কুয়াকাটা

উপকূলীয় মানুষের জ্বালানির জন্য ভরসা সমুদ্রে ভেসে আসা সুন্দরী ফল

আসাদুজ্জামান মিরাজ আসাদুজ্জামান মিরাজ , উপজেলা প্রতিনিধি, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
প্রকাশিত: ০৪:০২ পিএম, ০২ আগস্ট ২০২৫
সৈকত থেকে সুন্দরী ফল সংগ্রহ করছে এক কিশোর/ছবি-জাগো নিউজ

সুন্দরবনের সুন্দরী গাছের ফল দেখতে অনেকটা ডিম্বাকৃতির। এটি ঝরে পড়ার পর সমুদ্রের নোনা জলে ভেসে উপকূলীয় এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে সৈকত থেকে এগুলো সংগ্রহ করেন উপকূলীয় এলাকার লোকজন, বিশেষ করে নারীরা। রোদে শুকিয়ে ভেতরের বিচিটা ফেলে জ্বালানি কাজে ব্যবহার করছে শত শত পরিবার।

সুন্দরী ফল দেখতে বাদামি রঙের হয়। এর গায়ে লম্বা খাঁজকাটা দাগ থাকে। ফলের ভেতরে বীজ থাকে, যা গাছ থেকে পড়ার আগেই অঙ্কুরিত হতে শুরু করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গঙ্গামতি, লেম্বুরবন, তিন নদীর মোহনা উপকূলীয় এলাকার জেলে পরিবারগুলো একসময় তাদের জ্বালানি হিসেবে জঙ্গলের ওপর নির্ভরশীল থাকতো। বছরে বিভিন্ন সময় জলোচ্ছ্বাসে নষ্ট হওয়া গাছগুলো সংগ্রহ করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতেন তারা। আবার অনেক সময় মরে যাওয়া গাছগুলোকেও তারা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে রান্নার কাজ করতেন।

উপকূলীয় মানুষের জ্বালানির জন্য ভরসা সমুদ্রে ভেসে সুন্দরী ফল

গত কয়েক বছরে বিভিন্নভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে সেই বন। তাই সংকট তৈরি হয়েছে উপকূলীয় মানুষের জ্বালানিতে। এই অবস্থায় সুন্দরবন থেকে ভেসে আসা সুন্দরী ফলগুলো অনেকটা জ্বালানি সংকট দূর করতে সাহায্য করছে। ওই এলাকায় নারী-পুরুষেরা এগুলো সংগ্রহ করে নিজেদের চাহিদা মেটাচ্ছেন।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের লেম্বুরবন এলাকার বাসিন্দা নুরুন্নাহার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই এলাকা যখন জঙ্গল ছিল, তখন আমরা জঙ্গল থেকে আমাদের লাকড়ি সংগ্রহ করতাম। মরা গাছ, ভেঙে পড়া ডাল, ভেঙে যাওয়ার গাছগুলোকে সংগ্রহ করে আমরা রান্নার কাজে ব্যবহার করতাম। কিন্তু এই গাছগুলো এখন আর নেই। বন ধ্বংস হয়ে গেছে, সমুদ্রে চলে গেছে। তাই আমাদের রান্না করতে হয় গ্যাস দিয়ে বা লাকড়ি কিনে, যা আমাদের মতো গরিব পরিবারের পক্ষে সম্ভব না। তাই সুন্দরী ফলগুলোকে সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে জ্বালানি কাজে ব্যবহার করছি।’

উপকূলীয় মানুষের জ্বালানির জন্য ভরসা সমুদ্রে ভেসে সুন্দরী ফল

কুয়াকাটা সৈকতের ট্যুর গাইড সোলায়মান বিশ্বাস বলেন, ‘৩০ কিলোমিটার সৈকতে আমাদের যাতায়াত বেশি। এই ৩০ কিলোমিটারের বিভিন্ন জায়গায় দেখি ফলগুলো এসে স্তূপ হয়ে আছে। এগুলো সংগ্রহ না করলে সমুদ্রে আবার ভেসে যাবে। এলাকার অনেক মানুষ এগুলো সংগ্রহ করে রান্নার কাজ ব্যবহার করেন।’

উপকূলীয় মানুষের জ্বালানির জন্য ভরসা সমুদ্রে ভেসে সুন্দরী ফল

কুয়াকাটা বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাকৃতিকভাবে বন কমে যাওয়ায় জ্বালানি সংকট তৈরি হচ্ছে। সেখানে বিকল্প হিসেবে অনেকে সুন্দরী ফল ব্যবহার করছেন। এটা প্রকৃতির সিস্টেম।’

আসাদুজ্জামান মিরাজ/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।