জানতা ব্যাংক

সোয়া কোটি টাকা উত্তোলন করে নিজের ঋণ পরিশোধ করলেন ম্যানেজার!

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশিত: ০৯:৪৬ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
অভিযুক্ত পাকশী শাখার ম্যানেজার খালেদ সাইফুল্লাহ

পাবনার ঈশ্বরদীতে জনতা ব্যাংকের দুটি শাখা থেকে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা উত্তোলনের পর আটদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন জনতা ব্যাংক পাকশী শাখার ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) খালেদ সাইফুল্লাহ। ব্যাংকের ওই টাকায় তিনি নিজের ঋণ পরিশোধ করেছেন বলে জানা গেছে।

গত ৫ অক্টোবর দুপুরে জনতা ব্যাংক ঈশ্বরদী করপোরেট শাখা ও দাশুড়িয়া শাখা থেকে উত্তোলিত এক কোটি ৩০ লাখ টাকা নিয়ে জনতা ব্যাংক পাকশী শাখায় যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন খালেদ সাইফুল্লাহ। তিনি ঈশ্বরদী পৌর এলাকার আব্দুল গফুর শেখের ছেলে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, খালেদ সাইফুল্লাহ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। রাজশাহী শহরে ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনি ফ্ল্যাট কেনেন। এতে তিনি প্রায় দেড় কোটি টাকা ঋণে পড়ে যান। পাওনাদারদের চাপে টাকা পরিশোধ করতে জনতা ব্যাংক দাশুড়িয়া ও ঈশ্বরদী করপোরেট শাখা থেকে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন তিনি।

জনতা ব্যাংক ঈশ্বরদী করপোরেট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. মোহছানাতুল জানান, ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ক্যাশ রেমিট্যান্সের জন্য প্রয়োজনীয় ভাউচার ও রেজিস্টারে সই সম্পন্ন করার পর ৫ অক্টোবর বেলা পৌনে ১২টার দিকে খালেদ সাইফুল্লাহর কাছে এক কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয়। এর আগে তিনি জনতা ব্যাংক দাশুড়িয়া শাখা থেকে ৩০ লাখ সংগ্রহ করেন। পরে তিনি আনসার সদস্য মাহবুবকে সঙ্গে করে পাকশী শাখার উদ্দেশ্যে প্রাইভেটকারযোগে রওয়ানা দেন। গাড়িটির চালক ছিলেন ইসমাইল হোসেন। এরপর থেকে মোবাইলফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান খালেদ সাইফুল্লাহ।

বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জনতা ব্যাংক পাকশী শাখার ব্যবস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহ রাজশাহীতে ফ্ল্যাট ক্রয়, তেলের ব্যবসার কথা বলে ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহক, প্রতিবেশী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এই কারণে সুকৌশলে ঋণ পরিশোধের জন্য তিনি জনতা ব্যাংকের দুটি শাখা থেকে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন।

টাকা উত্তোলনের ওইদিনই পাবনা জজ কোর্টের আইনজীবী ঈশ্বরদীর শেরশাহ রোডের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট হেদায়েতুল্লাহ হককে ১৫ লাখ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকে এক লাখ টাকা, বিএনপি নেতা ফুল ব্যবসায়ী জুয়েল ও আরমানকে দুই লাখ টাকা, উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডার পাকুড়িয়ার গ্রামের ডালিয়া বেগমকে পাঁচ লাখ টাকা, পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইস্তা এলাকার সিএনজিচালক হাফিজুল ইসলামকে ৯ লাখ টাকা পরিশোধ করেন।

এছাড়া শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে এক ব্যবসায়ীকে দুই লাখ টাকাসহ কারুপল্লী রেস্টুরেন্টে বসে চারজনের পাওনা পরিশোধ করেন খালিদ সাইফুল্লাহ। থানা গেট সংলগ্ন বাটার ফ্লাই কোম্পানির শোরুমে ও শহরের হান্নানের মোড়ের মুদিসহ বেশ কিছু পাওনাদারকে টাকা দেন। সূত্রমতে, যাদের টাকা দেওয়া হয়েছে তারা সবাই খালেদ সাইফুল্লাহ কাছে পাওনাদার।

একটি সূত্র জানায়, রাজশাহী শহরে খালেদ সাইফুল্লাহ ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ফ্ল্যাট কিনেছেন। ব্যাংক থেকে আত্মসাতকৃত টাকা থেকেই ওই ফ্ল্যাটের বকেয়া টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

বাটার ফ্লাই কোম্পানির ঈশ্বরদী শাখার ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) আবু সায়েম জানান, ছুটি থাকায় ঘটনার দিন তিনি শোরুমে ছিলেন না। তাদের শোরুমের সঙ্গে খালেদ সাইফুল্লাহ লেনদেন রয়েছে। সে কারণে তিনি শোরুমে আসতে পারেন।

খালেদ সাইফুল্লাহ কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা গ্রহণকারী উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডার পাকুড়িয়া এলাকার ডালিয়া খাতুন জানান, ম্যানেজার খালেদ সাইফুল্লাহর কাছে তার ১২ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। সেই টাকার বিপরীতে ওইদিন পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করেন।

বিএনপি নেতা ফুল ব্যবসায়ী জুয়েল জানান, প্রতিবেশী হওয়ায় খালেদ সাইফুল্লাহ তার কাছে এক লাখ টাকা ধার নিয়েছিলেন। আরমান নামের আরেকজনের কাছ থেকেও এক লাখ টাকা ধার নিয়েছিলেন। তাদের দুজনের ধারের টাকা পরিশোধের জন্য তার হাতে দুই লাখ টাকা দেন খালেদ সাইফুল্লাহ।

তবে ৯ লাখ টাকা গ্রহণকারী সিএনজিচালক হাফিজুল ইসলাম এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

পাবনা জজকোর্টের আইনজীবী হেদায়েতুল্লাহ হক জানান, খালেদ সাইফুল্লাহর বাড়ি তার বাড়ির পাশে। সুসম্পর্কের জের ধরে তেলের ব্যবসার কথা বলে তার কাছ থেকে খালেদ সাইফুল্লাহ বেশ কিছু টাকা ধার নিয়েছেন। সেই ধারের টাকার একটি অংশ হিসেবে কিছু টাকা সেদিন তার স্ত্রীর কাছে দিয়ে গেছেন।

জনতা ব্যাংক ঈশ্বরদী করপোরেট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. মোহছানাতুল জানান, ব্যাংকের টাকা নিয়ে আত্মগোপনে যাওয়া পাকশী শাখার ব্যবস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহকে খুঁজে বের করতে তিনটি দল মাঠে কাজ করছে। তাকে ধরতে পারলেই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানা যাবে।

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ স ম আব্দুন নূর বলেন, বিষয়টি থানার এখতিয়ারভুক্ত না হওয়ায় ব্যবস্থা নিতে দুদকে অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পাবনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সাধন সুত্রধর জানান, ব্যাংকের এক কোটি ৩০ লাখ টাকা নিয়ে নিখোঁজ থাকা ব্যবস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগটি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নির্ধারণ হলেই তদন্ত শুরু করা হবে।

শেখ মহসীন/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।