ডাকাত আতঙ্কে ঘুমহীন ৫ গ্রামের মানুষ


প্রকাশিত: ১২:১২ পিএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ডাকাতদের পাহারায় ঘুমহীন রাত পার করছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের পুবেরগাঁও, গুতুলিয়া, চারিতালুক, করটিয়া, দিঘুলিয়াসহ ৫ গ্রামের মানুষ।

এসব এলাকার বেশিরভাগ মানুষ হতদরিদ্র, তাদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে কৃষিকাজ। কাজেই কিশোর, যুবক থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ সবাইকে সারাদিন মাঠে কাজ করতে হয়। মাঠের কাজ শেষে যখন তাদের বিশ্রাম নেয়ার কথা তখন নিজেদের রক্ষার জন্য রাত জেগে ডাকাতদের পাহারা দিতে হয়।

রাতভর পাহারার পর সকালে আবার তাদের কাজ করতে মাঠে যেতে হয়। এভাবে বিশ্রামহীন দিন পার করছে ভোলাবসহ আশপাশের এলাকাগুলোর মানুষ। তবে পাহারা দিয়েও ডাকাত দলকে থামানো যাচ্ছে না।

সুযোগ বুঝে লুটে নিচ্ছে গবাদি পশু থেকে শুরু করে স্বর্ণালংকার। প্রতিবাদ করলে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়। পাশাপাশি ডাকাতদের সঙ্গে গ্রামবাসীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে প্রতিদিন।

গত কয়েকদিনে এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতররা নিরীহদের নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও খামার থেকে গরু লুট করে নিয়ে গেছে। রাতে এ সকল এলাকাগুলো দিয়ে চলাচল করলে মানুষকে ছিনতাইয়ের শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক দিনে ডাকাতের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশকয়েকটি বাসা বাড়ি থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ গরু চুরি করে নিয়ে গেছে ডাকাত দল। গভীর রাতে ডাকাত দল প্রতিদিনই হানা দিচ্ছে কোনো না কোনো বাড়িতে।

ক্ষতিগ্রস্ত খামারি, কৃষক ও এলাকাবাসী জানান, ৩ মাস আগে পুবেরগাঁও এলাকার ইকবাল মিয়ার বাড়ির দরজা ভেঙে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকাসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যায়।

rupgonj

গত সপ্তাহে একই এলাকার শুক্কুরের বাড়ি থেকে তাকে বেঁধে দুইটি গরু ডাকাতি করে নিয়ে যায়। কয়েকদিন আগে শহিদুল্লাহর বাড়ি থেকে তাকে মারধর করে ৫ ভরি স্বর্ণসহ নগদ ১ লাখ টাকা টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

এছাড়া ফারুক নামে এক রিকশাচালকের কাছ থেকে নগদ টাকাসহ মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ওই রাতেই ডাকাত দল পুবেরগাঁও এলাকার আমজাদ মিয়ার বাড়ি থেকে তাকে মারধর করে নগদ টাকাসহ ১ লাখ টাকার মামলাল ডাকাতি করে নিয়ে যায়।

পাশাপাশি স্বর্ণখালী এলাকার সুলতানের দোকান থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকার মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যায় ডাকাত দল। গুতুলিয়া এলাকার গুলজারের বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে মারধর করে গাছের সঙ্গে বেঁধে খামার থেকে ৩টি গাভী ডাকাতি করে নিয়ে যায় ডাকাত দল।

এছাড়া, জয়নালের বাড়ি থেকে ৬টি গরু ডাকাতি করে নিয়ে যায় ডাকাতের দল। এসব কর্মকাণ্ডে এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই রাত জেগেই পাহারা দিতে হচ্ছে খামারিদের। এছাড়া চারিতালুক থেকে স্বর্ণখালী যাওয়া রাস্তাটি জনশূন্য হওয়ার কারণে প্রতিদিনই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা।

এক বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, পুবেরগাও, চারিতালুক, গুতুলিয়া, করাতিয়া এসকল এলাকাগুলোতে বেশ কয়েকটি বিল রয়েছে। যেখানে রাত হলে জমে জুয়া ও মাদকের আসর। এসব বিলে প্রতিদিন প্রায় লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা হয়। এসব জুয়াড়িরা ডাকাতির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বেশ কয়েকবার এ ব্যাপারে পুলিশকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভোলাব তদন্ত ফাঁড়ির ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) শাহাদাত এসব মাদক ও জুয়ার আসর থেকে প্রতিমাসে মোটা অংকের মাসোয়ারা পায়। তাকে মাসোয়ারা দিলে এলাকায় যা খুশি করা যায়। ভোলাব ইউনিয়নের প্রতিটি মাদক ও জুয়ার স্পট থেকে প্রতিমাসে ইন্সপেক্টর শাহাদাত মাসোয়ারা পায় বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

এ ব্যাপারে ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) শাহদাত বলেন, জুয়া ও মাদক স্পটের কথা শুনেছি। স্পটগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, মাদক ও জুয়ার ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই। যদি আমাদের কেউ এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে এবং তদন্ত করে তা প্রমাণ মিলে তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মীর আব্দুল আলীম/এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।