গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত রাজশাহীর আম চাষীরা


প্রকাশিত: ০৪:১৯ এএম, ০২ মার্চ ২০১৬

রাজশাহীর আম বাগানগুলো এখন মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত। তাই আমের রাজধানী রাজশাহীর আম চাষীরা মুকুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আম উপাদনে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন এই অঞ্চলের চাষিরা। প্রতিটি গাছে উপচেপড়া মুকুল আম চাষিদের সেই সম্ভবনার কথা জানান দিচ্ছে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের দেয়া তথ্যানুযায়ী, এ অঞ্চলে প্রতি বছর প্রায় আড়ই`শ জাতের আম উৎপন্ন হয়। এগুলোর মধ্যে এ বছর ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপলি, আশ্বিনা, ক্ষুদি, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লকনা ও মোহনভোগ জাতের আমের চাষ বেশি হয়েছে।

এ বছর রাজশাহীতে ১৬ হাজার ৫৮৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৯ মেট্রিক টন। গত বছর এ অঞ্চলে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়েছিল।

এদিকে, এ বছর আম গাছগুলোতে হোপার পোকা ও ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয়ায় আম চাষিরা নানা ধরনের বালাইনাশক ওষুধ ব্যবহার করছেন।

Rajshahi-mango

জেলার চারঘাট উপজেলার ভায়ালক্ষ্মীপুর গ্রামের আম চাষী নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর তার আম গাছগুলোতে প্রচুর মুকুল এসেছে। মুকুল দেখে তিনি এ অঞ্চলে আমের বাম্পার ফলনের আশা প্রকাশ করছেন। তবে আম গাছগুলোতে হপার পোকা ও ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। তাই তিনি বিভিন্ন কোম্পানির তরল কীটনাশক গাছে ব্যবহার করছেন। এটি ব্যবহারের ফলে গাছে আসা মুকুলগুলো সতেজ থাকবে ও ভালো ফলন হবে বলে জানান।

বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ গ্রামের আম চাষি মুক্তার আলী জানান, গত বছর তার আমের গাছগুলোতে যে পরিমাণ মুকুল এসেছিল এ বছর তার দ্বিগুণ মুকুল এসেছে। তবে বেশ কিছু দিন ধরে তার গাছগুলোতে হপার নামের এক ধরনের পোকার আক্রমণ লক্ষ্য করছেন। এ পোকার হাত থেকে মুকুলকে রক্ষা করতে তিনি গাছে তরল কীটনাশক স্প্রে করাবেন বলে জানান।

পুঠিয়া উপজেলার তারাপুর গ্রামের আব্দুল হামিদ নামের এক আম চাষি জানান, তিনি পেশায় একজন কৃষক। তার নিজস্ব আমের বাগান রয়েছে। প্রতি বছর আমের মুকুল দেখে লাভের আশায় বুক বাধেন। তিনি নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করেছেন। বিশেষ করে হোপার পোকা ও ছত্রাকের আক্রমণের হাত থেকে মুকুলকে রক্ষা করতে এক দফা তরল কীটনাশক স্প্রে করিয়েছেন।

পবা উপজেলার দর্শনপাড়া গ্রামের আম চাষি শরিফুল ইসলাম জানান, তার নিজের কোন আম বাগান নেই। তবে তিনি প্রতি বছর নিদিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে আম গাছ কিনেন। কারণ তিনি মৌসুমী আম ব্যবসায়ী। গত বছরের তুলনায় তার গাছগুলোতে পর্যাপ্ত মুকুল এসেছে। তাই তিনি ভালো ফলন পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

এদিকে, তানোর উপজেলার বাধাইর গ্রামের আম চাষি আব্দুল লতিফ সরকার জানান, এ বছর তার আমের গাছগুলোতে পর্যাপ্ত আমের মুকুল এসেছে। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তার নিকট থেকে আম গাছের পরিচর্যা বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ফলে তিনি নিজেই নিজের আম গাছে পরিচর্যা করেন। গাছে মুকুল আসার পর এক দফা কীটনাশক স্প্রে করেছেন। সামনে আরেক দফা স্প্রে করবেন। তবে এ বছর ভালো ফলন পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

mango

বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর গ্রামের আম চাষি নূরুল আমিন জানান, আম গাছে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ, সার ও সেচ প্রদানসহ গাছের পরিচর্যা ছাড়া আম চাষিদের এখন অন্য কিছু করার ফুরসত নেই। গুটি ফোটার আগে গাছে স্প্রে করা হচ্ছে, যেন গুটিতে কোনো ধরনের পোকার আক্রমণ না হয়।

অপরদিকে, এ অঞ্চলে আম সংরক্ষণের জন্য কোন হিমাগার না থাকায় তা স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় আম চাষীরা।  

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলিম উদ্দীন জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর রাজশাহী অঞ্চলের গাছগুলোতে প্রচুর পরিমাণে মুকুল এসেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ থেকে মুকুলগুলোকে রক্ষা করা গেলে রাজশাহী অঞ্চলে আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

এ সময় তিনি আরও জানান, গাছে মুকুল আসার পর ও গুটি আসার পর হোপার পোকা ও ছত্রাকের আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করতে ভালো কোম্পানির তরল কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। তবে ভালো ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।

শাহরিয়ার অনতু/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।