ইছামতী-পদ্মা ইজারা দিচ্ছে জেলা প্রশাসন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪:৪৫ পিএম, ০২ নভেম্বর ২০২৫

গত বছর ৩১টি নদীর অংশকে বদ্ধ জলাশয় দেখিয়ে ইজারা দেওয়ার চেষ্টা করে পাবনা জেলা প্রশাসন। সমালোচনা ও আইনি নোটিশের মুখে পরে তা বন্ধ করা হয়। তবে আবারও একই পথে হাঁটছে প্রশাসন। সম্প্রতি ২৬টি জলাশয় ইজারা আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইছামতী ও পদ্মাসহ চারটি নদীর অংশও রয়েছে। এতে ইছামতী ও পদ্মা ইজারা জেলা প্রশাসন ইজারা দিচ্ছে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, গত বছরের ১৪ জানুয়ারি ৬৩টি জলাশয় ইজারা দেওয়ার আরেকটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পাবনা জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ৩১টি ছিল বিভিন্ন নদীর অংশ। গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) আইনি নোটিশ পাঠানোর জেরে প্রশাসন নদীর অংশ ইজারা দেওয়া বন্ধ করে। আবারও চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর জেলা প্রশাসন ৮টি উপজেলার ২৬টি জলাশয় ছয় বছরের জন্য ইজারা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এসব জলাশয়ের মধ্যে চারটিই নদীর অংশ। যার মধ্যে রয়েছে জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইছামতি ও পদ্মা নদীর অংশ।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, পাবনা সদর উপজেলার পদ্মার কোল (পদ্মা নদীর একটি শাখা) এর ২১ একর এলাকা এবং সাঁথিয়া উপজেলার তিনটি স্থানে ইছামতি নদীর ১০৭ একর এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গত ২০ অক্টোবর থেকে আবেদন শুরু হয়েছে। আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ইজারা প্রত্যাশীরা অনলাইনে আবেদন জমা দিতে পারবেন।

এ বিষয়ে বড়াল রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বলেন, প্রশাসন রাজস্ব বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে এক ধরনের চতুরতার মধ্য দিয়ে নদী ইজারা দেয়। এগুলো অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অনৈতিক কাজ। কতটুকু রাজস্ব আসে? তার বিপরীতে সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আসলে এখানে গোপন আর্থিক স্বার্থযুক্ত থাকে বলেও সন্দেহ হয়। এ কারণে তারা আইনেরও তোয়াক্কা করে না।

ইছামতী-পদ্মা ইজারা দিচ্ছে জেলা প্রশাসন

এ পদক্ষেপের সমালোচনা করে বেলার রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমন্বয়ক তন্ময় সান্যাল বলেন, ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারির আদালতের রায়ের মাধ্যমে দেশের সব নদীকে ‘আইনি ব্যক্তি’ বা ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী নদীতে প্রবেশাধিকার কেউ সীমিত করতে পারে না বা রাজস্ব আয়ের জন্য নদীর কোনো অংশ বা শাখা ইজারা দেওয়া যায় না। অর্থাৎ বিদ্যমান আইনে নদীর কোনো অংশ ইজারা দেওয়ার সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বদ্ধ জলাশয় ইজারা দেওয়ার জন্য এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ২০ একরের বেশি আয়তনের তালিকাভুক্ত জলাশয় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইজারা দেওয়া হচ্ছে।

নদীর অংশ ইজারার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে কেন, এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, এগুলো দেশের বদ্ধ জলাশয়ের তালিকায় আগে থেকেই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

পাবনার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ইছামতি নদীর একটি অংশ জলমহাল হিসেবে নিবন্ধিত, তাই জেলা প্রশাসন সেটি ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। একইভাবে পদ্মার কোলও ইজারা দেওয়া হচ্ছে, যদিও এটি পদ্মা নদীরই অংশ এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক মাছ ধরার স্থান।

আলমগীর হোসাইন নাবিল/এমএন/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।