‘মহামারিতে দেশের প্রতি দুইজনের একজন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত’

মাহবুব সরদার
মাহবুব সরদার মাহবুব সরদার , বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক,জাবি
প্রকাশিত: ০৪:৪৩ পিএম, ১১ জানুয়ারি ২০২২
প্রতীকী ছবি

মহামারিতে দেশের প্রতি দুইজনের একজন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। করোনা মহামারিকালীন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ২৪টি গবেষণা নিবন্ধ বিশ্লেষণে নতুন তথ্য উঠে আসে।

গত ২৯ ডিসেম্বর গবেষণাটি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসের ‘গ্লোবাল মেন্টাল হেল্থ’ নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়। ‘প্রিভ্যালেন্স অ্যান্ড রিস্ক ফ্যাক্টরস অব দ্য সিম্পটমস অফ ডিপ্রেশন, এংজাইটি অ্যান্ড স্ট্রেস ডিউরিং দ্যা কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক ইন বাংলাদেশ: এ সিস্টেমেটিক রিভিউ অ্যান্ড মেটা-এনালাইসিস’ শীর্ষক গবেষণাটির জার্নালের প্রভাব মাত্রা ৩ দশমিক ৫।

দেশে প্রথমবারের মতো এ মেটা এনালাইসিসটি করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ৪৬ ব্যাচের তিন শিক্ষার্থী। তারা হলেন- ইসমাঈল হোসেন, ফিরোজ আল মামুন ও মোহাম্মাদ মামুন। এ তিন তরুণ গবেষক ‘চিন্তা রিসার্চ বাংলাদেশ’ নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সদস্য।

২০ মার্চ ২০২০ থেকে ৫ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত স্প্রিনজার, রিসার্চগেট, গুগল স্কলারসহ আন্তর্জাতিক মানের প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র সমূহ এ মেটা-এনালাইসিসে ব্যবহৃত হয়।

সাধারণত কোনো বিষয়ে একাধিক গবেষণা হলেও ফলাফল ভিন্নতা আসলে মেটা-এনালাইসিস করা হয়। যেমন: মহামারিতে বাংলাদেশের জনগণের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে একাধিক গবেষণার ফলাফলে বিস্তর পার্থক্য দেখা যায়। কোনো গবেষণায় বিষণ্ণতার হার দেখা যায় ৮২ শতাংশ, আবার অন্য গবেষণায় ১০ শতাংশ। এ অবস্থায় বাংলাদেশিদের হতাশা-বিষণ্ণতার সার্বিক হার নিরূপণ করতে আগের গবেষণাগুলো নতুনভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। এর নাম মেটা-এনালাইসিস রিসার্চ।

চিন্তা রিসার্চ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘করোনার সময় মানসিক সমস্যা নিয়ে অনেক গবেষণা বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এদেশ থেকে প্রকাশিত সব গবেষণার ওপর এটিই প্রথম সিস্টেমেটিক রিভিউ এবং মেটা-আনালাইসিস গবেষণা। আর এ গবেষণায় কাজ করেছি আমরা তিন বন্ধু। এখানে সবাই সমানভাবে কাজ করেছি।’

গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘মহামারিতে দেশের শতকরা ৪৭ ভাগ মানুষ বিষণ্ণতা (depression) এবং ৪৭ শতাংশ উদ্বেগ (anxiety) জনিত সমস্যায় ভুগছে, আর ৪৪ শতাংশ মানুষের মাঝে মানসিক চাপ (stress) লক্ষণীয় পর্যায়ে।’

গবেষণায় বিভিন্ন শ্রেণীর পেশাজীবীদের যেমন: সাধারণ মানুষ, ব্যাংক-চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্যকর্মী, করোনা-আক্রান্ত মানুষ, কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষ এবং শ্রমিকের তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা যায় সবচেয়ে বেশি মানসিক সমস্যায় ভুগছে শিক্ষার্থীরা।

গবেষণাতে মানসিক সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে এরকম অনেকগুলো আর্থসামাজিক, আচরণ ও স্বাস্থ্যগত, এবং মহামারী-জনিত ফ্যাক্টর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে গবেষক ফিরোজ আল মামুন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময়টায় শিক্ষার্থীরা অন্যান্য শ্রেণীদের থেকে বেশি মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ছিলো। তাই যে কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সময় তাদের উপর বেশি গুরুত্বারোপ করা উচিত।’

মেটা-এনালাইসিস প্রকাশের বিষয়ে পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজা মোবারক বলেন, ‘একটা ভালো মানের মেটা-এনালাইসিস কাজ হয়েছে। এটি আমাদের বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গর্ব। দেশে এর আগে এমন কাজ হয়নি। আমি চাই আমার সহকর্মী ও অন্যান্য শিক্ষার্থী এখান থেকে উৎসাহিত হোক।

মাহবুব সরদার/আরএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।