ইছামতীর প্রাণ ফিরতে বাধা দখলদারদের মামলা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পাবনা
প্রকাশিত: ০৪:৪০ পিএম, ২৪ জুলাই ২০২৫
কচুরিপানায় ছেয়ে আছে ইছামতি। বোঝার উপায় এটি একটি নদী। ছবি-জাগো নিউজ

দেশ স্বাধীনের পর থেকেই দফায় দফায় নেওয়া হয়েছে পাবনার ইছামতী নদী উদ্ধারের উদ্যোগ। তবে নানা জটিলতায় সম্ভব হয়নি।

সবশেষ ২০২৩ সালে নদীটি উদ্ধারে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয় সরকার। এরইমধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় অর্ধেকের বেশি খননকাজ শেষ হয়েছে। তবে দখলদারদের করা মামলায় আবারও থেমে গেছে শহরের পাঁচ কিলোমিটার অংশের কাজ।

সরেজমিনে দেখা যায়, দখল-দূষণে মৃতপ্রায় নদীকে বাঁচাতে ইছামতী পুনঃখনন পুনরুজ্জীবিতকরণ প্রকল্পের আওতায় সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন বিগ্রেডের তত্ত্বাবধানে জেলার গ্রামে গ্রামে চলছে নদী খননকাজ। পূর্বে আতাইকুলা, গয়েশপুর ও মালঞ্চি ইউনিয়নে ময়লা দুর্গন্ধ থাকলেও এখন তাতে বইছে স্বচ্ছ জলরাশি। শহরের বাইরের বিভিন্ন অংশে ব্যাপক গতিতে এগিয়ে চলেছে কাজ। তবে জেলা শহরের নদীর পাঁচ কিলোমিটার অংশের উদ্ধার ও খননকাজ বন্ধ রয়েছে।

ইছামতীর প্রাণ ফিরতে বাধা দখলদারদের মামলা

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র বলছে, পাবনাবাসীর দীর্ঘ আন্দোলনের পর ইছামতি নদী উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে এরপর থেকে দখলদাররা বিভিন্ন সময় মামলা করেছেন অন্তত ৯৮টি। গত ৩ মে শহরের লাইব্রেরি বাজারের পুরাতন ব্রিজের পাশে খননকাজ শুরু হয়। পরে এক মাসে নতুন করে আরও ১০টি মামলার পর দখলদারদের উচ্ছেদ ও খননকাজে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। ফলে আবারও থেমে গেছে নদী উদ্ধারকাজ। এতে নদী উদ্ধার নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। ভেস্তে যেতে পারে এক হাজার ৫৫৪ কোটি টাকার প্রকল্প।

শহরের বাসিন্দা ঈশিতা জাহান জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘শহর বাদে অন্যান্য সব জায়গায় দ্রুতগতিতে খননকাজ চলছে। কিন্তু প্রভাবশালী দখলদারদের মামলায় আবারও শহরের খননকাজ ঝুলে গেলো। এর আগেও এভাবে কাজ বন্ধ হতে দেখেছি। এসব মামলা কি চলতেই থাকবে?’

ইছামতী নদী উদ্ধার আন্দোলনের সভাপতি এসএম মাহবুব বলেন, ‘দখলদারদের দাপটে থেমে থেমে কাজ হচ্ছে। এগুলো আমরা প্রত্যাশা করি না। কারণ এতে সরকারি অর্থ অপচয় হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত এসব মামলা নিষ্পত্তি করে একাধারে দ্রুতগতিতে কাজ করে নদীকে তার প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’

তবে দখলদারদের করা মামলা সরকারের উন্নয়নকাজে বিঘ্ন ঘটানো ছাড়া আর কিছুই নয় বলছেন আইনজীবীরা। পাবনা জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শেখ আব্দুল আজিজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘দখলদাররা নদীর জায়গা দখলে নিয়ে কোনো একভাবে কাগজ তৈরি করেছিলেন। তারা সেগুলো দিয়ে মামলা করেছেন। অথচ বিষয়টি আইনত অচল।’

ইছামতীর প্রাণ ফিরতে বাধা দখলদারদের মামলা

তিনি বলেন, ‘এসব নিয়ে এর আগেও অনেকগুলো মামলা হয়েছিল। পরে সেগুলো উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এখন আবার তারা নতুন করে মামলা করছেন। এগুলো অযথা উন্নয়নকাজের ব্যাঘাত সৃষ্টির জন্য করা হচ্ছে।’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত এ নদী উদ্ধারে নেওয়া প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত। ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। এর আওতায় ১১০ কিলোমিটার নদী খনন করার কথা রয়েছে। এছাড়া শহরাংশে পুরোনো সব সেতু ভেঙে নির্মাণ করা হবে ছোট-বড় ২৩টি দৃষ্টিনন্দন সেতু। উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার পাশাপাশি থাকবে হাঁটার রাস্তা ও ৫৮টি ঘাট। বিভিন্ন গাছ রোপণের পাশাপাশি মনোরম পরিবেশ তৈরিতে নেওয়া হবে নানা উদ্যোগ।

এদিকে মামলা জটিলতা নিরসনে আইন মন্ত্রণালয়কে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে বলে জানিয়েছে পাউবো। দ্রুত ইছামতীকে তার প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি সরকারি সংস্থাটির।

এ বিষয়ে ইছামতী পুনঃখনন পুনরুজ্জীবিতকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘কাজ একেবারে থেমে নেই। কিছু কিছু জায়গায় কাজ চলছে। তবে যে জায়গাগুলোতে মামলা রয়েছে, সেই জায়গাগুলোতে কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আমরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলে যোগাযোগ করছি। দ্রুতই এসব আইনি জটিলতা কাটিয়ে ইছামতীকে উদ্ধার করা হবে।’

আলমগীর হোসাইন নাবিল/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।