রাশিয়ায় পাচার

ইউক্রেনে যুদ্ধ গিয়ে আহত আমরানকে ফিরে পেতে পরিবারের আকুতি

রুবেলুর রহমান
রুবেলুর রহমান রুবেলুর রহমান , জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:১১ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রাজবাড়ীর আরমান মন্ডলের ছবি নিয়ে মা ফাহিমা বেগমের কান্না/জাগো নিউজ

প‌রিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে বিদেশে পাড়ি জমান রাজবাড়ীর আরমান মন্ডল (২১)। কিন্তু দালালের মাধ্যমে প্রতা‌রিত হয়ে রা‌শিয়ায় গিয়ে পৌঁছান। সেখানে এক মাসের সাম‌রিক প্রশিক্ষণ শেষে ইউক্রেনের যুদ্ধ ময়দানে যাওয়ার সময় স্থলমাইন বিস্ফোরণে আহত হন। বর্তমানে তিনি রা‌শিয়ার এক‌টি হাসপাতালে চি‌কিৎসাধীন।

এমন অবস্থায় আরমানের প‌রিবা‌রসহ স্বজনরা দ্রুত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারসহ সং‌শ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা এবং ক্ষ‌তিপূরণ আদায়সহ দালা‌লদের বিচারের আওতায় আনার দা‌বি জানিয়েছেন।

আহত আরমান রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মাঝবাড়ী ইউনিয়নের কুষ্টিয়াডাঙ্গী গ্রামের কৃষক আকরাম মন্ডলের ছেলে। প‌রিবারে তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি।

ইউক্রেনে যু‌দ্ধে গি‌য়ে আহত আমরানকে ফিরে পেতে পরিবারের আকুতি

আরমানের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে আরমানকে রোমা‌নিয়া পাঠাতে প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা চু‌ক্তি‌ হয় স্থানীয় মঞ্জুরুল নামের এক দালালের সঙ্গে। দীর্ঘদিন ঘুরিয়ে রাজধানীর বনানীর রিক্রুট এজেন্সি ড্রিম হোম ট্রাভেলসের মাধ‌্যমে তাকে রোমা‌নিয়ার পরিবর্তে রাশিয়ার এক‌টি চকলেট কারখানায় চাক‌রির কথা ব‌লা হয়। এরপর প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে সৌ‌দি আরবে পাঠানো হয়। সেখানে দেড়মাস রেখে ওমরা হজ করানোর পর রাশিয়ার এক‌টি চক্রের কাছে রাজবাড়ীর আরমানসহ ১০ বাংলাদেশিকে বিক্রি করে দালাল চক্রটি। রা‌শিয়া যাওয়ার পর তাদের জোরপূর্বক কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে যুদ্ধের জন‌্য প্রস্তুত করতে কমান্ডো প্রশিক্ষ‌ণ দেওয়া হয়। প্রায় এক মাস প্রশিক্ষণের পর রা‌শিয়ার কিছু সৈন‌্যসহ গোলা-বারুদ দিয়ে ১০ বাংলাদেশিকে ইউক্রেনের যুদ্ধে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে যেতে গিয়ে ইউক্রেন সীমা‌ন্ত কিয়েভে স্থলমাইন বিস্ফোরণে এক বাংলাদেশি নিহতসহ গুরুতর আহত হন আরমান ও অনেকে। পরে তাদের রা‌শিয়ার এক‌টি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মাইন বিস্ফোরণে আরমানের হাত ও পা জখম হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে ঘটনার পর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিচ্ছে অসহায় পরিবারটি। একমাত্র ছেলেকে ফিরে পেতে সব সময় আহাজারি করছেন তার মা ফাহিমা বেগম।

আরমানের চাচি রা‌ফিজা ও আসমা বলেন, আরমানের বাবা খুব অসহায় মানুষ, কৃষি কাজ করে সংসার চালায়। ধার দেনা করে ছেলেকে খুব কষ্ট করে বিদেশে পাঠিয়েছিল। দালাল রা‌শিয়ায় এক‌টি চকলেট কারখানায় চাক‌রির কথা বলে প্রথমে সৌ‌দি আরব পা‌ঠিয়েছে। সেখা‌ন থেকে রা‌শিয়ায় নিয়ে যু‌দ্ধে পাঠিয়েছে। এখন সে হাসপাতালে মৃত‌্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। দ্রুত আরমানকে দে‌শে আনার পাশাপা‌শি সরকারের কাছে দালালের বিচার ও ক্ষ‌তিপূরণ দা‌বি কর‌ছি।

jagonews24

আরমানের চাচা আতিয়ার হোসেন বলেন, ঘটনা‌টি জানার পর ভা‌তিজাকে দেশে ফি‌রিয়ে আনতে প্রবাসী কল‌্যাণ মন্ত্রণালয়সহ বি‌ভিন্ন স্থানে ঘুরেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান পাইনি। আশা কর‌ছি দ্রুত সরকার আমার ভা‌তিজাসহ সবাইকে দেশে ফিরিয়ে আনবে এবং এই দালালদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শ‌স্তির ব‌্যবস্থা করবে যাতে দালালরা এরকম প্রতারণা আর কারও সঙ্গে করার সাহস না পায়।

আরমানের মা ফাহিমা বেগম বলেন, আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল ভালো এক‌টি চাক‌রি করবে। কিন্তু সে‌টি হয়নি। তারপরও সে আশা নিয়ে বিদেশে গিয়েছে। কিন্তু বিদেশে গিয়ে আমার ছেলের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো। এখন একটাই চাওয়া সরকার যেন দ্রুত আমার ছেলেকে ভালোভাবে আমার কাছে ফি‌রিয়ে দেন। আমি আর কিছু চাই না।

কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহুয়া আফরোজ বলেন, বিষয়টি জেনে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে এবং তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। প্রথমে আরমানের প‌রিবার এ বিষয়ে কোনো তথ‌্য দিতে চাচ্ছিল না। পরে তথ‌্য পেয়ে কাজ শুরু করেছি।

এফএ/এমএমএআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।