শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বৈঠাকাটা ভাসমান হাট

মোঃ তরিকুল ইসলাম মোঃ তরিকুল ইসলাম , জেলা প্রতিনিধি পিরোজপুর
প্রকাশিত: ০৭:০৭ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বৈঠাকাটার ভাসমান হাট। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই বেলুয়া নদীর মোহনায় জমে ওঠে শত শত নৌকার সমাবেশ। সবজি, চারা, নাস্তা থেকে শুরু করে নিত্যপণ্য-সবকিছুর বেচাকেনা চলে নৌকার ওপরই। দুই শতাব্দীর ঐতিহ্য বহন করা এই হাট এখন শুধু কৃষিপণ্যের পাইকারি কেন্দ্রই নয়, বরং নদীবর্তী মানুষের জীবিকা আর পর্যটনের মিলনমেলা। ভাসমান এই বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে এখানকার অর্থনীতি।

জানা গেছে, এখানকার চাষিরা নিজের উৎপাদিত সবজি নৌকায় তুলে সূর্যের আলো ফোটার আগেই বেলুয়া নদীর বৈঠাকাটার ভাসমান হাটে নিয়ে যান। হাটে মিষ্টি পান থেকে সকালের নাস্তাও পাওয়া যায়। সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত চলে এই হাট।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নাজিরপুরের বেলুয়া নদীর মোহনায় দূর থেকে তাকালে মনে হবে এখানে গড়ে উঠেছে থাইল্যান্ডের মতো কোনো ভাসমান বাজার। উপজেলার আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নৌকায় ও ট্রলারে আসে বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য। সূর্য ওঠার আগেই শুরু হয় এখানের বেচাকেনা। কৃষি পণ্যের ওপর গড়ে উঠেছে ভাসমান এই বাজার। বৈঠাকাটার আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা এসে ক্রয় করতে থাকে এ পণ্য। গোপালগঞ্জ, বানারীপাড়া, স্বরূপকাঠি, ইন্দেরহাটসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতা বিক্রেতা আসে এই হাটে। এ অঞ্চলের মানুষের চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ বাহন নৌকা। তাই এই নৌকাতেই গড়ে উঠেছে ভাসমান এই বাজার। এই বাজারে ভাসমান ভাতের হোটেল, সকালের নাস্তা, চা-বিস্কিটসহ বিভিন্ন রকমের খাবারের দেখা মেলে নৌকাতেই।

পিরোজপুরে শতবর্ষী ভাসমান হাট

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিহাঁটেই দেখা মেলে বিদেশি পর্যটকদের। নজর করা চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক আসে এখানে। পর্যাপ্ত আবাসিক ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকদের প্রায়ই পড়তে হয় নানান সমস্যায়। প্রশাসন যদি পর্যটক বিষয়ের উপর লক্ষ্য রেখে পর্যাপ্ত আবাসিক ব্যবস্থা গড়ে তোলে, তাহলে এই ভাসমান বাজারটি সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।

সবজি বিক্রেতা রুস্তম আলী বলেন, আমাদের বৈঠাকাটার বাজার অনেক পুরনো বাজার। পিরিজপুর জেলার ভিতর সর্বশ্রেষ্ঠ বাজার এই বৈঠাকাটা। বৈঠাকাটা বাজার ১০০ বছরেরও বেশি পুরানো‌। এখানে বিভিন্ন প্রকারের মালামাল ভাসমান অবস্থায় বেচাকেনা হয়। যত প্রকারের সবজি আছে সব এখানে পাইকারি বিক্রি হয়। প্রতি শনিবার এবং মঙ্গলবার এই হাট বসে। এখানে সবজি ও সবজির চারা বিক্রি হয়। শশা, জিঙ্গা, পটল, মিষ্টি কুমড়াসহ যত পদের সবজি আছে সব এইখানে বেচা বিক্রি হয়।

আরও পড়ুন:
মৌলভীবাজারে অস্তিত্ব নেই ১৯২ বিলের
মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র এখন ‌গো-চারণ ভূমি

কাঁচামাল ব্যবসায়ী শাহজাহান শেখ বলেন, আমরাই বাজারে কাঁচামালের ব্যবসা করি। আমরা যা শুনি, এই হাট একশো, দেড়শো বছরের পুরানো। আমরা ছোটকাল থেকেই এই বাজারে ব্যবসা করি। মৌসুমে যে পণ্য পাওয়া যায় সেগুলোই এখানে বিক্রি হয়। আমাদের এখানে সড়ক পথে যাতায়াত কম, আমাদের সবকিছুই হয় নৌকাতে।

পিরোজপুরে শতবর্ষী ভাসমান হাট

নারিকেল ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বলেন, আমি ডাব ও নারকেলের ব্যবসা করি। এখানে পাইকারি হাট, এখান থেকে কিনে আরতে পাঠাই। আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে নারকেল এবং ডাব এখানে বিক্রি করতে আসে খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাদের থেকে কিনে আমরা ঢাকা চট্টগ্রামের বিভিন্ন মোকামে পাঠাই। এখানে সবাই নৌকায় করে পণ্য নিয়ে আসে।

সবজি ব্যবসায়ী কায়সার আহমেদ বলেন, আমি এই বাজারে ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করি। এখানে নৌকায় করে বিভিন্ন ধরনের সবজি নিয়ে আসে সেগুলো কিনে বিভিন্ন আরতে পাঠাই। নৌকার পাশাপাশি যদি এখানে সড়ক পথ ভালো থাকতো তাহলে এখানের ব্যবসায়ীরা আরও বেশি লাভবান হত।

পিরোজপুরে শতবর্ষী ভাসমান হাট

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সৌমিত্র সরকার বলেন, পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরের বৈঠাকাটার ভাসমান বাজারে বিভিন্ন ধরনের শাক সবজির চারাসহ কৃষিপণ্য ক্রয় বিক্রয় হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এখানকার কৃষি পণ্য বিক্রি হয়। ভাসমান বাজারে জেলার বাইরে থেকে পাইকাররা এসে পণ্য কিনে নিয়ে যায়। এছাড়াও দর্শনীয় স্থান হিসেবে বিদেশিরাও এখানে ঘুরতে আসে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় নৌকা এবং ট্রলারেই কৃষিপণ্য বেচা বিক্রি হয়।

মো. তরিকুল ইসলাম/এনএইচআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।