মুস্তাফিজকে ছাড়াই পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছে টাইগাররা


প্রকাশিত: ০৪:৩৫ এএম, ০২ মার্চ ২০১৬

এখনও বছর পেরোয়নি। গত বছর এপ্রিল মাসের কথা। বিশ্বকাপের পরপরই বংলাদেশ সফরে আসলো পাকিস্তান। ক্রিকেটে বিশ্বের নতুন পেস সেনসেশন স্লোয়ার-কাটার স্পেশালিস্ট মুস্তাফিজুর রহমানকে তখন তার পাশের ইউনিয়নের মানুষ পর্যন্ত চিনতো কি-না সন্দেহ! মাশরাফি মর্তুজা টনিকে উদ্দীপ্ত টাইগাররা তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সবগুলো মাচেই হারালো পাকিস্তানকে। হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় মাখামাখি হল সফরকারিরা।

শুধু হার বললেও খুব সুবিচার করা হবে পাকিস্তানের প্রতি। প্রতিটি ম্যাচেই বিধ্বস্ত হল সফরকারিরা। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জিতল ৭৯ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচে জয় ৭ উইকেটের ব্যবধানে। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ৮ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো মাশরাফি ও তার সহযোদ্ধারা। কাটার মাস্টার মুস্তাফিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর আগেই পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে বাংলাদেশের।  ওয়ানডে সিরিজ শেষে পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি২০ ম্যাচে অভিষেক ঘটলো মুস্তাফিজের। ৪ ওভারে মাত্র ২০  রানে ২ উইকেট নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে নিজের আগমনী বার্তা জানান দিল মুস্তাফিজ। এরপর এই বাঁহাতির শুধুই এগিয়ে চলা।

বাংলাদেশ পেস বোলিংয়ের সেরা অস্ত্র মুস্তাফিজ। গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজার ভাষায়- ‘মুস্তাফিজের বিকল্প ক্রিকেট দুনিয়াতেই নাই। তার না থাকাটা আমাদের জন্য কঠিন  এক চ্যালেঞ্জ।’ মুস্তাফিজকে ক্রিকেট বিশ্বের সম্পদ বলে উল্লেখ করেছেন  লংকান অধিনায়ক ল্যাসিথ মালিঙ্গা থেকে শুরু করে পাকিস্তানের অন্তবর্তীকালীন কোচ আজহার মেহমুদ পর্যন্ত। চলতি এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে  ম্যাচের আগের দিন ভারতীয় রান মেশিন বিরাট কোহলির সংবাদ সম্মেলনে অর্ধেকের বেশি সময় জুড়ে বললেন মুস্তাফিজের কথা। এই বাঁহাতির বোলিং ভিডিও বিশ্লেষণ করে বিশেষভাবে প্রস্তুতি নেয়ার কথাও জানালেন তিনি।  সব মিলিয়ে আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে মুস্তাফিজের না থাকাটা বাংলাদেশের জন্য যে বড় একটা ধাক্কা তা বলাই বাহুল্য। কেননা মুস্তাফিজের কোনো বিকল্প নাই। এটা যেমন সত্যি, পাশাপাশি আরেকটা সত্যিও কিন্তু আছে। হ্যা, তামিম ইকবাল।

গোটা ক্রিকেট দুনিয়ার ব্যাটসম্যানদের কাছে আতঙ্কের নাম  মুস্তাফিজ আর পাকিস্তানের কাছে তার চেয়েও বড় আতঙ্কের নাম  তামিম ইকবাল। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচের ওই ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে একাই ধ্বংস করে দিয়েছিলেন তামিম। প্রথম ম্যাচে এই বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাট থেকে আসে ১৩২ রান। দ্বিতীয়  ম্যাচে অপরাজিত থাকলেন ১১৬ রানে। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ৬৪ রান করলেন তামিম।

