কিশোরগঞ্জ
৫২ বছরের বিরোধ, জামিন পেয়ে আবারো সংঘর্ষে আহত ৩০
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দুই বংশের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপী গ্রামে এ সংঘর্ষ হয়। ৫২ ধরে চলে আসা বংশগত দ্বন্দ্বের জেরে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এরআগে হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক থেকে শনিবার (১২ এপ্রিল) জামিন পেয়ে বাড়ি আসেন এক পক্ষের লোকজন।
সংঘর্ষে গুরুতর আহতরা হলেন, মৌটুপী গ্রামের আব্দুল গণির ছেলে ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল পান্ডা (৩৫), হাসমত আলীর ছেলে কৃষকদল নেতা বুলবুল মিয়া (৩২), হারুন মৃধার ছেলে ছাত্রদল নেতা পাভেল মৃধা (৩০), আজিজুল হকের ছেলে মিলন (৬০), দেলু হোসেনের ছেলে তানিম (২০), মুকশেদ আলীর ছেলে হাজী আলী আহমদ (৭৫), ইকরাম হোসেনের ছেলে মাসকুল মিয়া (৪৫), মৃত রমিজ উদ্দিনের ছেলে আঙ্গুর মিয়া (৬০) প্রমুখ। এছাড়া বাকিরা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
জানা গেছে, মৌটুপি গ্রামের সরকার বাড়ির বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সরকার মো. সাফায়েত উল্লাহ এবং কর্তা বাড়ির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মো. তোফাজ্জল হক গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ চলছে। এ বিরোধে এ পর্যন্ত প্রায় এক ডজন খুনের ঘটনা ঘটেছে। কর্তাবাড়ির লোকজন দুটি হত্যা মামলার আসামি হয়ে কয়েকমাস যাবত বাড়ির বাইরে অবস্থান করছিলেন। গত শনিবার তারা জামিন নিয়ে বাড়িতে যান। বাড়িতে যাওয়ার পর মঙ্গলবার বিকেলে ফের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

কর্তাবাড়ির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক বলেন, গত জুন মাসের পর আমাদের এলাকায় তিনটি মার্ডারের ঘটনা ঘটেছে। দুটি হত্যা মামলায় আমরা জামিন নিয়ে বাড়িতে যেতে পারিনি। পুরো রমজান মাস আমাদের লোকজনদের বাড়ি ছেড়ে বাইরে থাকতে হয়েছে। এলাকার সুশীল সমাজের লোকজন একটি শান্তি কমিটি গঠন করে আমাদেরকে বাড়িতে নিয়ে যান। সে সময়ে আমরা উভয় পক্ষের লোকজন কোনোরকম ঝামেলা হবে না মর্মে অঙ্গীকার করে। কিন্তু মঙ্গলবার বিকালে আওয়ামী লীগের বিনা ভোটের চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহর ছেলে নাহিদ লোকজন নিয়ে হামলা চালিয়ে আমাদের পক্ষের লোকদের গুরুতর আহত করেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা অত্যাচার নির্যাতন করি না বরং সরকার বাড়ির লোকজনের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে আছি।
সরকার বাড়ির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সাফায়েত উল্লাহ বলেন, কর্তাবাড়ির একজন মারা গেলে আমাদের কমপক্ষে দুইশ বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট, আগুন দেওয়া হয়। ৫২ বছর যাবত তোফাজ্জল হক তার বংশের লোকজন নিয়ে আমাদেরকে অত্যাচার নির্যাতন করছেন। আমার দুই ভাইকে তারা হত্যা করেছে। তারা হত্যা মামলায় জামিন নিয়ে বাড়িতে এসেই আবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মেহেদি হাসান জানান, মৌটুপী গ্রামের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ৯ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানী জানান, ঘটনার খবর পেয়ে সেনাবাহিনীসহ পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। গ্রামের দুটি বংশের বিবাদ দীর্ঘদিনের। তাদের এসব ঘটনায় একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। এলাকায় যৌথবাহিনী অবস্থান করছে।
রাজীবুল হাসান/এমএন/এমএস