রাবি ছাত্রলীগ

জয় বাংলা ব্লাড স্কিমের আড়ালে সিট দখলের কৌশল

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ১২:৩৮ পিএম, ২৪ মে ২০২৪

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের গত ২১ অক্টোবর। এতে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে সভাপতি ও আসাদুল্লাহ-হিল-গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। নেতৃত্ব পেয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেই হলগুলোতে সিট বাণিজ্য ও অবৈধভাবে রুম দখলের কবর দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

কিন্তু কয়েক মাস না যেতেই নানা অভিযোগে জড়িয়ে পড়ছেন বর্তমান কমিটির নেতারা। রাবি ছাত্রলীগ আবারও পুরানো রুপে ফিরছেন বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। হলগুলো থেকে আবাসিক শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। সিট দখলের অভিনব কৌশল হিসেবে ‘জয়বাংলা ব্লাড স্কিমের আড়ালে’ চলছে ছাত্রলীগের ‘রুম ওয়ার্ক’।

আরও পড়ুন

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে হলগুলোতে নতুন নেতৃত্ব দিতে শুরু করেছে বর্তমান কমিটি। হলগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা রক্তের গ্রুপ সংগ্রহের নামে রুমে রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে অনুসন্ধান করছেন। ছাত্রলীগ অবশ্য এর নাম দিয়েছে ‘জয় বাংলা ব্লাড স্কিম’। প্রথমে সালাম দিয়ে শিক্ষার্থীদের রুমে প্রবেশ করেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রুমে প্রবেশ করেই ‘জয় বাংলা ব্লাড স্কিম’ থেকে রক্তের গ্রুপ ও খোঁজ-খবর নিতে এসেছি’, ‘আমরা ছাত্রলীগ’ এমন পরিচয় দিয়ে থাকেন তারা। প্রথমে জানতে চাওয়া হয় কক্ষে অবস্থান করা শিক্ষার্থীর রক্তের গ্রুপ। পরে নাম, সেশন, বিভাগ ও তাদের নম্বর নিয়ে চলে যান তারা। পরে হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীর সেশন অনুযায়ী সময়সীমা শেষ হয়ে এলে তার মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীরা জানান, কিছুদিন আগেই শিক্ষার্থীদের রুমে রুমে গিয়ে ব্লাড গ্রুপসহ তাদের তথ্য নিয়ে আসেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এদিকে বিসিএস পরীক্ষা শেষ না হতেই আবারও ব্লাডগ্রুপ জানতে শিক্ষার্থীদের রুমে রুমে যাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতারা। রুম ওয়ার্কের জন্য মধ্যরাতেও শিক্ষার্থীদের দরজায় কড়া নাড়েন তারা। এ নিয়ে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়াতেও দেখা যায়। তথ্য সংগ্রহ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করারও অভিযোগ উঠেছে হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিরুদ্ধে। কাউকে হলের সিট থেকে নামিয়ে দেওয়া কিংবা পছন্দের কাউকে ওঠাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতারা। তাদের কারণে অতিষ্ঠ ১১টি আবাসিক হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবাসিক হলের ইমরান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “ব্লাডগ্রুপ সংগ্রহের আড়ালে ছাত্রলীগের ‘রুম ওয়ার্কের’ ফলে প্রতিনিয়ত ভয়ে থাকতে হয়। পড়াশোনা শেষ না হলেও হল সমাপনী হয়ে যাওয়ায় হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। প্রথমদিনে আমার তথ্য নিয়েছে। এর পর থেকে টানা তিনদিন আমার রুমে লোক পাঠিয়েছে কবে রুম ছাড়বো। এ নিয়ে মানসিক টেনশনে আছি।”

ছাত্রলীগের জয় বাংলা ব্লাড স্কিমের আড়ালে রুমে দখলের অভিনব কৌশল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাঙ্গাত্মকভাবে পোস্ট করতে দেখা যায় আদনান মাহিম নামের এক শিক্ষার্থীকে। তিনি তার পোস্টে লিখেন, ‘সরকার খুলেছে সার্বজনীন পেনশন স্কিম আর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সংগঠন খুলেছে জয় বাংলা ব্লাড স্কিম। গত একমাস আগেই তারা হলের রুমে এসে সবার তথ্য এবং ব্লাড গ্রুপ লিখে নিয়ে যায় এবং যথারীতি তার পরের দিন আসে মাস্টার্সের কেউ থাকলে তার কতদূর জানার জন্য। আজ আবার সেই পুরানো ঘটনার পুনরাবৃত্তি, বিসিএস পরীক্ষা শেষ মানে আবার রক্তের গ্রুপ দরকার তাই তারা আবার হাজির সবার ব্লাড গ্রুপ জানার জন্য (হা হা রিয়েক্ট)।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, “কিছুদিন আগে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী আমার রুমে ঢুকে পড়েন। ‘জয় বাংলা ব্লাড স্কিম থেকে এসেছি’ বলেই আমার সব তথ্য নিয়ে যান।” কোনো ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী অনুমতি ছাড়া একজন শিক্ষার্থীর রুমে এভাবে প্রবেশ করতে পারেন কিনা হল প্রশাসনের কাছে এমন প্রশ্ন তার।

আরও পড়ুন

জয় বাংলা ব্লাড স্কিমের আড়ালে শিক্ষার্থীদের বিভাগ ও সেশনের তালিকা করে সেই অনুযায়ী তাদের হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘যদি এরকমটা হয় সেটা আমি দেখব। তবে আমরা চাই জয় বাংলা ব্লাড স্কিমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সেবা দিতে। সেই অনুযায়ী ছাত্রলীগের কর্মীদের নির্দেশনাও দিয়েছি।’

শুধু আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদেরই তালিকা কেন করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে মোস্তাফিজুর বলেন, ‘বিভাগকেন্দ্রিক তালিকা করারও পরিকল্পনা আছে। বিভাগ থেকে শুরু করে হলে যত শিক্ষার্থী থাকে সবার তালিকা আমরা করব। এটি একটি লম্বা প্রক্রিয়া, তবে আমরা শুরু করেছি।’

এ বিষয়ে হল প্রশাসনের পদক্ষেপ জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক ড. ইকরামুল হক বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী বা ছাত্র সংগঠনের অধিকার নেই এভাবে হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করার। এ বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থী বা হল প্রাধ্যক্ষ আমার কাছে অভিযোগ দেননি। যেহেতু বিষয়টি আমি শুনেছি, এ নিয়ে প্রাধ্যক্ষ পরিষদে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’

যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, ‘হলকে নিয়ন্ত্রণে রাখার সার্বিক দায়িত্ব হল প্রশাসনের হাতে। জয় বাংলা ব্লাড স্কিমের আড়ালে ছাত্রলীগের রুম ওয়ার্কের বিষয়টি জানা ছিলো না। এ বিষয়ে হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবো এবং পরবর্তী মিটিংয়ে আলোচনা তুলবো। কোনো শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য জানার অধিকার আমাদের কারোরই নেই। তবে যদি কারো তথ্য জানার থাকে, তাহলে হল প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সে জানতে পারে।’

মনির হোসেন মাহিন/এমএমএআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।