দপ্তর খুলে বসে থাকেন পিয়ন, কর্মকর্তা না থাকায় হয় না কাজ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০৪:০২ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে তিন বছর ধরে চরম লোকবল সংকটে ভুগছে। এ দপ্তরে বর্তমানে একজন অফিস সহায়ক (পিয়ন) ছাড়া কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। অফিস সহায়ক এসে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দপ্তর খুলে বসে থাকেন। কোনো কর্মকর্তা না থাকার ফলে কার্যালয়টি বর্তমানে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ওই কার্যালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, একাডেমিক সুপারভাইজার, হিসাবরক্ষণ, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহায়ক ও নৈশ প্রহরী নিয়ে সাতটি পদ রয়েছে। এরমধ্যে শুধু অফিস সহায়ক ও নৈশ প্রহরী ছাড়া বাকি পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে। কার্যালয়ের সর্বশেষ দায়িত্বে থাকা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজুর রহমান ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া বদলি হয়ে যান। এরপর নতুন কাউকে সেখানে পদায়ন করা হয়নি। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু কামরুজ্জামান অন্য জেলায় চলে যাওয়ায় গত বছরের ১১ ডিসেম্বর থেকে পাশের মদন উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল বারীকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এরপর থেকে বিশেষ কাজ ছাড়া তিনি খালিয়াজুরিতে যান না। এ দপ্তরে সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদ খালি রয়েছে প্রায় তিন বছর ধরে। আর একাডেমিক সুপারভাইজার থেকে শুরু করে অন্য পদগুলো এক থেকে আড়াই বছর ধরে খালি পড়ে আছে।

আরও পড়ুন
দেড় বছর ধরে কাঁঠালিয়া মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য
অফিসকে দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা

২৯৭ দশমিক ৬৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের হাওরবেষ্টিত এ উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়নে তিনটি কলেজ, ১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুটি দাখিল ও একটি আলিম মাদরাসা রয়েছে। সবমিলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮ হাজার ২১৭ জন। তাদের পাঠদানের জন্য তিন শতাধিক শিক্ষক নিয়োজিত রয়েছেন। কিন্তু শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় কার্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সঠিকভাবে তদারকি করা যাচ্ছে না।

এক পিয়নে চলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়সহ অন্য একটি কক্ষ তালাবদ্ধ। দরজার ওপরে মাকড়সা জমে আছে। আরেকটি কক্ষে একমাত্র কর্মরত অফিস সহায়ক খাইরুল আমিন সিকদার বসে আছেন।

তিনি বলেন, আমি কোনোমতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অফিস খুলে কার্যক্রম চালু রেখেছি। গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী না থাকায় বিভিন্ন কাজে ফাইলপত্র নিয়ে আমাকে মদন ও জেলা শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। সব কাজও তো আমি বুঝি না। তবে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মদনের স্যার প্রয়োজন হলে আসেন। ঊর্ধ্বতন স্যাররা বিষয়টি জানেন।

তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে জনবল না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমের তদারকি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত কর্মকর্তার নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় জনবল পূরণের মাধ্যমে অফিসের কার্যক্রম সচল করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আবদুর রউফ স্বাধীন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। শুধু একজন পিয়ন অফিস খুলে বসে থাকেন। এতে করে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। আমরা বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও সমন্বয় মিটিংয়েও সমস্যাটি উপস্থাপন করে থাকলে কোনোরকম প্রতিকার পাচ্ছি না।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল বারী বলেন, আমাকে মদনের পাশাপাশি কেন্দুয়া ও খালিয়াজুরি উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে করে খুবই বেগ পেতে হচ্ছে। বিশেষ প্রয়োজন হলে খালিয়াজুরিতে যাওয়া হয়। অফিস সহায়ক খায়রুল আমিন ফাইলপত্র নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে থাকেন।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবির বলেন, খালিয়াজুরিতে লোকবল সংকটের কথা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। দ্রুত সংকটের সমাধান হবে বলে আশা করছি।

খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি।

এইচ এম কামাল/আরএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।