কংগ্রেসের পরিণতি হবে আওয়ামী লীগের : ফখরুল
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার পরাজিত হওয়ার ভয়ে নির্বাচন দিতে চায় না। তারা জানে নির্বাচন হলে বিরোধী দলও গঠন করতে পারবে না। আওয়ামী লীগের পরিণতি হবে ভারতের সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের মত। এ ভয়ে তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে চায় না।
সোমবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ন্যাশনালিস্ট ব্রিটিশ ল’ স্টুডেন্টস এলায়েন্স আয়োজিত ‘সংবিধান লঙ্ঘন এবং আইনের শাসন’ বিষয়ে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যদি দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করে তবে তারা জানে যে, তাদের হয়তো ৩০ থেকে ৩৫টি আসন পাওয়ার সম্ভানা রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক দাবি করে বিএনপির ভারাপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যিনি তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ৯ বছর গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। রাষ্ট্রকে রক্ষা করেছেন তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাসঙ্গিকভাবে তিনি সঠিক বলেছেন। তার বক্তব্য বিকৃতি করে তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য হয়রানি করার জন্য তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দেয়া হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ কিছু না পেলে মিথ্যা প্রচার করে এমন মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘বার বার এদেশের মানুষ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের অধিকার আদায় করে নিয়েছে। সবাই সরকারকে কতৃত্ববাদী বলছে। ভারতীয় এক সাংবাদিক বর্তমান সরকারকে ভারতের ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের সাথে তুলনা করেছেন। ইন্দিরা গান্ধী একটা বিরোধী দলও তৈরি করতে পারেনি। ফলে পরবর্তী নির্বাচনে তিনি জামানত হারান। এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগের অবস্থাও ইন্দিরা গান্ধীর মতো হবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ নিরাপদ নয়। বাংলাদেশ বিপন্ন। গণতন্ত্র বিপন্ন। গত বছরে বিনা বিচারে ৬শ’র বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ৪৪০ জন গুম হয়েছে। ১৭ হাজার মামলায় ৪ লক্ষকে আসামি করা হয়েছে।’
অবিলম্বে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর বলেন, ‘অবিলম্বের সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ বের করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র বিপন্ন। মানুষের সকল মৌলিক অধিকারগুলো কেড়ে নেয়া হয়েছে। মানুষ অনিরাপত্তায় ভুগছে। মানুষের আজ শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
তিনি বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে ভয়াবহ সাংবিধানিক সংকট ও গণতন্ত্রের সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে বলে মির্জা ফখরুল বলেন, দুদক ও নির্বাচন কমিশন সরকারের তল্পিবাহক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সরকার বিচার বিভাগকেও নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।
খালেদা দীর্ঘ ৯ বছর গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, যিনি রাষ্ট্রকে রক্ষা করেছেন, রাষ্ট্রকে ধারণ করেছেন তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেয়া হয়েছে। যারা এই সরকারের মতের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দেয়া হচ্ছে। এই মামলা থেকে বুদ্ধিজীবী সাংবাদিকরাও রেহাই পাচ্ছেন না।
আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আপিল বিভাগ থেকে জামিন দেয়ার পর আবার নতুন মামলায় তাকে আটকে রাখার সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।
এসময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সরকার উন্নয়নের নামে বড় বড় কথা বলছে। কতৃত্ববাদী সরকারের চরিত্র নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখে না। ক্ষমতার দাপটে কথা বলে।’
তিনি বলেন, ‘আর বেশি দিন নয় এদের বিচার হবেই। গণতন্ত্র মানবাধিকার নিশ্চিত হবে।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সুলতানা রাজিয়া শাওন এর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বিএনিপর যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক এবং আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, বিএনপির সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শিরিন সুলতানা প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
এফএইচ/এসএইচএস/আরআইপি