কক্সবাজারের চকরিয়া ও মহেশখালী পৌরসভায় ভোটযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ রোববার। প্রচার প্রচারণার সময় নির্বাচনী পরিবেশ উত্তপ্ত থাকলেও শুক্রবার থেকে দু’পৌরসভার নির্বাচনী পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্নভাবে ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। চকরিয়া ও মহেশখালী এ দুই পৌরসভায় মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৭৮ জন এবং ২৮ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। প্রার্থীরা যে যার মতো প্রচারণা চালিয়ে নিজেদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়ে ভোটারদের হৃদয়ে স্থান করে নিতে চেষ্টা চালিয়েছেন। তবে সবার ধারণা নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীগণের বিজয় নানা কারণে সুনিশ্চিত। তবে, রাজনৈতিক বোদ্ধা মহলের মতে, সুষ্ঠু ভোট চললে পরিস্থিতি কারো অনুকূলে বিবেচনা করা যাবে না। কারণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও নতুন প্রজন্মের ভোটাররা এবারের জয়-পরাজয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। এ দুই শ্রেণীর ভোট যে যত বেশি আদায় করতে পারবেন তিনিই হবেন আগামীর নেতা। তবে শেষ বিজয়ের হাসি কে হাসছেন তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে ভোট গণনা শেষ হওয়া পর্যন্ত।সূত্র মতে, প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে চকরিয়ার এটি ৪র্থ নির্বাচন। কে হচ্ছেন নতুন পৌর পিতা সেই প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছেন ৪২ হাজার ৩০৬ জন ভোটারসহ পৌরবাসী। প্রচারণাকালে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করলেও নির্বাচনের দিন ক্ষণ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ শান্ত হয়ে উঠে। ফলে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আশা জেগেছে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট আদায়ের লক্ষ্যে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলায় ভোটারদের মাঝে ফিরে এসেছে স্বস্তি।পৌর নির্বাচন সম্পন্ন করতে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মেছবাহ উদ্দিন। সহকারী রিটার্নিং অফিসার হয়েছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন। কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ দিয়েছেন। শনিবার প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে ব্যালট পেপার ও ভোট বাক্স হস্তান্তর করা হয়েছে। বিকেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসাররা ব্যালট ও বাক্স নিয়ে স্ব-স্ব কেন্দ্রে চলে গেছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল ভোট আদায়ের লক্ষ্যে এনক্লোজার তৈরি করা হয়েছে।কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মেছবাহ উদ্দিন বলেন, কেন্দ্রের ভেতরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে প্রিসাইডিং অফিসারদের। নির্বাচন কমিশন সচিব বলে গেছেন, ব্যালেটে কেউ হাত দিলেই কেন্দ্র বন্ধ ছাড়াও গুলির অনুমতি দিতে পারবেন প্রিসাইডিং অফিসাররা।জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ১৪ জন আনসার ও অফিসারসহ ৯ জন পুলিশ (প্রয়োজনে বাড়বে) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের ৬টি মোবাইল টিম, ৪টি স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং ৬৪ সদস্যের ২ প্লাটুন বিজিবি ও র্যাবের ৬টি টিম প্রতিটি কেন্দ্রের সড়ক বা কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করবে। শনিবার বিকাল থেকেই র্যাবের ৪টি টিম ও বিজিবি সদস্যসহ পুলিশের মোবাইল টিম মাঠে নেমে গেছেন। র্যাবের অপর দুটি টিম রোববার সকালে চকরিয়ায় আসবেন বলে ককক্সবাজারের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার ফেরদৌস আহম চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন। তাদের নির্দেশনা দিতে সঙ্গে থাকবেন একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে পুরো নির্বাচনের কার্যক্রম মনিটরিং করবেন।এদিকে, চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের আলমগীর চৌধুরী নৌকা প্রতীকে ও বিএনপির নুরুল ইসলাম হায়দার ধানের শীষ নিয়ে পৌরপিতা হতে লড়ছেন। এছাড়া তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ২০ জন নারী ও ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৫১ জন কাউন্সিলর প্রার্থীসহ মোট ৭৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চকরিয়া পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৪২ হাজার ৩০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২২ হাজার ২৬৫ জন ও নারী ভোটার ১৮ হাজার ৯২২ জন। অপরদিকে, মহেশখালী পৌরসভা নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, মহেশখালী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন প্রার্থী। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৮ ও পুরুষ কাউন্সিলর পদে ২৭ জনসহ সর্বমোট ৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত বর্তমান মেয়র মকছুদ মিয়া, বিএনপির মনোনীত মহিউদ্দিন বাশি,স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক পৌর মেয়র সরওয়ার আজম বিএ, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট হামিদুল হক, সারজিনা আক্তার লড়ছেন।মহেশখালীতে পাঁচজন মেয়র প্রার্থী থাকলেও ভোটযুদ্ধে আলোচনায় রয়েছেন দু’জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত মকছুদ মিয়া ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মেয়র সরওয়ার আজম। এই দু’প্রার্থীর মাঝে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে অনুমান করছেন ভোটাররা। তবে ফলাফল জানতে ভোট গণনা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মহেশখালী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১৭ হাজার ৯৪৯ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ২১ ও নারী ভোটার ৮ হাজার ১৮৭ জন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন জানান, দুই পৌরসভায় সব কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোথাও কোন কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়নি। গুরুত্ব বিবেচনায় সব কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োজিত থাকবেন। তিনি জানান, মহেশখালী পৌরসভায় এক প্লাটুন বিজিবি, দুটি র্যাব টিম নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়া প্রতি কেন্দ্রে ২২ জন করে পুলিশ ও আনসার সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। সায়ীদ আলমগীর/এসএস/এমএস