ঠিকাদারের কাছে ৬ শতাংশ ঘুষ চাইলেন প্রকৌশলী, অডিও ভাইরাল
গাইবান্ধা পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) শফিউল ইসলামের ঘুষ চাওয়ার একটি অডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ওই প্রকৌশলীকে প্রকল্পের টাকা ছাড়ে এক ঠিকাদারের কাছে ৬ শতাংশ ঘুষ দাবি করতে শোনা যায়।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যার দিকে বেশ কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ব্যক্তিগত আইডি থেকে অডিওটি প্রকাশ করেন।
ভুক্তভোগী ঠিকাদারের নাম ফিরোজ কবির। তিনি প্রকৌশলীকে ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। তবে অভিযুক্ত প্রকৌশলী শফিউল ইসলাম এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অডিওতে প্রকৌশলীকে একটি প্রকল্পের কাজের টাকা (ঘুষ) চাইতে শোনা যায়। কাজের বরাদ্দ অনুসারে তিনি ৬ শতাংশ টাকা দাবি করেন। কম দিতে চাইলে প্রকৌশলী বলেন, একটি টাকাও কম দেওয়া যাবে না। টাকা কম দিলে বিল পার করা যাবে না। ১০ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের অডিওতে আরও অনেক কিছু নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়।
ঘুষ চাওয়ার অডিওটি বৃহস্পতিবার রাতে ছড়িয়ে পড়লেও গত ১৫ জানুয়ারি ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ সরকারি কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ করেছেন ফিরোজ কবির নামের ওই ঠিকাদার। অভিযোগের সময় একটি পেনড্রাইভে তিনি ঘুষ চাওয়ার কথোপকথনের একটি অডিও জমা দেন। অভিযোগের পর এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
এ ঘটনায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন তদন্ত করেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন। কিন্তু তদন্তের এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, তদন্ত চলমান। প্রতিবেদন দাখিল করার আগে কিছু বলা যাবে না।
অভিযোগে ঠিকাদার উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট প্রকৌশলী শফিউল ইসলাম প্রায় ১৩ বছর ধরে গাইবান্ধা পৌরসভায় কর্মরত। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম করলেও ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ঘুষ-বাণিজ্য ছাড়াও দুর্ব্যবহার, অনিয়ম-দুর্নীতির অনেক অভিযোগ আছে। প্রকল্পের বরাদ্দ টাকার শতকরা ৬ ভাগ ঘুষ দিয়ে ফাইল ছাড় করতে হয়। যোগদানের পর থেকে তিনি পৌরসভার নকশা অনুমোদনের দায়িত্ব পালন করেন। বাড়ি নির্মাণে নকশা অনুমোদনের জন্য তিনি চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ নেন। টাকা না দিলে নানাভাবে হয়রানি করেন সেবাগ্রহীতাদের। এভাবে তিনি অবৈধভাবে টাকা আয় করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
জানতে চাইলে ঠিকাদার ফিরোজ কবির জাগো নিউজকে বলেন, ওই প্রকৌশলীর সঙ্গে কত তারিখে কথোপকথন হয়েছে সঠিক মনে করতে পারছি না। তবে গত বছরের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ের দিকে হবে। ওই প্রকৌশলী বিল প্রদানে প্রায় এক বছর আমাকে হয়রানি করেন। পরে বাধ্য হয়ে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে বিল নিই। অতিষ্ঠ হয়ে ঘুষ চাওয়ার কথোপকথন রেকর্ড করি। কিন্তু তখন প্রকাশ করতে পারিনি। কারণ ওই প্রকৌশলী সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মতলুবর রহমানের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তার ছত্রছায়ায় তিনি এসব করেছেন। ৫ আগস্টের পর মেয়র ক্ষমতাচ্যুত হন। এখন দেশের পটপরিবর্তন হয়েছে। প্রতিবাদ না করলে প্রকৌশলী এ রকম অনিয়ম করেই যাবেন। তাই এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে অভিযোগ দিয়েছি। কথোপকথনটি ভাইরাল হয়েছে। আমি তদন্ত সাপেক্ষে এই ঘটনার দ্রুত বিচার চাই।
ঘুষ দাবির অডিও ফাঁস ও অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে শফিউল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগটি তদন্তাধীন। তাই এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না বলে ফোন কেটে দেন।
এ এইচ শামীম/এফএ/এমএস