সিরাজগঞ্জ

পল্লি চিকিৎসার আড়ালে অপহরণ ‘বাণিজ্য’ আরাফাতের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৯:৩৫ পিএম, ০৩ মে ২০২৫

পল্লি চিকিৎসার আড়ালে মানুষকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, কিডনি বিক্রি ও জমি লিখে নিতেন নাজমুল হোসেন আরাফাত। নিজ এলাকায় গড়ে তোলেন মিনি ‘আয়নাঘর’। এছাড়াও এলাকায় এমন কোনো অপরাধ নেই যা করতো না আরাফাত বাহিনী।

পাঁচ মাস আরাফাতের আয়নাঘর থেকে সুড়ঙ্গ কেটে বৃহস্পতিবার (১ মে) রাতে দুই বন্দি বেরিয়ে আসলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সোনারাম ও পশ্চিম লক্ষ্মীকোলা গ্রামে দুটি মিনি 'আয়নাঘর' এর সন্ধ্যান পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে চক্রের মূলহোতা নাজমুল হোসেন আরাফাতকে গ্রেফতার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ভুক্তভোগীরা হলেন, আব্দুল জাব্বার (৭৫) ও শিল্পী খাতুন (৪৮)। শিল্পী লক্ষ্মীবিষ্ণু প্রসাদ গ্রামের মুনসুর আলীর স্ত্রী। শুক্রবার তারা স্বজনদের বিষয়টি জানালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে তারা ঘটনাস্থলে যান। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা আরাফাতের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর করে।

নাজমুল হোসেন আরাফাত পশ্চিম লক্ষ্মীকোলা গ্রামের মৃত রেজাউল করিম তালুকদারের বড় ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনিই বড়।

jagonews24

পুলিশ জানায়, তার সঙ্গে ভবন মালিক ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যকারী সদস্য জহুরুল ইসলামের ছেলে সুমন সেখ, ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য শরীফুল ইসলাম ও তার ভাই সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম, হাফিজুল রহমান, পান্না, আরাফাতের দুই ভাই বাঁধন ও লিয়ন এ অপকর্মে সঙ্গে যুক্ত।

স্থানীয়রা জানান, আরাফাত পল্লি চিকিৎসক হলেও তার সঙ্গে বেশকিছু এলোমেলো লোকের সখ্যতা ছিল। তারা দলবল নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। এসব কারণে তার কাছে তেমন রোগী আসতো না। তিনি প্রায় সময় অস্থির ও পেরেশানিতে থাকতেন। তার আয়নাঘর থেকে দুজন মানুষ বের হওয়ার খবরে অবাক হয়েছেন অনেকে।

কথিত ‘আয়নাঘর’ থেকে বের হওয়া শিল্পী খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘পাঁচমাস আগে রাস্তা থেকে আমায় মাইক্রোবাসে তুলে মুখে টেপ ও হাত বেঁধে ফেলে তারা। এক মাস অন্য একটি জায়গায় বন্দি রেখেছিল। পরে ওই ভবনের নিচ তলার ছোট একটি কক্ষে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। আমার এক মাসে আগে আব্দুল জুব্বার নামের এক বৃদ্ধকেও সেখানে রাখা হয়েছিল। তার কাছ থেকে জমি ও কিডনি নিতে চেয়েছিল তারা। আমাকেও কিডনি নেওয়ারও হুমকি দিতো।’

jagonews24

আব্দুল জুব্বার বলেন, ‘আরাফাত কৌশলে মোটরসাইকেলে চড়িয়ে ওই আয়নাঘরে নিয়ে বন্দি করেছিল। কেন বন্দি করেছিল তাকে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জমির খতিয়ান নম্বর ও দলিল কোথায় রেখেছি সেটা জানতে চেয়েছিল। আমি বলি নাই। এজন্য তারা শিকলে হাত-পা বেঁধে রেখেছিল। টানা ২-৩ দিন খাবার দেওয়া হতো না। ডান পায়ের উরুতে ইনজেকশন দিয়ে মাঝেমধ্যে আঘাত করতো আমাকে।’

রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ঘটনা মামলা হয়েছে। ওই পল্লি চিকিৎসক কারাগারে রয়েছেন। অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

এ বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরামুল হোসাইন বলেন, ‘অপর আসামিরা গ্রেফতার হলে ওই কথিত আয়নাঘর রহস্য জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায় বিভিন্ন লোককে তারা বন্দি করে টাকা আদায় করতেন।’

এম এ মালেক/আরএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।