টাঙ্গাইলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২৭৭ শিক্ষকের পদ শূন্য

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: ০৩:০২ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ফাইল ছবি

টাঙ্গাইল জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ হাজার ২৭৭টি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে ৮৩১ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এবং ৪৪৬টি সহকারী শিক্ষকের পদ খালি। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ ও পদন্নোতিসহ নানা জটিলতায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় ১ হাজার ৬২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে প্রধান শিক্ষক পদে সদর উপজেলায় ১৬৩ জনের মধ্যে ৬৬ জনের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া ভূঞাপুর উপজেলায় ১১০ জনের মধ্যে ৬৯, ধনবাড়ী উপজেলায় ৮৫ জনের মধ্যে ৩৪ জন, ঘাটাইল উপজেলায় ১৭২ জনের মধ্যে ১০৩, সখীপুর উপজেলায় ১৪৭ জনের মধ্যে ৩৪, নাগরপুর উপজেলায় ১৫৬ জনের মধ্যে ৯৭, গোপালপুর উপজেলায় ১৬১ জনের মধ্যে ১২০, বাসাইল উপজেলায় ৭৯ জনের মধ্যে ২৭, দেলদুয়ার উপজেলায় ১০০ জনের মধ্যে ৬২, মির্জাপুর উপজেলায় ১৭০ জনের মধ্যে ৪২, কালিহাতী উপজেলায় ১৭০ জনের মধ্যে ১১৪, মধুপুর উপজেলায় ১১০ জনের মধ্যে ৬৩ জনের পদ শূন্য রয়েছে। কর্মরত আছেন ৭৯২ জন প্রধান শিক্ষক।

জেলায় সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ সংখ্যা ৯ হাজার ৬০টি। এরমধ্যে সখীপুর উপজেলায় ১৮, ঘাটাইল উপজেলায় ৫৯, গোপালপুর উপজেলায় ৬২, বাসাইল উপজেলায় ৯, সদর উপজেলায় ৩৫, দেলদুয়ার উপজেলায় ৪১, মির্জাপুর উপজেলায় ২৯, কালিহাতী উপজেলায় ৬৫, মধুপুর উপজেলায় ১৭, ভূঞাপুর উপজেলায় ৪৬, ধনবাড়ী উপজেলায় ১৪ ও নাগরপুর উপজেলায় ৫১ জনের পদ শূন্য রয়েছে। কর্মরত আছেন ৮ হাজার ৬১৪ জন সহকারী শিক্ষক।

ঘাটাইল উপজেলার খাজনাগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০৭। শিক্ষক পদসংখ্যা ৫ জন হলেও কর্মরত আছেন মাত্র ২ জন। অফিশিয়াল অনেক নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ব্যস্ত থাকতে হয়। বাকি একজন শিক্ষকের পক্ষে পাঠদান করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছে। তেমনি বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতায় তারা পিছিয়ে পড়ছে। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাচ্ছে। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই।

আরও পড়ুন:
মনপুরার চরাঞ্চলে শিক্ষক সংকটে চলছে না পাঠদান
৩ দাবিতে আমরণ অনশনের ঘোষণা প্রাথমিকের শিক্ষকদের
শিক্ষার্থীতে ঠাসা কিন্ডার গার্টেন, ফাঁকা সরকারি বিদ্যালয়

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি জেলা শাখা সাধারণ সম্পাদক বাশিরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যপূরণ এবং মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। একজন শিক্ষককে সপ্তাহে প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি ক্লাস নিতে হয়। শিক্ষক ঘাটতি থাকা বিদ্যালয়ে ৩৫ থেকে ৪০টি নিতে হয়। ফলে শিক্ষকের শ্রেণীকক্ষে শেখানো কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত সময় ও শিক্ষার্থীর শিখন নিশ্চিত করা যায় না। বেইজ লাইন সার্ভে পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব। প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা হবে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাহাব উদ্দিন বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে বিদ্যালয়গুলোয় পাঠদানসহ নানা সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রান্তিক ও দুর্গম অঞ্চলে। সংযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষক সমন্বয় করে সমাধান করার চেষ্টা চলছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সরকারকে শূন্যপদ পূরণে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মঠ এবং মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। প্রান্তিক পর্যায়ে শিক্ষকতা করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতার নিয়ম আনতে হবে। সেইসঙ্গে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি দিয়ে সহকারী শিক্ষকের পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।

আব্দুল্লাহ আল নোমান/এনএইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।