নারায়ণগঞ্জ

বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নিজেরাই নিজেদের শত্রু নেতাকর্মীরা

মোবাশ্বির শ্রাবণ মোবাশ্বির শ্রাবণ , জেলা প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত: ১১:০১ এএম, ২৪ জুন ২০২৫
বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে খুনের ঘটনায় স্বজনদের আহাজারি

দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনৈতিক পরিস্থিতি। নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষে জড়িয়ে যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। যারা দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর তারাই যেন একে অপরের শত্রু হয়েছেন।

বিগত চার মাসেই নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় ৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যেসব হত্যাকাণ্ডে নিজ তথা বিএনপির নেতাকর্মীরাই অভিযুক্ত। পাশাপাশি প্রকাশ্যে অস্ত্র মহড়া, একপক্ষ আরেক পক্ষকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করাসহ এরকম অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। যা প্রতিনিয়তই নারায়ণগঞ্জের কোনো না কোনো এলাকায় ঘটে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আধিপত্যের লড়াইয়ে একরাতেই দুই খুন

গত ২১ জুন দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একই ঘটনায় কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুইপক্ষের দুইজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

নিহতরা হলেন- বন্দরের হাফেজীবাগ এলাকার মৃত সাদেক আলীর ছেলে কুদ্দুস মিয়া (৬০) ও শাহী মসজিদ এলাকার মৃত আব্দুল জলিল মুন্সির ছেলে মেহেদী হাসান (৪২)।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

নিহত কুদ্দুস পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি এবং মেহেদী বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। এই দুই পক্ষই মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশার অনুসারী। তাদের একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী রনি ও জাফর এবং অপর একটি পক্ষের নেতৃত্বে দিচ্ছিলেন মেহেদী হাসান, বাবু সিকদার, বাবু ওরফে জুয়ারি বাবু ও শ্যামল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারা একটি পক্ষ ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে পতনের পরই তারা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যান। সবশেষ দুই পক্ষই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা বলেন, মেহেদী ও রনি ছিল আমার আপন ভাইয়ের মতো। তারা আমার সঙ্গে বিগত ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী হিসেবে বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তাদের মধ্যে কীভাবে কী হয়ে গেলো আমার বুঝে আসছে না।

রূপগঞ্জে ৩ খুন

গত ২৯ মার্চ রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের মধ্যে সংঘর্ষে খুন হন মো. হাসিব (৩২) নামের এক যুবদলকর্মী। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। একইসঙ্গে গত ১১ এপ্রিল রূপগঞ্জের দাউদপুরে ব্যবসা-সংক্রান্ত বিরোধে খুন হন যুবদল কর্মী শান্ত সরকার (২৪)।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সবশেষ গত ১০ জুন রাতে রূপগঞ্জের ভুলতা মাঝিপাড়ায় স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক এক ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে ছোড়া গুলিতে খুন হন ভুলতা ইউনিয়ন যুবদলের কর্মী মামুন ভূঁইয়া। প্রত্যেকটি ঘটনাতেই বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করছেন পরিবারের সদস্যরা।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, যেকোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। কোনো ঘটনা ঘটা মাত্রই আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কে কোন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। অপরাধী হলেই তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়া হচ্ছে। কোনো অপরাধীকে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বিএনপি কোনো সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয় না। বন্দরের ঘটনায় যারা নেতৃত্বে আছে তারা কেউ বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত না। তারা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে এ ধরনের গ্রুপিং করছে। এটার দায় দায়িত্ব তাদের। এটা দলের কোনো দায়িত্ব না। তারা দল করে না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

বিজ্ঞাপন

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, যেখানেই এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে সেখানেই দল তাৎক্ষণিকভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিএনপি সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। আইনগত ব্যবস্থা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরল ঘটনা। আগে কেউ কখনো শোনেনি আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা। অনেক ক্ষেত্রে দলকেও নির্দেশনা দেওয়া হয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।