শিশু হাসানের ভাগ্য বদলের পরীক্ষা
দিনমজুর পিতার পক্ষে পড়ালেখা করানো সম্ভব নয়। তাই বলে দারিদ্রতার কাছে হার মানেনি তার প্রবল মনোবল ! হোটেলে কাজ করে পড়ালেখার খরচ চালায় মেধাবী শিক্ষার্থী ছোট শিশু হাসান। সূর্য যখন পূর্ব কোণে উঁকি মারে ঠিক তখন থেকেই ১২/১৩ বছরের শিশু হাসানের জীবন সংগ্রাম শুরু হয়। ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত হোটেলে কাজ করে আবার ১০টার সময় স্কুলে উপস্থিত হয় হাসান।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসান। বাবা বিল্লাল হোসেন পেশায় একজন দিনমজুর। সংসার চালাতে যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে হাসানের পড়ালেখা চালিয়ে নেয়াটা কঠিন একটা কাজ হয়ে দাঁড়ায় তার বাবার কাছে। কিন্তু দরিদ্র পিতার, দারিদ্রতার কাছে হার মানেনি হাসানের প্রবল মনবল আর দৃঢ় ইচ্ছা শক্তি। সে কাজ নেয় স্কুলের কাছের একটি হোটেলে। সেখানে কাজ করে যে টাকা পায় তা দিয়েই স্কুলের খরচ মেটায়। সকালে ৩ ঘণ্টা, বিরতীর এক ঘণ্টা এবং স্কুল ছুটির পর কয়েক ঘণ্টা এভাবে তিন শিফটে কাজ করে সে। কাজ শেষে সন্ধ্যা ৭টায় আবার তাকে বই নিয়ে শুরু করতে হয় পড়ালেখা।
২০১২ সালের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় এ গ্রেড নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল হাসান। কথা হয় হাসানের সঙ্গে, সে জানায় তার বন্ধুদের মতো খুব ভাল ছাত্র না হলেও তার পড়ালেখা করার অদম্য আগ্রহ। অর দশটা শিশুর মতো আমার ভাগ্যটা এতো ভালো না।
সবাই যখন প্রাইভেট নিয়ে ব্যস্ত তখন আমি স্কুলের খরচ যোগাতে ব্যস্ত। ১৫০০ টাকায় হোটেলে কাজ করে সেই টাকা দিয়ে কোনো রকম স্কুলের খরচ বহন করি। সামনে জেএসসি পরীক্ষা দিবো, অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই কাজেও ফাঁকি দেয়া যাবে না। জানি না এভাবে কতদিন পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবো।
হাসানের জীবন সংগ্রামের কথা জানেন হোটেলের মালিক ফারুক। সামনে জেএসসি পরীক্ষা, তাই যতটা পারা যায় তাকে আগেই কাজ থেকে ছুটি দিয়ে দিবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
পড়াশোনার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেও দারিদ্রতা বারবার হাসানের সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিত্তবানদের একটু সহযোগীতাই বদলে দিতে পারে হাসানদের মতো এমন হাজারও শিশুর ভাগ্য।
এআরএ/আরআইপি