দুইবার ধর্ম বদলে ২ তরুণীকে বিয়ে, যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০৮:৪১ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

মুসলিম সেজে এক তরুণীকে প্রথমে বিয়ে করেন হিন্দু এক যুবক। আট বছর পর দুই সন্তান রেখে ফের হিন্দু হয়ে আরেক হিন্দু তরুণীকে বিয়ে করেন তিনি। এ ঘটনায় মুসলিম তরুণীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর ধর্ষণের অভিযোগ উঠে অর্জুন ধর হীরা ওরফে মো. হীরা মিয়া (৩২) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে।

এবার সেই যুবকের বিরুদ্ধে তার সাবেক স্ত্রী মুসলিম তরুণী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে ধর্ষণের মামলা করেছেন।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে গত ১৬ নভেম্বর পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেয়। গত সপ্তাহে পিবিআই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করলে ভুক্তভোগী তরুণী পক্ষপাতমূলক অভিযোগ তুলে আদালতে নারাজি দেন। এরপর আদালত মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য সিআইডি পুলিশকে দায়িত্ব দেন।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) নেত্রকোনা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মো. চান মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে।

এরআগে চলতি বছরের ৩১ জুলাই ভুক্তভোগী তরুণী বাদী হয়ে নেত্রকোনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে হীরা মিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলাটি করেন।

ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় তাকে বিয়ে করেছিলাম। আট বছর ভালোই কেটেছে। এর মধ্যে ছেলে-মেয়ে হয়েছে। বড় মেয়েটা মাদরাসায় ভর্তি করেছি। ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি আবার এক হিন্দু মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে সে। তার পরিবারের লোকজনের কাছে বিচার দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এভাবে ঝগড়া বিবাদে চলছিলো। পরে চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল এফিডেভিট করে আমাকে ডিভোর্স দেয়। এসময় ছেলেমেয়ের খরচ বহন করবে বলেও জানায়। পরে ১৮ জুলাই রাতে বাসায় এসে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয় পুলিশ।

ভুক্তভোগী আরও বলেন, আদালত পিবিআইকে মামলার তদন্ত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা অভিযুক্তের প্রতি প্রভাবিত হয়ে আদালতে মনগড়া প্রতিবেদন জমা দেয়। আসামির একাধিক সিমকার্ড রয়েছে। তিনি একটি মাত্র সিমের তথ্য যাচাই করেছেন। অসুস্থতার কারণে ডাক্তারি পরীক্ষা করতে সময় চাই, কিন্তু তিনি প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য লিখে দিয়েছেন। এমনকি আমার মা ও ভাইয়ের দেওয়া জবানবন্দি তিনি প্রতিবেদনে উল্টো লিখে দিয়েছেন। তাই নারাজি দেওয়া হয়েছে। এখন আদালত সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। আশা করছি ন্যায় বিচার পাবো।

অভিযুক্ত অর্জুন ধর হীরা ওরফে মো. হীরা মিয়া জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার শালদীঘা এলাকার মৃত জয়কৃষ্ণ ধর ওরফে জয়দেন ধরের ছেলে। জেলার মোহনগঞ্জ পৌরশহরের দৌলতপুরে তাদের বাসা রয়েছে।

আর ভুক্তভোগী মোহনগঞ্জ পৌরশহরের দৌলতপুর হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা। অভিযুক্ত অর্জুন ধর হীরা ওরফে মো. হীরা মিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলার অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোহনগঞ্জ পৌরশহরের দৌলতপুরে বসবাসকালে একই এলাকার এক মুসলিম তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন অর্জুন ধর হীরা। পরে ২০১৪ সালে আদালতের মাধ্যমে এফিডেভিটের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নিজের নাম মো. হিরা মিয়া রাখেন। এরপর ওই মুসলিম তরুণীকে বিয়ে করেন তিনি। ২০১৭ সালে তাদের একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। পরে ২০২২ সালের শুরুতে আরও একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। তবে ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি আবার ধর্ম বদল করে অপর একটি হিন্দু তরুণীকে বিয়ে করেন হীরা। এতে ছেলে-মেয়ের জন্ম পরিচয় নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ভুক্তভোগী তরুণী।

এইচ এম কামাল/এনএইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।