আজ মিরপুরে মুস্তাফিজ না থাকার স্বস্তি অবশ্যই আছে পাকিস্তান শিবিরে। তবে তামিম ব্যাট করবেন, এটা কি খুব স্বস্তিদায়ক পাকিস্তান শিবিরের জন্য? এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে পিএসএলে (পাকিস্তান সুপার লিগ) তামিমের ফর্ম। পিএসএলে সবচেয়ে ধারাবাহিক তামিমের ব্যাট। পাকিস্তান জালমির হয়ে ৬ ম্যাচে তিন হাফসেঞ্চুরিসহ ২৬৭ রান করেছেন এই বাঁহাতি স্টাইলিস ওপেনার। গড় ৬৬.৭৫। বর্তমান পাকিস্তান দলে যারা খেলছেন তাদের প্রায় সবার বিপক্ষেই সফল তামিম। আরেকটা বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের গর্বের জায়গা তাদের বোলিং। এই দলটির মনোবল ভেঙ্গে দিতে হলে, চ্যালেঞ্জে হারাতে হবে তাদের বোলারদের। হালের ক্রিকেটে পাকিস্তানি বোলারদের নির্বিষ করতে তামিমের চেয়ে ভালো ওঝা আর কে হতে পারে?

একটা প্রশ্ন কিন্তু এসেই যাচ্ছে। পাকিস্তানকে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ করেছিল ওয়ানডে সিরিজে। আর এটা টি২০ ফর্ম্যাট। এছাড়া প্রতিষ্ঠিত সত্যি যে, বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেটে যতটাই উজ্জ্বল, টি২০তে ঠিক ততটাই অনুজ্জ্বল। টি২০ ক্রিকেটে একটা দল হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে টাইগাররা। প্রতিটি কথাই সত্যি। শুধু এটুকু বললে পুরোপুরি সুবিচার করা হবে না মাশরাফিদের প্রতি। চলতি এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটিই দিচ্ছে নতুন বার্তা। মনে রাখতে হবে গত বছর হোয়াইটওয়াশ করার আগ পর্যন্ত, ১৬ বছরে পাকিস্তানকে একটি ওয়ানডে ম্যাচেও হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদশের সর্বশেষ জয়টি ১৯৯৯ সালে।

আসলে কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে যে দলটিকে দেখা গিয়েছিল, ডু-অর-ডাই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই চেহারায় ফিরেছে টাইগাররা। সেই শরীরী ভাষা, সেই প্রতিজ্ঞা, দল হিসাবে জেগে ওঠা সর্বোপরি আত্মবিশ্বাস। র‌্যাংকিংয়ে টি২০’র এক নম্বর দল ভারতের সঙ্গে বাজেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এতে মিথ্যা হয়ে যায় না প্রথম ১২/১৩ ওভার পর্যন্ত টাইগার বোলারদের সামনে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের অসহায় অবস্থা। কিছুটা ফিল্ডিং ব্যর্থতা আর ভারতীয়  টি২০ স্পেশালিস্ট ব্যাটনম্যানদের অভিজ্ঞতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে শেষ পর্যন্ত এঁটে উঠতে পারেনি  স্বাগতিকরা। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের বিপক্ষে খাদের কিনার থেকে ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা যেটা করতে পেরেছে, সেটা ক্রিকেট বিশ্বেও কয়টা দলের পক্ষে করা সম্ভব? পাকিস্তানের হিসাবটা তো অনেক পরে।

১৯৬২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলে ফাইনালের  আগের দিন,  টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড যে ইনজুরি আক্রান্ত পেলে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলতে পারবেন কি-না তা নিয়ে। হঠাৎ করেই সব উত্তর দিয়ে দিলেন ব্রাজিলিয়ান ভক্তরা। সান্টিয়াগোর রাস্তায় খোলা পিকআপ, আর ট্রাকের শোভাযাত্রায় দেখা গেল এক ভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা , পেলে খেলুক আর নাই খেলুক কাল আমরা নেসক্যাফেতে চুমুক দেব। পেলে ফাইনালে খেলতে পারেননি। কিন্তু ঠিকই নেসক্যাফেতে চুমুক দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ানরা। পেলেকে ছাড়াই শিরোপা জিতলো ব্রাজিল। পেলে অনেক বিশাল। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার পেলের সঙ্গে মুস্তাফিজের তুলনা দেয়াটা শুধু মূর্খতা নয় এক ধরনের ঔদ্ধত্যও বটে। তবে ১৯৬২ সালের ফাইনালের আগে ব্রাজিলিয়ান ভক্তদের  আবেগের সঙ্গে একাত্ম আমরাও। আমরা বিশ্বাস করি, মুস্তাফিজ নাই খেলুক আজ আমরা উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা হব।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।