রাজশাহী-২
বিএনপির দুর্গ দখলের চেষ্টায় জামায়াত
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উত্তরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন রাজশাহী-২। ‘বিএনপির দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত রাজশাহী সদর আসনটিতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ছাড়া প্রায় সব দলেরই তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ আসনে বিএনপির পরই জায়গা করে নিয়েছে জামায়াত। আগামী নির্বাচনে জামায়াত ও বিএনপি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস এখন থেকেই মিলছে। বিএনপির দুর্গ দখলের চেষ্টায় জামায়াত জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।
তবে স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে খ্যাত জাতীয় পার্টি (জাপা) আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এ আসনে তাদের তৎপরতাও লক্ষণীয়। এর বাইরে বিজেপি, ইসলামী আন্দোলনও সরব।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা আগামী সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক দলীয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছেন। তবে নানাভাগে বিভক্ত বিএনপি। মহানগরীতে বিএনপির দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য। কয়েক বছর ধরে চলছে আহ্বায়ক কমিটি। তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য সম্মেলনের আয়োজন করতে পারেনি। এ সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে বিএনপির দুর্গ দখলের চেষ্টায় জামায়াত।
এই আসনে কে হবেন বিএনপির প্রার্থী সেই নিয়ে শুরু হয়েছে নানান গুঞ্জন। এ আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা রুহুল কবীর রিজভীও রাজশাহী-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে মাঠে একটা কথা ছড়িয়েছে, যা অস্বীকার করেন খোদ রিজভী।
এছাড়া দলটির আরও দু-একজন নেতা রয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায়। ফলে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন কে পাবেন সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে। যদিও দলের স্থানীয় একাধিক নেতাকর্মী বলছেন মিনুতেই রাজশাহীর ভরসা।
দলীয় নেতাকর্মীরা রাজশাহী-২ আসনে মিনুকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে গণসংযোগ শুরু করেছেন। মিনু তার স্বভাবসুলভ অভ্যাস মতো হেঁটে হেঁটে নগরীর সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশলবিনিময় করছেন। যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মানুষের দোয়া চাইছেন। মিনু একটানা তিন মেয়াদে ১৭ বছর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। ২০০১ সালে রাজশাহী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রেকর্ড সংখ্যক ভোট পেয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এ আসনের বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোর ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খালেদ আলী মিঞা ও ১৯৭৯ এর নির্বাচনে বিএনপির সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন জেতেন। সীমানা পরিবর্তন হলে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ, এরপর ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত নির্বাচনে টানা বিএনপি প্রার্থীর জয় হয়।
- আরও পড়ুন
- জামায়াতের প্রার্থী নায়েবে আমির, বিএনপিতে এগিয়ে শরিফ-তারেক
- দুর্গ উদ্ধারের লড়াইয়ে জামায়াত, প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি
এর মধ্যে ১৯৯১, ১৯৯৬ এর ফেব্রুয়ারি ও জুনের দুই নির্বাচনেই বিএনপির কবির হোসেন জেতেন। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির মিজানুর রহমান মিনু জয় লাভ করেন। এরপর ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের টানা তিনটি নির্বাচনে জয়ী হন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা। এর মধ্যে দুটি নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা ও রাতের ভোট হিসেবে বিতর্কিত ছিল। এরপর ২০২৪ সালের আরেক বিতর্কিত ডামি নির্বাচনে এ আসন থেকে জয়া হন আওয়ামী লীগের শফিকুর রহমান বাদশা।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী-২ আসনে দলটির রাজশাহী মহানগরীর নায়েবে আমির ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে সংসদ সদস্য প্রার্থী ঘোষণা করে। এরইমধ্যে জামায়াতের নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। আগামী নির্বাচন কেন্দ্র করে জামায়াতের নেতাকর্মীরা নগরীর থানা, ওয়ার্ড ও মহল্লা পর্যায়ে নিবিড়ভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। দলবেঁধে করছেন গণসংযোগ।
সবদিক বিবেচনায় এই আসনে বিএনপির ভিত অনেক শক্ত। প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচনগুলোতে এই আসনে টানা জয়ের ইতিহাস আছে দলটির। এ কারণে আসনটিকে ‘বিএনপির দুর্গ’ বলা হয়। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক অবস্থান শক্ত হলেও তাদেরও প্রার্থী অতীতের কোনো নির্বাচনে জিততে পারেননি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা আগামী সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক দলীয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছেন। তবে নানাভাগে বিভক্ত বিএনপি। মহানগরীতে বিএনপির দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য। কয়েক বছর ধরে চলছে আহ্বায়ক কমিটি। তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য সম্মেলনের আয়োজন করতে পারেনি। এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে বিএনপির দুর্গ দখলের চেষ্টায় জামায়াত।
