শহরের ব্যস্ততায় এক মুহূর্ত থামার নাম হাদির কবর
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন তার কবর। শহরের প্রতিদিনের ব্যস্ততা, যানবাহনের শব্দ আর মানুষের ছুটে চলার মাঝেই এই কবর এক মুহূর্ত থামার জায়গা হয়ে উঠেছে অনেকের কাছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে দীর্ঘক্ষণ সরেজমিনে দেখা যায়, কবরটির পাশ দিয়ে যাওয়া পথচারীদের অনেকে স্বাভাবিক গতিতে হাঁটলেও একটি বড় অংশ গতি কমিয়ে থেমে যাচ্ছেন। কেউ দাঁড়িয়ে কয়েক মুহূর্ত নীরবে তাকিয়ে থাকছেন, কেউ ফলকে লেখা পড়ছেন, কেউ ছবি তুলছেন, কেউ দোয়া-মোনাজাত করছেন, কেউ আবার পাশের মানুষকে জিজ্ঞেস করছেন- হাদির বিচার কি আদৌ হবে!
সরেজমিনে দেখা যায়, অফিসগামী মানুষ, প্রাতঃভ্রমণে বের হওয়া মানুষ, শিক্ষার্থী, রিকশাচালক ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দাসহ বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণির মানুষ কবরটির সামনে থামছেন। কেউ একবার তাকিয়ে চলে যাচ্ছেন, আবার কেউ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন। কবর ঘিরে কোনো ভিড় বা আনুষ্ঠানিক আয়োজন না থাকলেও মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত থেমে যাওয়াই আলাদা করে চোখে পড়ছে।
একজন মধ্যবয়সী পথচারী বলেন, এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করি। আগে খুব গুরুত্বপূর্ণ কোন জায়গা মনে হয়নি এটাকে, স্বাভাবিকভাবেই যেতাম। এখন কবরটা চোখে পড়লেই অজান্তেই পা থেমে যায়। খুব বেশি সময় দাঁড়াই না, কিন্তু একবার তাকিয়ে যাওয়া হয়।
আরেকজন তরুণ পথচারী বলেন, হাদি ভাইকে খবরেই বেশি শুনেছি। টকশোতে আর স্লোগানে তার অগ্নিকণ্ঠ শুনেছি। কিন্তু সামনাসামনি কখনও দেখা হয়নি। এই দুঃখ আজীবন থাকবে। তাই এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হয়, একবার হলেও থামা উচিত।
অন্য একজন শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রায়ই এ রাস্তায় চলাচল করি। কিন্তু এখানে এসে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়ালেই মাথার ভেতর অনেক প্রশ্ন আসে। মাথায় ঘোরে ওসমান হাদির মতো একজন মানুষকেও গুলি করে হত্যা করা যায়! কিছু না বলেও চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকাটা দরকার মনে হয়।
স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, গত কয়েকদিন ধরে নিয়মিত দেখছি মানুষ থামছে। কেউ জোরে কথা বলে না, কেউ হইচই করে না। শুধু দেখে যায়, দাঁড়ায়, তারপর চলে যায়। আগে এই জায়গাটা কেউ খেয়ালই করতো না।
কবরটির আশপাশে কোনো স্লোগান, পোস্টার বা কর্মসূচি নেই। নেই কোনো আনুষ্ঠানিক পাহারা বা আয়োজন। তবুও শহরের ব্যস্ত রাস্তায় হাদির কবর মানুষের চলার গতি কিছুক্ষণের জন্য হলেও থামিয়ে দিচ্ছে। নীরব উপস্থিতিতেই এটি হয়ে উঠেছে ব্যস্ত শহরের মাঝে এক মুহূর্ত থামার জায়গা।
শরিফ ওসমান হাদি গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ১৮ ডিসেম্বর মারা যান। মৃত্যুর পর তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধে দাফন করা হয়।
এফএআর/এএমএ/জেআইএম