জয়পুরহাটে হাঁস পালনে স্বাবলম্বী বিকাশ
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আদিবাসী পল্লী গদাইপুর গ্রামের এক আত্মপ্রত্যয়ী আদিবাসী শিক্ষিত যুবক বিকাশ চন্দ্র প্রাকৃতিকভাবে পাতি হাঁস প্রতিপালন করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। ২০০৯ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (বগুড়া আজিজুল হক কলেজ) থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রি লাভের পর চাকরির পেছনে না ছুটে হাঁস প্রতিপালনে মনোযোগ দেন। প্রথম দফায় সাফল্য লাভ করার পর বিকাশকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
বিকাশ অনেকদিন বেকার থাকার পর ২০১৫ সালে বাবার কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন পাতি হাঁসের চাষ। শুরুতেই বাজিমাৎ, আশাতীত লাভ হওয়ায় দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে তিনি শুরু করেন পুকুরে মাছ আর পুকুর পাড়ে হাঁস। এভাবেই সাফল্যের সিঁড়ি খুঁজে পান যুবকদের মডেল হাঁস পালনকারী এই বিকাশ। শুধু যুবকরাই নন, বিকাশের এমন ঈর্ষনীয় সাফল্যের জন্য এই হাঁস-খামার দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন নানা বয়সী বেকার মানুষরা এবং উৎসাহিত হয়ে ফিরে যাচ্ছেন বিকাশের মত খামার করার প্রত্যয় নিয়ে।
জয়পুরহাটের যেখানেই এখন বেকারদের আত্মকর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় সেখানেই বিকাশকে হাজির করা হয় এবং তার কল্প-কথা শুনানো হয়, জয়পুরহাটের বেকারদের জন্য বিকাশ এখন যেন মডেল।
৫০ হাজার টাকায় শুরু করা ৫০০ হাঁসের খামার থেকে পরিশ্রম আর একাগ্রতাই বিকাশ আজ ৮ হাজার হাঁসের খামারে উন্নতি করেছে। যার আনুমানিক মূল্য ১৫ লাখ টাকা, খরচ বাদে এবার তার বর্তমানে খামারে থাকা হাঁস থেকে আয় হবে ১২ লাখ টাকা।
আদিবাসী পল্লীর আদিবাসী জতীন্দ্রনাথ সরকার ও বাসন্তি রানীর ছেলে বিকাশ।বিকাশের স্ত্রী ও তিন বোন সবাই শিক্ষকতা পেশায় জড়িত থাকলেও বিকাশ চাকরি না করে নিজে কিছু করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে হাঁস পালন করে এখন সে নিজেই কর্মসংস্থানের কারিগর ।
বিকাশের হাঁস খামারে পরিচর্যাকারী শ্রমিক পরেশ চন্দ্র ও বিনয় দাশ জানান, বিকাশের ৮ হাজার হাঁসের খামার দেখভাল আমরা করি, এতে আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে, ফলে আমাদের আর কাজের জন্য চিন্তা করতে হয় না।
হাঁসের খামার দেখতে আসা পাঁচবিবি উপজেলার বেড়াখাই গ্রামের রতন কুমার ও দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলার দেলোয়ার হোসেন জানান, বিকাশের হাঁসের খামার দেখতে আদিবাসী পল্লীতে এসেছি। খামার দেখে আমরা খুবই অভিভূত এবং নিজেরাও খামার করার চিন্তা-ভাবনা করছি।
বিকাশের এলাকার গ্রামবাসী বিরেন চন্দ্র ও বজেন চন্দ্র জানান, প্রায় প্রত্যেক দিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষরা খামার দেখতে আসে এবং বিকাশের সাফল্যের কথা শুনে ফিরে যায়।
বিকাশের বাবা জতীন্দ্রণাথ সরকার ও মা বাসন্তি রানী জানান, পড়াশোনা শেষ করে আমাদের ছেলে হাঁস পালন করবে এ কথা শোনার পর প্রথম প্রথম খুব গালাগালি করতাম। কিন্ত তার সাফল্য দেখে আমরাও এখন তাকে সহযোগিতা করি।
বিকাশ বলেন, তার সাফল্যের পেছনে নিজের উদ্যম আর পরিশ্রমসহ পরিবারের উৎসাহ এবং সংশ্লিষ্ট প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহযোগিতা রয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাঃ ইসমাইল হক জানান, মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে মানুষ সফল হতে পারে তার উজ্জল দৃষ্টান্ত বিকাশ। বিকাশের মত আরও কোনো যুবক যদি এরকমভাবে এগিয়ে আসে তাদেরকেও আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
রাশেদুজ্জামান/আরএআর/এমএস