৩ মে দ্রুত বিচার আইনে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি ছিনতাই মামলা হয়। মামলায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা আহম্মেদ চোকদারকান্দি এলাকার সাদ্দাম চোকদার, বকুল চোকদারসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়। সেই মামলায় ২৯ মে সাদ্দাম, বকুল, সাইদুল উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিনে নেন।

জামিনে আসার পর ৩০ মে রাতে তারা এ মামলার আরেক আসামি আনোয়ারকে নিয়ে ঢাকা কেরানীগঞ্জ সাদ্দামের বন্ধু আলমগীর চোকদারের বাসায় যান। ওইদিন রাতে তথ্য পেয়ে সেই বাসায় হাজির হন এএসপি রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেলসহ ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য।

আইনজীবী মুজিবুর রহমান জানান, ২৯ মে তিন আসামিকে ৬ সপ্তাহের জামিন দেন হাইকোর্ট। পরদিন ৩০ মে আসামিদের গ্রেফতার করে মারধর করা হয়। এ সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল উপস্থিত ছিলেন। পরদিন থানায় নিয়ে এসে আসামিদের বাবার কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়া হয় এবং নওডোবা বাজারে দুটি দোকান লিখে দিতে বলা হয়।

আরও পড়ুন>> ছাত্রলীগের ছেলেদের থামতে বলায় ওসিকে বকলেন এমপি

তিনি আরও জানান, এরপরও পুলিশ ক্ষ্যান্ত হয়নি। আসামিরা যখন পানি চান, তখন এক আসামির প্রস্রাব আরেকজনকে খাওয়ানো হয়। ১ জুন তাদেরকে চিফ জুডিসিয়াল কোর্টে উপস্থাপন করা হয়। উচ্চ আদালতের আদেশ থাকায় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উচিত ছিল জামিন দেওয়া। এটা না করে তিনি কারাগারে পাঠিয়েছেন। এ ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ বিষয়টি আজকে নজরে আনার পর দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তলব করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি পুলিশের মহাপরিদর্শক ও শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে এ বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা ও তাদের বড় ভাই আবু জাফর ঠান্ডু জেলা এসপি বরাবর লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ বদিউজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ছিনতাই মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মে দুপুরে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা এলাকার এক্সপ্রেসওয়েতে সোহাগ পরিবহন থেকে জাজিরা উপজেলার বাসিন্দা শাহীন আলম শেখ (২০) ও সেকেন্দার মাদবরকে (৫১) জোর করে নামিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা বিদেশি ডলার, মোবাইলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনতাই করে নিয়ে যায় স্থানীয় সাদ্দাম চোকদার, বকুল চোকদারসহ ১০-১১ জন। ডলারসহ যার আনুমানিক মূল্য ২১ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ টাকা। এ ঘটনায় ২৩ মে শাহীন আলম শেখ বাদী হয়ে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় সাদ্দাম, বকুলসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনকে আসামি করে একটি ছিনতাই মামলা করেন।

তবে শাহীন আলম ও সাদ্দাম চোকদারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে শত্রুতা রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

আরও পড়ুন>> র‍্যাব হেফাজতে মৃত্যু সেনসিটিভ, ২ মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করুন

এদিকে, মেডিকেল প্রতিবেদনের বিষয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, গত ৪ জুন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরান চার আসামিকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন, তাদের শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ আঘাতগুলো কীভাবে করা হয়েছে, তা বলতে পারবো না।

মেডিকেল প্রতিবেদনে নির্যাতনের সত্যতা পেয়ে শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরান তা আদালতে নথিভুক্ত করেন। এরপর তিনি ৭ জুন এ বিষয়ে আদেশ দেন। ‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন ২০১৩’–এর ৫ ধারার বিধান অনুযায়ী- অভিযুক্ত নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এরপর ৯ জুলাইয়ের মধ্য আমলি আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ সুপার শরীয়তপুরকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল বলেন, যার ডলার ও টাকা ছিনতাই হয়েছে, তিনি তার ভাগনে। তাকে সহযোগিতা করার জন্য সামাজিকভাবে তিনি মামলার আসামিদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। ঢাকায় তাদের অনুসরণ করে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছেন। তখন ধস্তাধস্তিতে তারা ব্যথা পেতে পারেন।

এফএইচ/এএএইচ/এমএস