১৮ হাজার তামাক চুল্লিতে জ্বলছে কক্সবাজারের বনাঞ্চল


প্রকাশিত: ০৭:৪৫ এএম, ১১ এপ্রিল ২০১৫

কক্সবাজার ও বান্দরবানের আট উপজেলায় চলতি বছর প্রায় ৪০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। আর এই তামাক পাতা শুকাতে জ্বালানি হিসেবে প্রচুর কাঠ প্রয়োজন হয়। এই কাঠের সরবরাহ দুই জেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সামাজিক বনায়ন থেকে আসছে। স্থানীয় তামাক চাষী ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার সদর, রাম(গর্জনিয়া-ঈদগড়), চকরিয়া, পেকুয়া, উখিয়া ও বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি(বাইশারী), লামা ও আলীকদম উপজেলা মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার একর জমিতে তামাক আবাদ হয়েছে।

উৎপাদিত তামাকের প্রায় ৭০ শতাংশ তোলা হয়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল,গর্জনিয়া, রাজারকুল, কচ্ছপিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আদর্শগ্রাম, বাইশারী, ঘুনধুমসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে তৈরি চুল্লিতে তামাকপাতা শুকানো হচ্ছে। অধিকাংশ চুল্লি বাঁকখালী নদীর দুই তীরে স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বনের কাঠ।

রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ফাক্রিকাটা গ্রামের আব্দুল হামিদ, তামাক চাষী মমতাজ ও নাইক্ষ্যংছড়ির আদর্শ গ্রামের জয়নুল আবেদীন জানান, তামাকপাতা শুকাতে ১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থের ছোট ও উঁচু একটি মাটির ঘরে চুল্লি বানাতে হয়। একটি চুল্লি তৈরিতে আটটি আকাশমনি গাছ লাগে। অনেকেই সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে ওই গাছ কেটে এনেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক হেক্টর জমির তামাকপাতা শুকাতে একটি চুল্লির প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে দুই জেলায় এবার প্রায় ১৮ হাজার চুল্লির প্রয়োজন হবে। একটি চুল্লি তৈরিতে আটটি আকাশমনি গাছ লাগলে এবার প্রায় ১ লাখ ৪৪ হাজার গাছ কাটা পড়েছে। এছাড়া এক হেক্টর জমিতে উৎপাদিত তামাকপাতা শুকাতে গড়ে ৫০০ মণ কাঠ প্রয়োজন। সেই হিসেবে সব চুল্লি মিলিয়ে এবার ৯০ লাখ মণ কাঠ পোড়ানো হবে।

স্থানীয়রা জানান, গাছ ও কাঠের প্রধানাংশের সরবরাহ এসেছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সামাজিক বনায়ন থেকে। কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানান, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর তীরে এবার ৩০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এসব জমিতে আগে ধান ও রবিশস্য আবাদ হতো।  এজন্য বন বিভাগের উদাসীনতার জন্যই বনের কাঠ ধ্বংস হচ্ছে।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) শাহ-ই-আলম জানান, কাঠ পুড়িয়েই চুল্লিতে তামাক শুকানো হচ্ছে। বনাঞ্চল রক্ষায় বন প্রহরীরা রাত-দিন কাজ করছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আশীষ কুমার জানান, তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার জন্য নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তারপরও তামাক চাষ বন্ধ করা যাচ্ছে না।

পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম জানান, তামাক চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ায় এ অঞ্চলে জনস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। বায়ুদূষণও বেড়েছে। চুল্লি মালিকদের তালিকা তৈরির কাজ করা হচ্ছে। দুই জেলায় আনুমানিক ১৮ হাজার চুল্লি তৈরি করা হয়েছে।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন মো. রুকন উদ্দিন জানান, তামাক চাষের কারণে ওই এলাকায় মানুষের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাসের নানা রোগ দেখা দিতে পারে।

এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।