যশোরে আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে সাজ সাজ রব
দীর্ঘ এক যুগ পর যশোরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির এই সম্মেলনকে ঘিরে গোটা জেলায় সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। গোটা শহর এখন ব্যানার, তোরণ, ফেস্টুনের নগরীতে পরিণত হয়েছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অন্তত দুই শতাধিক তোরণ তৈরি করা হয়েছে। পদপ্রত্যাশী নেতারা দলীয় সভানেত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি সম্বলিত ডিজিটাল প্যানা দিয়ে তৈরি করেছেন বিশাল বিশাল তোরণ। সেই সাথে ভবন জুড়ে বিশাল বিশাল আকৃতির ব্যানারে সম্মেলন সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে সম্মেলনকে আওয়ামী লীগের একাধিক গ্রুপের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই চলছে। এ কারণে সম্মেলন ঘিরে সহিংসতারও আশঙ্কা রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সর্বশেষ ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে আলী রেজা রাজু সভাপতি ও শাহীন চাকলাদার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ১৬টি পদ খালি রেখে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট যশোর জেলা কমিটি ঘোষণা করেন। কিন্তু বিগত ১২ বছরে ওই ১৬টি পদ পূরণ হয়নি। ৫৫ সদস্যের কমিটির ৪ জন নেতা মারা গেছেন, ২ জন পদত্যাগ করেন এবং ১ জনকে বহিষ্কার করা হয়।
গত এক যুগ ধরে আলী রেজা রাজু ও শাহীন চাকলাদারের নেতৃত্বাধীন কমিটি রাজপথের আন্দোলনে সফল হয়েছেন বলে তাদের সমর্থকদের দাবি। সরকারি বিরোধী কিংবা অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সব সময় তারা রাজপথে থেকেছেন। জেলার রাজপথ আওয়ামী লীগের দখলে থাকায় বিশ দলীয় জোট রাজপথের পথের আন্দোলন থেকে সব সময় ঘরমুখো ছিল। তবে রাজপথে সরব থাকলেও গৃহবিবাদও ছিল আওয়ামী লীগের মধ্যে। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় দলের মধ্যে একাধিক গ্রুপের সৃষ্টি হয়। গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে রাজপথের অনেক নেতাকে প্রাণ হারাতে হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, একযুগ পর ১২ ফেব্রুয়ারি শহরের ঈদগাহ ময়দানে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনকে ঘিরে মূলত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়েই লড়াই চলছে। সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি আলী রেজা রাজু, সহ-সভাপতি অ্যাড.পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, এসএম কামরুজ্জামান চুন্নু, শহিদুল ইসলাম মিলন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামান পিকুল, জেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর নাম জোড়েসোরে শোনা যাচ্ছে। সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদও শেষ পর্যন্ত সভাপতি প্রার্থী হতে পারেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
১২ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি ও জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, বাহাউদ্দিন নাসিমসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ভবনের বিশাল তোরণ ও ব্যানার সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, সভাপতি আলী রেজা রাজু ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের দখলে রয়েছে। তাদের নামে বিশাল বিশাল তোরণ ও ব্যানারে কেন্দ্রীয় নেতাদের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে তোরণের নামকরণ করা হয়েছে ১৫ আগস্টে শহীদদের নামে ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতাদের নামে। তোরণ, ব্যানারের নগীরতে পরিণত হয়েছে যশোর। সাজ সাজ রব পড়ে গেছে গোটা জেলায়। তবে একইসঙ্গে সম্মেলনকে ঘিরে নাশকতা ও সহিংসতার আশঙ্কাও রয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মীর জহুরুল ইসলাম এক বিজ্ঞপ্তিতে ১২ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনে নাশকতার আশংকা প্রকাশ করে দলীয় নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানিয়েছেন, বিএনপি জামায়াত জোট আন্দোলনের নামে দেশব্যাপি নৈরাজ্য নাশকতা জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে। এসময় অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীর ভিড়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীরা কাউন্সিল অধিবেশনের স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিঘ্ন ঘটানোর অপচেষ্টা করবে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে। আবার একইসাথে গ্রুপিং থাকায় নেতৃত্ব নিয়ে সহিংসতার আশঙ্কাও রয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে।
এমএএস/পিআর