রাজশাহী বিএনপির সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু গত ৫ আগস্টের পর থেকে নির্বাচনমুখী তৎপরতা জোরদার করেছেন। মিনু সর্বস্তরের বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলীয়, সাংগঠনিক ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীরা রাজশাহী-২ আসনে মিনুকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে গণসংযোগ শুরু করেন। মিনু তার স্বভাবসুলভ অভ্যাস মতো হেঁটে হেঁটে নগরীর সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন। যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মানুষের দোয়া চাচ্ছেন। মিনু একটানা তিন মেয়াদে ১৭ বছর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। ২০০১ সালে রাজশাহী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রেকর্ড সংখ্যক ভোট পেয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
- আরও পড়ুন
- ১৮ বছর পর ফেরা তুহিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত
- লাখের বেশি হিন্দু ভোটারের মন জয়ে তৎপর বিএনপি-জামায়াত
মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘আমি সবসময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে থেকেছি। সবসময় দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। ৯১ সাল থেকে আমি মেয়র। ২০০১ সালে আমি এমপি। সব সময় মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। মানুষের ভালোবাসাই বড় কথা। আগামী নির্বাচন উপলক্ষে মানুষের বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। এখন মনোনয়ন নিয়ে দলের হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবে।
অন্যদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা রুহুল কবীর রিজভীও রাজশাহী-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে সক্রিয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী রাজশাহীর স্থানীয় না হলেও তার রাজনৈকি জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে রাজশাহীতে। ফলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা ও সদস্যসচিব মামুন অর রশিদসহ স্থানীয় বেশকিছু প্রভাবশালী নেতা তার পাশে রয়েছেন।
যদিও এই আসনে নিজের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেন রিজভী। রাজশাহী-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে জানতে চাইলে রুহুল কবীর রিজভী জাগো নিউজকে বলেন, এগুলো বাজে কথা। আমি কোনো আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বা প্রার্থী নই।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী-২ আসনে দলটির রাজশাহী মহানগরীর নায়েবে আমির ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে সংসদ সদস্য প্রার্থী ঘোষণা করে। এরইমধ্যে জামায়াতের নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। আগামী নির্বাচন কেন্দ্র করে জামায়াতের নেতাকর্মীরা নগরীর থানা, ওয়ার্ড ও মহল্লা পর্যায়ে নিবিড়ভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। দলবেঁধে করছেন গণসংযোগ।
রাজশাহী মহানগরীর নায়েবে আমির ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি ভালোই সাড়া পাচ্ছি। জামায়ত ঘরানার বাইরে থেকেও অনেকেই ফোন করেছেন। যারা দলীয়ভাবে সাপোর্ট করেন না তারাও সাড়া দিচ্ছেন, ব্যস্তিগতভাবে ফোনও করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টা করেছি। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সব মিলে মানুষের একটা প্রত্যাশা আছে। আমি মনে করে আমি হ্যাপি। নির্বাচনে যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। বিএনপির মিনু কিংবা রিজভী যিনিই আসবেন তাকেই ফেস করবো।’
রুহুল কবীর রিজভী-ফাইল ছবি
এদিকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে খ্যাত জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না সে বিষয়টি। জাপার পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপনের নাম সামনে এসেছে। গত নির্বাচনেও তিনি এ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। এবারও তিনি প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।
সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘আমি রাজশাহী-২ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এরইমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে দলীয়ভাবে কার্যক্রম শুরু করেছেন।’
- আরও পড়ুন
- ৪ তারিখের পর নির্বাচনের দিন ঘোষণা, আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
- কিছু দল পণ করেছে পিআর ছাড়া নির্বাচনে যাবে না
এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) রাজশাহী মহানগরের আহ্বায়ক সরদার জুয়েল হোসেন এবার নির্বাচন করবেন। এরইমধ্যে তিনি সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়ানোসহ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
অন্যদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রাজনীতির মাঠে সরব রয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এ দল থেকে এবার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নগর সহ-সভাপতি আলহাজ ফাইসাল হোসেন মনিরের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি গত নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
তবে এ আসনে তিনবার জয় পেয়েও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না তা নিয়ে দ্বিধায় আছে বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের অন্যতম সঙ্গী ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটির কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
রাজশাহী-২ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬১৮। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩০০ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৮৯ হাজার ৩০৯। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৯ জন। এই আসনে এবার নতুন ভোটার ৪ হাজার ৪৯৬। এখানে সবচেয়ে বেশি ভোটার তরুণ। মূলত তাদের ভোটেই জয়-পরাজয় নিশ্চিত হবে।
এসএইচ/এসএইচএস/এমএফএ/জিকেএস