তিন পুলিশ কর্তার আধিপত্যেই সিএমপি অকেজো
তিন পুলিশ কর্তার আধিপত্য স্থায়ী করতেই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশকে (সিএমপি) অকেজো করা হয়েছে। অভিযোগ আছে, চৌকস ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সিএমপি থেকে একে একে বদলি করানোর ক্ষেত্রে নগর পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। বর্তমানে সিএমপিতে অনেকটা স্থবিরতা বিরাজ করছে বলে স্বীকার করেছেন কমিশনার ইকবাল বাহার নিজেও।
নিজেদের আধিপত্য নিরঙ্কুশ করতে সম্প্রতি বদলি হয়ে আসা কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের বদলি করে দেয়ার ক্ষেত্রে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে দু’জন উপ-কমিশনার পদমর্যাদারসহ তিনজনের সিন্ডিকেট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএমপি ডিবিতে কর্মরত ছিলেন এমন এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গত এক বছরে সিএমপি ডিবিকে ভেঙে তছনছ করে দেয়া হয়েছে। ডিবি থেকে কৌশলে সরিয়ে দেয়া হয়েছে কুসুম দেওয়ানকে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সিন্ডিকেটের তিনজনের একজনের উক্তি এ রকম “নো কেনস্টেবল, নো এসআই, নো ওসি, নো এসি, আই এম অনলি ওয়ান।” তিনজনের সিন্ডিকেটের এই প্রধানের কারণেই মূলত সিএমপির আজ এ বেহাল দশা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তা বলেন, টিমওয়ার্ক করতে গেলে মাথার উপর ছায়া থাকতে হয়। বনজ স্যার, কুসুম স্যাররা আমাদের মাথার উপর ছায়া হয়েছিলেন। এখন যারা আছেন, তারা না বোঝেন অপরাধীর মনস্তত্ব কিংবা চট্টগ্রামের পরিস্থিতি, না পারেন কোনো নির্দেশনা দিতে।
দক্ষ, আন্তরিক এবং চৌকস এসব কর্মকর্তাকে হারিয়ে সিএমপি এখন পরিণত হয়েছে অনেকটা নিধিরাম সর্দারে। এখন অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধী গ্রেফতার দূরের কথা, এর কারণ উদঘাটন করতেই হিমশিম খাচ্ছেন সিএমপির কর্মকর্তারা। এর সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম ওরফে মিতু আক্তারের নির্মম হত্যাকাণ্ড।
এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার মো. ইকবাল বাহার বলেন, সরকারি চাকরি বদলির চাকরি। তারপরও দক্ষ কর্মকর্তার বদলিজনিত কারণে তাদের অভাব আমাদের কিছুটা ভোগাচ্ছে। কাজকর্মে কিছুটা স্থবিরতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই স্থবিরতা খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না। সিএমপিকে গতিশীল করার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
রোববার পুলিশ মহাপরিদর্শকের সামনে সুধী সমাবেশে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি প্রশ্ন করেছিলেন, কার স্বার্থে সিএমপি থেকে এসব অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের অন্যত্র সরিয়ে দেয়া হলো?
চৌকস এসব কর্মকর্তার টেবিলের সামনে বসিয়ে সেই অপরাধের রহস্য উন্মোচনের খুঁটিনাটি পরিকল্পনা নিতেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল আক্তার, এস এম তানভির আরাফাত কিংবা মোস্তাক আহমদের মতো কর্মকর্তারা। তাদের মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকতেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (বর্তমানে ডিআইজি) প্রকৌশলী বনজ কুমার মজুমদার। ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে তিনি বর্তমানে আছেন পিবিআই হেডকোয়ার্টারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপকমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, এখনো সিএমপিতে কয়েকজন চৌকস দক্ষ কর্মকর্তা আছেন। কিন্তু তাদের তো দক্ষ সহযোগী নেই। অপরাধ দমনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে টিমওয়ার্ক। সেই টিমওয়ার্কই তো নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। পেশাদার অফিসারদের ক্ষমতাহীন করে ফেলা হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতির বক্তব্যের পর বদলি হওয়া চার এসআই ফের সিএমপিতে ফিরছেন। রোববার তাদের চারজনকে সিএমপিতে স্ট্যান্ড রিলিজের আদেশ জারি করেছেন পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (প্রশাসন) বিনয় কৃষ্ণ বালা। তাদের অবিলম্বে সিএমপিতে যোগদানের জন্য বলা হয়েছে। চার চৌকস কর্মকর্তা হলেন- এসআই মো. আফতাব হোসেন, রাজেশ বড়ুয়া, সন্তোষ কুমার চাকমা এবং এসআই শিবেন বিশ্বাস।
তবে প্রশ্ন থাকে যে তিনজনের সিন্ডিকেটের মাঝে ছায়াবিহীন তারা কতটুকু স্বাধীন এবং পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করতে পারবেন।
জীবন মুছা/জেএইচ/এমএস