অচল জাকসুতে সচল আয়ের খাত


প্রকাশিত: ০৪:২৮ এএম, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দীর্ঘ ২৩ বছর যাবত অচল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু)। অচলাবস্থার কারণে অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের দাবি তুলে ধরতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। তারা বঞ্চিত হচ্ছে ন্যায্য অধিকার থেকে। শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে নেতৃত্ব তৈরি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্র রাজনীতি চলছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণে। তৈরি হচ্ছে না যোগ্য ছাত্র নেতৃত্বও। তবে জাকসু অচল থাকলেও সচল রয়েছে এ খাতের আয়।

সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন দায়িত্বে থাকার সময় জাকসু নির্বাচন নিয়ে ক্যাম্পাস সরগরম হলেও পরবর্তীতে তা আর হয়নি। তিনি চলে যাওয়ার পর জাতীয় নির্বাচন ও আইনি জটিলতায় ২০১৪ সালে ২ জানুয়ারি জাকসু নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। এরপর এ বিষয়ে আর কোনো দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি।

জানা যায়, ১৯৭০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭২ সালে প্রথম জাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর `৭৪, `৭৯, `৮০, `৮১, `৮৯, `৯০, `৯১ এবং `৯২ সালে জাকসুর নির্বাচন হয়। প্রথম ভিপি হিসেবে ছাত্রলীগের গোলাম মোরশেদ এবং জিএস হিসেবে জাসদের মুহাম্মদ রোকন উদ্দিন নির্বাচিত হন। গঠনতন্ত্রে প্রতি বছর নির্বাচনের কথা থাকলেও ৪৬ বছরে মাত্র ৯ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ১৯৯২ সালের নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন মাসুদ হাসান তালুকদার এবং জিএস শামসুল তাবরীজ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক ছাত্রের বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে ১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে তৎকালীন প্রশাসন জাকসু ও হল সংসদ বাতিল করে। জাকসু নির্বাচন না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট-১৯৭৩ অনুযায়ী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি পর্ষদ সিনেটে অন্যান্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে অ্যাক্টের [১৯(১) ক)] অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ থেকে ৫ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকার কথা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় সিনেটের অধিবেশন বসেছে ছাত্র-প্রতিনিধিদের মনোনীত সদস্য ছাড়াই। ফলে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে।

এদিকে গত ২৩ বছরে নির্বাচন না হওয়ায় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে জাকসু ভবন। ভবনটিকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের প্রাণ চাঞ্চল্যতা নেই বললেই চলে। জাকসুর তালাবদ্ধ কক্ষে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান আসবাবপত্র। তবে জাকসুর সব কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রতি বছর ভর্তি ও পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্র সংসদ ও হল সংসদের চাঁদা হিসেবে আদায় করা হচ্ছে অর্থ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখার সূত্রে জানা যায়, জাকসুর ৩৭০১ নং হিসাবে কোনো টাকা জমা থাকে না। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শাখায় প্রায় ৬ লাখ টাকার মতো জমা হয়। এছাড়াও জাকসু বাবদ প্রতি বছর বাজেটে অর্থবরাদ্দ দেয়া হয়।

Jahanginagor

তবে এ অর্থ শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনেই ব্যয় করা হয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পোট্রোলার মো. মোসানুল কবীর।

ছাত্র ইউনিয়ন জাবির সংসদের সভাপতি তন্ময় ধর জাগো নিউজকে বলেন, “জাকসু নির্বাচন আমাদের সকলের দাবি। বার বার ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি তোলার পরও আমরা সফল হয়নি। তবে আমরা জাকসু নির্বাচন সম্পর্কে সকলকে সচেতন করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছি।”

এছাড়া প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে টাকা নেওয়া হয় তা শিক্ষার্থীদের পিছনে খরচ করারও আহ্বার জানান তিনি।

জাবির শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি জাগো নিউজকে বলেন, “আমরাও জাকসু নির্বাচন চাই, নির্বাচনের মাধ্যমে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। এছাড়া জাকসুর জন্য যে টাকা আসে তা সঠিক হিসাব তুলে ধরা এবং টাকা শিক্ষার্থীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে খরচ করা হোক।”

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, “সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য এবং সঠিকভাবে হওয়ার জন্য। সরকারের শঙ্কা আছে যে, সরকারি ছাত্র সংসদে কর্তৃত্ব থাকবে কি না। এ জন্য সরকার নির্বাচনে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না।”

তিনি আরো বলেন, “নির্বাচন হচ্ছে না এ জন্য টাকা নেওয়া ঠিক না। আর যা নেওয়া হয়েছে তার হিসাব দেওয়া উচিত এবং তার স্বচ্ছতা থাকাও উচিত।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, “আমরাও নির্বাচন চাই, তবে এটা সময়ের ব্যাপার।”

এছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকার ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান তিনি।

হাফিজুর রহমান/আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।