কবিরাজের কথায় ছেলেকে বেঁধে রেখেছে বাবা-মা


প্রকাশিত: ০১:২২ পিএম, ২১ মার্চ ২০১৭

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার উত্তর নলডাঙ্গা গ্রামের ভ্যানচালক দুদু মণ্ডল অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে না পারায় মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে আহসান হাবিবকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন।

ঝড়-বৃষ্টি-রোদ সবই তার উপর দিয়ে বয়ে যায় গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা অবস্থায়। রাতেও সে ছোট্ট একটি মাটির ঘরে বাঁধা থাকে শিকল দিয়ে।

সুস্থ সবল ছেলে হঠাৎ করে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ায় কবিরাজের মাধ্যমে ঝাঁড় ফুঁ দিয়ে তাকে সুস্থ করার উদ্যোগ নেন বাবা। এতেও কোনো কাজ না হওয়ায় চিকিৎসার অভাবে প্রায় ১০ বছর ধরে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন আদরের সন্তান আহসান হাবিবকে।

Habib

দুদু মণ্ডল ও কহিনুর বেগমের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে ফারুক ঢাকায় গার্মেন্টে চাকরি করেন। মেজ আহসান হাবিব। বড় মেয়ে আয়েশা ছিদ্দিকার বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট মেয়ে রাবেয়া খাতুন জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়ে।

আহসান হাবিবের জন্ম ১৯৯২ সালে। জন্মের পর দেরিতে হাঁটা এবং কথা বলতে পারলেও ১৪-১৫ বছর পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে হারিয়ে যায় সে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে পাওয়া যায় হিচমী বাজারে। রাতে একটি বাড়িতে থাকার জন্য গেলে বাড়ির লোকজন চোর মনে করে গণপিটুনি দেয়। পরদিন পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে কবিরাজ দেখালে তিনি হাবিবকে মানসিক রোগী বলেন। এরপর থেকেই তাকে বেঁধে রাখা হয়।

সেই থেকে পালিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য পরিবারের লোকজন তাকে শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। দীর্ঘদিন গাছের সঙ্গে আটকে থাকতে থাকতে মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যায় হাবিব। কোনো কোনো সময় পরনে তার কাপড়ও থাকে না। এতে করে ওই পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া অনেকে হাবিবকে দেখে মাথা ঘুরিয়ে নেয়।

হাবিবের মা কহিনুর বেগম জাগো নিউজকে জানান, সংসারে অভাবের কারণে সন্তানের চিকিৎসা করতে পারিনি। সরকার থেকে যে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয় তা খুবই সামান্য। জয়পুরহাটে মানসিক রোগীর চিকিৎসা হয় না। এখন চিকিৎসা করাতে হলে জয়পুরহাটের বাইরে নিয়ে যেতে হবে, যা আমাদের পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়।

Habib

এলাকাবাসী আবুল হোসেন ও মাহমুদুল হাসান জানান, হাবিবের বাবা অভাবের কারণে ঢাকায় রিকশা চালান। মা অন্যের বাড়িতে ঝি এর কাজ করে সংসার চালান, ছোট মেয়েকে লেখাপড়া করায়, বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে।

উত্তর নলডাঙ্গা গ্রামের রূকন্দিপুর ইউনিয়নের সদস্য ফরিদ হায়দার বলেন, সরকারিভাবে হাবিবের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে সে।

এ ব্যাপারে জয়পুরহাট সমাজসেবা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক নুর মোহাম্মদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে মানসিক প্রতিবন্ধী হাবিবকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হয় এবং সরকার থেকে আরও যদি কোনো সাহায্য সহযোগিতা আসে তাহলে অবশ্যই তাকে আগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়া হবে।

এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।