বেহাল বেরোবির শৌচাগার : বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি


প্রকাশিত: ০৯:০৯ এএম, ১২ এপ্রিল ২০১৭

ভাঙা বেসিন, পানি আছে কিন্তু কলের মুখ বন্ধ, কোথাও আবার পানির ট্যাপগুলোই ভাঙা, অবিরাম পানি ঝরছে, কিছু পানির কল শেষ কবে সচল ছিল তাও বলা দুষ্কর। দুর্গন্ধে একাকার হয়ে থাকা এসব শৌচাগার শেষ কবে পরিষ্কার করা হয়েছিল সেটাও অজানা। এরকমই অবস্থা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অধিকাংশ শৌচাগারের। ফলে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন প্রায় দশ হাজার ছাত্রছাত্রী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদভুক্ত ২১টি বিভাগে নিয়মিতসহ চারটি বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্স পরিচালিত হয়। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রয়েছে চারটি অ্যাকাডেমিক ভবন। এতে প্রায় দশ হাজার ছাত্রছাত্রীর নিয়মিত পাঠদান চলছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিকাংশ ভবনের শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

একদিকে মেয়েদের কমনরুম না থাকায় এবং অন্যদিকে পর্যাপ্ত ও পরিচ্ছন্ন শৌচাগারের ব্যবস্থা না থাকায় ক্লাস করতে এসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন তারা। ছাত্রীরা বলছেন, অপর্যাপ্ত শৌচাগার এবং কমনরুম সুবিধা না থাকায় নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা।

তবে শিক্ষার্থীদের শৌচাগারগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হলেও সম্পূর্ণ চিত্র ভিন্ন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহারের শৌচাগারের। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ফ্লোরেই বিদ্যমান গুটি কয়েক ভাল শৌচাগার কেবল শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সংরক্ষিত, শিক্ষার্থীদের ব্যবহার ঠেকাতে সেগুলোতে ব্যবহারে রয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় অ্যাকাডেমিক ভবনের নিচ তলায় এবং দ্বিতীয় তলায় মেয়েদের শৌচাগারে পানি নেই এমনকি বেসিনের পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন দীর্ঘদিন ধরে। তার পাশেই ছেলেদের শৌচাগারের বেসিন ভাঙা এবং ট্যাপ ভেঙে প্রায়ই শ্রেণিকক্ষে নোংরা পানি প্রবেশ করে। প্রায়ই শ্রেণি কক্ষে নাক চেপে ক্লাস করতে হয় বলেও অভিযোগ করেন একাধিক শিক্ষার্থী।

এছাড়া ভবনটির অধিকাংশ শৌচাগারের বেসিনে পানির ব্যবস্থা নেই। দীর্ঘদিন জমে থাকায় ময়লা আবর্জনায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।

বিজনেজ স্টাডিজ অনুষদের শিক্ষার্থী নাজনিন আকতার বলেন, শৌচাগারে পানি না থাকা যেন নিত্যদিনের ঘটনা। নেই কমনরুম সুবিধাও। তাই ক্লাস করতে এসে রীতিমত সমস্যায় পড়তে হয়। মাঝেমাঝে বাধ্য হয়ে হলেও ফিরে যেতে হয়।

BRUR

একই চিত্র হেয়াত মামুদ ভবনের ছাত্রছাত্রীদের শৌচাগার গুলোতেও। ভবনটির চতুর্থ তলায় মেয়েদের শৌচাগার থেকে এক ছেলে বের হতে দেখা যায়। কথা বললে ওই শিক্ষার্থী জানান, তিনি ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। ছেলেদের টয়লেটে পানি না থাকায় বাধ্য হয়েই মেয়েদের টয়লেটে প্রবেশ করেছেন।

সমস্যার বিষয়টি তিনি তার বিভাগীয় প্রধানকে জানাবেন বলে জানান। এসময় পানি না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীকে ফিরে যেতেও দেখা যায়।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় এবং চতুর্থ অ্যাকাডেমিক ভবনের শৌচাগারে পানির ব্যবস্থা থাকলেও শৌচাগারগুলোতে নেই টিস্যু ফেলার ঝুড়ি। দু-একটিতে ঝুড়ি থাকলেও নিয়মিত খালি না করায় ময়লা উপচে পড়ে। শৌচাগারে ব্যবহৃত পানির ট্যাপগুলোও ভাঙা।

এ দুই ভবনের ছাত্রীদের অভিযোগও প্রায় একই। কথা বললে তারা জানান, যে শৌচাগারগুলো রয়েছে, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার করার জন্য পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই। ফলে যতটা সম্ভব শৌচাগার ব্যবহারে বিরত থাকেন তারা।

সমস্যা উত্তরণে অধিকাংশ ভবনের ছাত্রীরা জানান, দ্রুত শৌচাগারের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। এছাড়া ছাত্রীদের কমনরুম সুবিধা চালুর দাবি জানান তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক ডা. নীলুফার বানু বলেন, নোরাং টয়লেট বা কমোড ব্যবহার করলে ইউরিন ইনফেকশন ও কিডনি সমস্যা হয়। এছাড়া দীর্ঘ সময় প্রস্রাব চেপে রাখার কারণেও এ ধরনের সমস্যা হয়। এতে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে যায় বলেও জানান তিনি।

কথা বললে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা শাখার সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. লোকমান হাকিম জানান, চারটি অ্যাকাডেমিক ভবনের জন্য শুধু একজন করে নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। এছাড়া তিন জন পুরুষকর্মী থাকলেও তারা অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবনের পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই চারজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিয়ে শুধু মাত্র শৌচাগারে পরিষ্কারের কাজই করা হয় না। চারটি অ্যাকাডেমিক ভবনের শিক্ষকদের ব্যক্তিগত কক্ষসহ শ্রেণি কক্ষ পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বেও তারাই।

শৌচাগারের দুরবস্থা নিয়ে বিব্রত শিক্ষকেরাও। কথা বললে বেরোবির শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ জাগো নিউজকে বলেন, ভবন নির্মাণের পর থেকে অদ্যাবধি শৌচাগারের ফ্লাশই চালু করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রকৌশল শাখাকে জানিয়েছি।

একাধিক বিভাগের শিক্ষক জাগো নিউজকে অভিযোগ করে জানান, প্রকৌশলী শাখাকে শুধু অভিযোগ তো দূরের কথা ডেকে কাজ করালেও লাভ হয় না। কারণ এতে নিম্নমানের যন্ত্রপাতির ব্যবহার করা হয়। যা ঠিক করার দুই-একদিনের মধ্যেই ফের বিকল হয়ে যায়।

নয়ন/এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।