৩১ বছর আগের কিশোর জীবনে ফিরে গিয়েছিল ওয়েস্ট-৮৭

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০২:৫৮ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০১৮

সন্ধ্যা তখন ঘনিয়ে আসছে। রাজধানীর উপকণ্ঠে আবদুল্লাহপুর মৈনারটেক গ্রিন ভ্যালি রিসোর্টে জ্বল জ্বল করা শুরু করে সাঁঝবাতি। উচ্চ ভলিউমে বাজে গান। সেই গানের তালে রীতিমতো হাত পা ছুঁড়ে নাচানাচিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন একদল মধ্যবয়সী ‘তরুণ বন্ধু’।

এ দৃশ্যে শুক্রবার সন্ধ্যার। দিন, মাস ও বছরের হিসেবে সেই সব বন্ধুদের কারও বয়সই ৪৫ বছরের বেশি বৈকি কম নয়। কিন্তু তাদের সবার নাচানাচিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে মনে হচ্ছিলো যেন এক দল কিশোর আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে। তারা সবাই ৩১ বছর আগে ১৯৮৭ সালে রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহবাহী ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এক সময়ের স্কুলছাত্ররা কালের পরিক্রমায় দেশ-বিদেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শেষ করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার, পুলিশ কর্মকর্তা, সাংবাদিক, বিচারক, বেসরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী হয়ে দেশ-বিদেশে জীবনযাপন করছেন।

স্মৃতির আয়নায় ধুলো জমলেও কয়েকজনের প্রচেষ্টায় শুক্রবার দিনভর ৩১ বছর আগের স্কুল জীবনের বন্ধুদের মিলনমেলা বসেছিল। ওয়েস্ট-৮৭ (ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুলের ৮৭ ব্যাচের ছাত্রদের সংগঠন) এর সদস্যরা দিনভর আবদুল্লাহপুরের মৈনারটেক গ্রিন ভ্যালি রিসোর্টে গল্পগুজব ও স্মৃতিচারণ করে আনন্দময় একটি দিন কাটান। শুধু স্কুল জীবনের বন্ধুরাই নয়, তাদের স্ত্রী ও সন্তানরাও ফ্যামিলি-ডে উপলক্ষে আনন্দ উৎসবে অংশ নেয়।

গত কয়েকদিন ধরে ফ্যামিলি ডে উপলক্ষে স্কুল জীবনের সব বন্ধুদের হাজির করতে কয়েকজন আপ্রাণ চেষ্টা করেন। ব্যক্তিগতভাবে দেখা করে কিংবা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বন্ধুদের ৫ জানুয়ারির ফ্যামিলি ডে উৎসবে অংশগ্রহণের তাগাদা দেন আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে শুধুমাত্র এ উৎসবে যোগ দিতে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে আসেন তিন বন্ধু।

west

শুক্রবার সকাল সাতটা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুল গেটে হাজির থাকতে আগের দিন থেকেই তাগাদা দেয়া হয়। সকাল থেকে মোবাইলে যোগাযোগ করে দ্রুত হাজির হতে অনুরোধ জানানো হয়।

স্কুল গেটে এসে অনেকের সঙ্গে ২০-৩০ বছর পর দেখা হয়। সাড়ে ৮টার দিকে দুটো বাসে গন্তব্যস্থলের দিকে যাত্রা করেন তারা। কেউ কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে স্পটে হাজির হন। স্পটে পৌঁছে নাস্তার পর বন্ধুদের সন্তানরা ক্রিকেট ব্যাট ও ব্যাডমিন্টন নিয়ে খেলতে নেমে পড়ে। পাশাপাশি চলতে থাকে ওয়েস্ট-৮৭ লেখা বিশেষভাবে নির্মিত ফটোফ্রেমে ছবি তোলা, ছোটদের দৌড় ও বন্ধুর স্ত্রীদের পিলো পাস প্রতিযোগিতা।

বন্ধুদের মধ্যে থাকা পুলিশের এক বড় কর্মকর্তাকে (ডিআইজি পদমর্যাদার) র্যাফেল ড্রয়ের টিকিট বিক্রির দায়িত্ব দেয়া হয়। পুলিশ কর্মকর্তা রীতিমতো নরম গরম সুরে ৫০ টাকা মূল্যের কমপক্ষে ২০টি টিকিট বিক্রি করেন। এরই মধ্যে স্কুল জীবনের নানা গল্পগুজবে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সবাই। দিনভর ঘুরে ফিরে স্কুলে কার কি টাইটেল ছিল তা নিয়ে হাসি তামাশা চলে। শুক্রবার জুমআর নামাজের পর ডাইনিং হলে খাবার পরিবেশন করা হয়।

অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে কয়েকজন বলেন, এখানে এসেছি নিজেকে খোঁজার জন্য। পুরনো বন্ধুদের পেয়ে মনে হয়েছে, পুরনো দিনে ফিরে গেছি। পড়াশোনা শেষ করে অনেকেই আমরা দূরে চলে গেছি। আজ একত্র হওয়ার পেছনে অনেক অনেক আনন্দ জড়িত।

west

বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরণী ও বিশাল আকারের কেক কেটে উৎসব উদযাপন করা হয়। সবশেষে অনুষ্ঠিত হয় আকর্ষণীয় র্যাফেল ড্র। সকাল, দুপুর ও বিকেল গড়িয়ে রাত নামলেও বন্ধুরা একে অন্যকে যেন ছেড়ে যেতে চাইছিলেন না।

ওয়েস্ট-৮৭ এর সভাপতি পুলিশ কর্মকর্তা মো. আজাদ মিয়া জানান, আগামী বছর আরও বড় পরিসরে ফ্যামিলি ডে’র আয়োজন করা হবে। তিনি বন্ধুদের স্ত্রীদের জন্য একটি যোগাযোগ মাধ্যম খোলা ও ছেলেমেয়েদের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় করার উদ্যোগের পরিকল্পনার কথা জানান।

সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, ফ্যামিলি ডে অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার তাজউদ্দিন আহমেদ রতন উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে শুধুমাত্র এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রবাস থেকে আসা তিন বন্ধু মিঠু (অস্ট্রেলিয়া), তপন (জাপান) ও শাহেদ (মালয়েশিয়া) এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। ‘শেষ হয়েও হইলো না শেষ’ এমন অনুভূতি ও ভালো লাগার স্মৃতি নিয়ে ফ্যামিলি ডে’র সমাপ্তি হয়।

এমইউ/এআরএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।