বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে ভবানীপুর জমিদার বাড়ি


প্রকাশিত: ০৬:৫৩ এএম, ০৫ অক্টোবর ২০১৬

প্রকৃতির অনিন্দ্য নিকেতন ভবানীপুর জমিদার বাড়ি অপরূপ সৌন্দর্যের নয়নাভিরাম। তারই রূপশোভা বিস্তার করে কালের নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে উজ্জ্বল ভাস্কর্যটি।

কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে এটি। কিন্তু সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে এর স্মৃতিচিহ্ন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এই ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন, বাংলার গৌরবোজ্জ্বল জমিদার বাড়িটি সংস্কারে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছে সচেতন মহল।

ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী মনোরম পরিবেশের ভবানীপুর জমিদার বাড়িটি এলাকাবাসীর কাছে ভবানীপুর রাজবাড়ি নামে পরিচিত। নওগাঁ শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ভবানীপুর বাজার সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত এটি।

জানা যায়, জমিদার গির্জা শঙ্কর চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার ছেলে প্রিয়শঙ্কর চৌধুরী জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করে জমিদারিত্ব পরিচালনা করেন। জমিদার প্রিয়শঙ্কর চৌধুরীর স্ত্রীর নাম ছিল লাবণ্য প্রভা চৌধুরানী। তাদের ছিল ৬ ছেলে ও ৬ মেয়ে। জমিদার প্রিয়শঙ্কর চৌধুরীর আমলে জমিদারির ব্যাপক বিস্তার ঘটে। তিনি ভবানীপুর জমিদার বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি, নাট্যশালা নির্মাণ ও প্রজা সাধারণের সুপেয় পানীয় জলের কষ্ট দূরীকরণের জন্য রাজপ্রাসাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অনেক পুকুর খনন করেন।

১৯১০ সালে জমিদার পরিবারের উদ্যোগে একটি স্কুলও স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে স্কুলটির নাম জমিদার প্রিয়শঙ্কর চৌধুরীর বাবা গির্জাশঙ্কর চৌধুরীর নামকরণে ভবানীপুর জিএস উচ্চ বিদ্যালয় নামকরণ করা হয়। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর ১৯৬৮ সালের দিকে জমিদার প্রিয়শঙ্কর চৌধুরী সপরিবারে কলকাতা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে জমিদারের চতুর্থ ছেলে প্রতাপশঙ্কর চৌধুরী কলকাতা যাওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত পোণ করেন। পরে জমিদার প্রিয়শঙ্কর চৌধুরী ছেলেকে রেখেই কলকাতায় পাড়ি জমান।

পরবর্তীতে প্রতাপশঙ্কর চৌধুরী তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে হাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে ২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী মৃত্যু বরণ করেন। বর্তমানে তার ছেলে অভিজিৎ চৌধুরী এই জমিদার বাড়ির এক প্রসাদের জরাজীর্ণ ভবনে বসবাস করছেন। কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেবল বিশাল অট্টালিকা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রাসাদটি রোমান স্টাইলে নির্মিত। প্রাসাদের স্তম্ভগুলো জমিদারদের রুচির পরিচয় বহন করে। জমিদার বাড়িতে ৫টি আঙিনা এবং ৪৫টি ঘর ছিল। ঘরগুলোর মধ্যে অধিকাংশ ভেঙে গেছে। প্রাসাদে ছিল জমিদার বাড়ির তিনটি নিজস্ব দুর্গা, গুপিনাথ ও বাসন্তী মন্দির। যেখানে সারা বছরের জন্য একজন স্থায়ী পুরোহিত নিয়োজিত ছিলেন। প্রতি সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালানো হতো। যা কালের বির্বতনে আজ জনমানবহীন শ্বশ্বানে পরিণত হয়েছে।

জমিদার বাড়ির সামনে সান বাধানো বড় একটি পুকুর যার পাশে ছিল এলাকায় প্রচলিত ‘গান বাড়ি’ নামক ভবন।  যেখানে গান-বাজনাসহ বিভিন্ন মনোরঞ্জন হতো। গান বাড়ির সন্নিকটে ছিল একটি বৈঠকখানা, যেখানে প্রতিনিয়ত চলতো বিচার-সালিশ। বৈঠকখানার সামনে ছিল বড় ফুলের বাগান।

Naogaon

বাগান বাড়ির চারপাশে রকমারি ফুলের সমারোহ ও সুশোভন বাহারী পাতাবাহার দ্বারা পরিবেষ্টিত ফুলের বাগান। যেন নিবেদিত পুষ্পার্ঘ্য। সেখানে আজ নির্মিত হয়েছে প্রতাপশঙ্কর চৌধুরীর নামকরণে ভবানীপুর পিএস ল্যাবরেটরি কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুল। বৈঠকখানার পশ্চিমে কিছু দূরে রয়েছে একটা ছোট পুকুর, যা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

স্থানীয় শাহাগোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বাবু জানান, এ ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়িটি সংস্কার করা হলে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় হবে। পাশাপাশি এলাকার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। জমিদার বাড়ির ঐতিহ্যবাহী স্মৃতি রক্ষার্থে শিগগিরই সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

প্রতাপশঙ্কর চৌধুরীর ছেলে অভিজিত চৌধুরী জানান, জমিদার প্রথা বিলুপ্ত করার পর শত্রুর সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ড হয়। এ সুযোগে প্রাসাদের মূল্যবান দরজা, জানালা, শাল কাঠের তীর লুট করে নিয়ে যাওয়ার পর এখন দালানের ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে এলাকার অনেকে। দীর্ঘদিন থেকে এ অবস্থার কারণে ভবনটি সংস্কারও করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমান সরকারের দেয়া সুযোগে গত ডিসেম্বরে তাদের নামে ভবনটি রেকর্ড হয়েছে।

তিনি আরো জানান, যেটুকু পারা যায় ধীরে ধীরে সংস্কার করা হচ্ছে। আগামীতেও সংস্কারের কাজ অব্যাহত থাকবে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।